১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪৪

রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরী -ওআইসি

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে তুরস্ক তৈরি আছে উল্লেখ করে তুর্কি রাষ্ট্রপতি এবং ওআইসি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় গত শনিবার ওআইসির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এসব কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় আঙ্কারা। ইতার-তাস।
ওআইসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করছে। তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি এই অন্যায় কর্মকা- বন্ধ করতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
এরদোগান আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জীবন নিয়ে নিষ্ঠুর খেলা বন্ধ করতে আমরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রসঙ্গে ওসাইসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জরুরি ত্রাণ সহযোগিতা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য তুরস্কের ত্রাণ পাঠানোর আগ্রহের কথা আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে রুহানি-এরদোগান বৈঠক
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির রাষ্ট্রীয় মদদে চলমান দমন অভিযান নিয়ে কর্তব্য নির্ধারণে বৈঠক করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দমন অভিযান বন্ধে চাপ সৃষ্টি এবং নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান তারা। তেহরানভিত্তিক প্রেস টিভি খবরটি নিশ্চিত করেছে।
শনিবার রাতে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় দুই দেশের শীর্ষ নেতার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি মিয়ানমারের মুসলমানদের দুর্বিসহ অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমারে একটি মহা বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মুসলিম দেশগুলোর আশু কর্তব্য হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন অভিযান বন্ধে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। ইরানের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মানবিক ত্রাণ পাঠানোর কথা উল্লেখ করে হাসান রুহানি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মুসলিম দেশগুলো বিশেষ করে ইরান ও তুরস্কের মধ্যে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইরানের প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করে বলেন, আস্তানায় মুসলিম শীর্ষ নেতাদের মিয়ানমার বিষয়ক বৈঠক রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন অভিযান পরিচালনাকারীদের প্রতি সুস্পষ্ট ও শক্ত বার্তা পাঠাচ্ছে।বৈঠকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও আশা প্রকাশ করে বলেন, আস্তানা সম্মেলন থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হবে যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করে।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিবাদে মিয়ানমারের জাতীয় ফুটবল দলের কোচের পদত্যাগ
মিয়ানমারের জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইরানি কোচ রেজা কুর্দি। তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি তাদের শুক্রবারের এক খবরে রেজার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে।প্রেস টিভির খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেজা কুর্দি মিয়ানমারের জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। রোহিঙ্গাদের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।গত দুই সপ্তাহে নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে এক হাজার জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে নতুন করে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।ইরানের জাতীয়অলিম্পিক কমিটির সভাপতি কিয়ামমার হাশেমী রেজার পদত্যাগের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।

রোহিঙ্গারা ইসরাইলী ষড়যন্ত্রের শিকার: ইরান
আবারও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। এই মুসলিম জনগোষ্ঠী ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সংঘবদ্ধ অপরাধযজ্ঞের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিনিয়র উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর বেলায়েতি। তার বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে তেহরানভিত্তিক পার্সটুডে এই খবর জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আলী আকবর বেলায়েতি বলেন, “ইহুদিবাদী ইসরায়েল নিজের শিশু হত্যাকারী পাশবিক ভূমিকা বিশ্ববাসীর মন থেকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ও ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে।” তিনি বলেন, ইহুদিবাদী চক্র প্রমাণ করতে চায়, শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুরাই সহিংসতার শিকার হচ্ছে না বরং বিশ্বের আরো অনেক স্থানে অন্যান্য জনগোষ্ঠীও একই ধরনের সহিংসতায় আক্রান্ত হচ্ছে।
আলী আকবর বেলায়েতি সতর্ক করেন, আন্তর্জাতিক ইহুদিবাদী চক্র মিয়ানমারে গণহত্যা চালিয়েই নিজের তৎপরতা বন্ধ করবে না বরং এরপর মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র দাঙ্গা বাধাতে তৎপর হয়েউঠবে।জাতিসংঘ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ওই অশুভ ও সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই উপদেষ্টা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরতা বন্ধের জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিকসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই বর্বরতার হোতাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
মিয়ানমারে পাকিস্তানী সাংবাদিক আটক

রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতার নিউজ সংগ্রহ করতে যেয়ে মিয়ানমারে আটক হয়েছেন পাকিস্তানি সাংবাদিক আমের লিয়াকত। মিয়ানমারের ইয়াংগু বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে আটক করে।ডননিউজ উর্দু জানায়, দেশটির বেসরকারি টেলিভিশন ‘বোল নিউজ’ এর প্রতিনিধি আমের লিয়াকতকে মিয়ানমার পাঠানো হয়েছিল। ইয়াঙ্গু বিমানবন্দরে ওই সাংবাদিককে মিয়ানমার যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। তাদের সত্যটা বলেও ছিলেন। টুইটারে এ কথা জানান আমের লিয়াকত। তারপর থেকে তার সঙ্গে আর টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করতে পারেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে তাকে আটক করা হয়েছে। টুইটারের এক ভিডিও বার্তায় আমের লিয়াকত জানিয়েছিলেন, মিয়ানমার পৌঁছে গেছি। কিন্তু ইমিগ্রেশনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি আছি। আপনাদের নিকট দোয়াপ্রার্থী।সূত্র : ডননিউজ উর্দু।
সিডর-আইলার বিপর্যয় দেখেছি, রোহিঙ্গাদের মতো এমন পরিস্থিতি দেখিনি : একজন ফটো সাংবাদিক
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীর জন্য এখন আশ্রয়, খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। এর মধ্যেই প্রতিদিনই আরো হাজার হাজার লোক আসছে – যাদের মধ্যে এক বড় অংশ নারী ও শিশু। এদিকে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর নিষিদ্ধ এ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন পেতে রেখেছে বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে।গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার এবং বান্দরবনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশ এবং বাংলাদেশে ঢোকার পরের ঘটনা কাভার করতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন বাংলাদেশের বহু সাংবাদিক। তাদেরেই একজন ফটো সাংবাদিক সৈয়দ জাকির হোসেন।তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটা একটা প্রচ- মানবিক বিপর্যয় যাকে বলে আর কি। তাদের যে অসহায়ত্ব সেটা এতো স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় যে কষ্ট লাগে’।তিনি বলেন রোহিঙ্গাদের বিষয়টি একটু আলাদা কারণ তারা খুবই গরীব কিন্তু তারা কিছু বুঝিয়ে বলতে পারে না।জাকির হোসেন বলেন, ‘হাজারে হাজারে মানুষ এভাবে আসতে আর দেখিনি। প্রায় ৩০টির মতো পয়েন্ট যার অনেকগুলোই আমি ঘুরেছি’। শরণার্থী হিসেবে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই তারা বাকরুদ্ধ। তারা ওভাবে বলতেও পারেনা। বাচ্চাকে ফেলে রেখে চলে এসেছে মা, সেই মা কিভাবে তার মনোভাব প্রকাশ করবে’।আবার এক মহিলার বয়স আশির ওপরে। চলতে পারে না। তারা ছেলেরা দ্ইু ভাই মিলে বাঁশ দিয়ে কাপড় বেধে মাকে বহন করে নিয়ে এসেছে দীর্ঘ পথ। গলা পর্যন্ত পানি ডিঙ্গিয়ে নারী শিশু এমনকি গর্ভবতী নারীরা নদী পার হয়ে আসছে। কোন নৌকা পর্যন্ত নেই সেখানে।কিন্তু ফটো সাংবাদিকরা ঠিক কতটা তুলে আনতে পারছে এসব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটা আসলেই কঠিন। ‘যে কষ্ট, আবেগ, সেটি বোঝানো কঠিন। প্রতিটি মানুষের চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে তারা কতটা ভীত সন্ত্রস্ত। বাচ্চাগুলোর চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় যে আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে। আমরা সিডর আইলার মতো দুর্যোগে মানবিক বিপর্যয় দেখেছি কিন্তু রোহিঙ্গাদের মতো এমন পরিস্থিতি দেখিনি’।

http://www.dailysangram.com/post/299260