১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:১৬

সৌদিতে চরম অবহেলার শিকার সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীরা

দিনাজপুর সদরের রেজাউল ইসলাম তার মা ও দাদীকে নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যান। সৌদি আরবে যাওয়ার সময় তেমন কোনো সমস্যায় না পড়লেও সেখানে গিয়ে চরম অবহেলা ও হয়রানির শিকার হন। গতকাল হজ শেষে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, হজের কার্যক্রম মূলত পাঁচ দিন। অথচ ওই পাঁচ দিনে চরম অবহেলার শিকার হতে হয়েছে আমাদের। রেজাউল ইসলাম জানান, মিনায় ৭ নম্বর মোয়াল্লেমে ছিলেন তারা। যেখানে বাংলাদেশের মোট ৪৯ জন ছিলেন। এখানে খুবই নি¤œমানের তাঁবুতে তাদের থাকতে দেয়া হয়। তীব্র গরমের মধ্যেও এসি ছিল না। অথচ পাশেই পাকিস্তানের হাজীরা এসিসহ সব ধরনের সুবিধাসংবলিত তাঁবুতে ছিলেন। পাকিস্তান-ভারতের হাজীদের পোলাও, গোশতসহ উন্নত মানের খাবার দেয়া হলেও আমাদের দেয়া হয় পাতলা ডাল আর তরকারির ঝোল। রান্না করা সবজি দিলেও তা ছিল কাঁচা। এসব খাবার পাতে নেয়া যায় না। আমার মা-দাদী খেতেই পারেননি। হজের পাঁচ দিন আমাদের চিঁড়া আর বিস্কুট খেয়ে কাটাতে হয়েছে।
গাইবান্ধার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে মানের বাড়ি ভাড়া করার কথা ছিল, সে মানের বাড়িতে রাখতে পারেনি সরকার। এ ছাড়া যাতায়াতের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি তারা। ফলে হেঁটেই অনেক পথ যেতে হয়েছে। তবে এ জন্য সরকার তাকে পাঁচ শ’ রিয়াল ফেরত দিয়েছে বলে তিনি জানান।
গতকাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, হজে হয়রানির শিকার হাজীদের অভিযোগ জানাতে রেজিস্টার বই খোলা হয়েছে। এতে অনেক হাজীই তাদের ভোগান্তির কথা লিপিবদ্ধ করছেন। থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ও পরিবহন সুবিধাসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল সেসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন হাজীরা। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট চার হাজার ১৯৮ জন হজে যান। তাদের অনেকেই নানা অনিয়ম ও অসুবিধার শিকার হন। দিনাজপুরের আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাশেই পাকিস্তান ও ভারতের হাজীরা ছিলেন। তাদের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা অনেক ভালো ছিল। তাদেরকে দেখে আমরা অপমানবোধ করতাম। লজ্জায় পড়তে হতো। এ ব্যাপারে আমাদের গাইড বা মোয়াল্লেমকে বলে কোনো লাভ হতো না। তাদের খুঁজেই পাওয়া যেত না।
মাদরাসার অধ্যক্ষ আজিজুল হক বলেন, আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ আরো ভালো হওয়া দরকার ছিল। সরকারিভাবে মাত্র চার-পাঁচ হাজার লোক হজে যান। কিন্তু তাদের ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে হয় না।
শুধু খাওয়া ও থাকার অসুবিধার বিষয়ই নয়, অনেকের মালপত্রও হারিয়ে গেছে বলে হাজীরা অভিযোগ করেন। নুুরুল ইসলাম নামে এক হাজী বলেন, আমাদের কয়েকজন হাজীর বেশ কিছু পণ্যের কার্টন ছিল। কিন্তু সেগুলো হারিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গাইড-মোয়াল্লেমকে বলেও কোনো কাজ হয়নি। সেগুলো না নিয়েই আমাদের চলে আসতে হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি হিসাবেই প্রায় চার শ’ জন বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের প্রতারণার শিকার হয়ে হজে যেতে পারেননি। ভিসা থাকার পরও বিমানের টিকিট না দেয়ায় তারা হজ ক্যাম্পে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে অশ্রুসজল চোখে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন তারা। এ ছাড়া এ বছর হজফ্লাইট নিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এসব কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৮টি এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের দাবিÑ মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া তারা শিডিউল বিপর্যয়ের জন্য সরকারকেও দায়ী করেছে।
জানা যায়, এ বছর মোট ৩৭০টি ফ্লাইটে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যান। হজ শেষে গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ফিরতি ফ্লাইট। কিন্তু প্রথম ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা পৌঁছায় দুই ঘণ্টা পর ৮টা ২০ মিনিটে। এর পরও বেশ কিছু ফিরতি ফ্লাইট দেরিতে এসে দেশে পৌঁছেছে। হজ অফিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৩০টি ফ্লাইটে হাজীরা দেশে ফিরেছেন। এসব ফ্লাইটে ১১ হাজার ৯৩৩ জন দেশে পৌঁছান। আগামী ৫ অক্টোরব পর্যন্ত চলবে ফিরতি হজ ফ্লাইট। এ দিকে এ বছর হজে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত ৯৭ জন মারা গেছেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250534