আবদুল হাই বাচ্চু
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:০৯

প্রতিক্রিয়া

বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করতে হবে

ভুয়া জামানত ও ভুয়া ঋণের নামে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ জন্য দায়ী মূলত ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ। প্রধান কার্যালয় কেনার নামে ব্যাংক যে ৭৬ কোটি টাকা দিয়ে দিল, এর জন্যও দায়ী তারা। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের হোতা আবদুল হাই বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাঁকে গ্রেপ্তার করলে আরও ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও তো আগে এমন পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি গ্রেপ্তার হননি। হবেন কি না, তা-ও কেউ বলতে পারেন না।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোনো ব্যাংক অন্তত পরিত্যক্ত সম্পত্তি বা মামলাধীন সম্পত্তি কিনতে যায় না। বেসিক ব্যাংকের ভবন কেনার ঘটনাটি মনে হচ্ছে বিরল ধরনের। কারও সঙ্গে সম্পত্তি কেনার চুক্তি করতে চাইলে তা হতে হবে রেজিস্টার্ড চুক্তি। নইলে আইনি বৈধতা পাওয়া যায় না। যতটুকু জেনেছি, জায়গার মালিকের সঙ্গে করা বেসিক ব্যাংকের চুক্তিটি রেজিস্টার্ড নয়, অর্থাৎ স্ট্যাম্পের ওপরে নিজেরা কিছু কথাবার্তা লিখে সই করেছে। আবার সম্পত্তির ওপর মামলা থাকলে চুক্তি করার একান্ত দরকার হলে ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে তা-ও মানা হয়নি।
সরকার হচ্ছে বেসিক ব্যাংকের শতভাগ মালিক। সরকার অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমতি ছাড়াই যদি এত বেশি টাকার সম্পত্তি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বেসিক ব্যাংক, আমি বলব, এতে সরকারের তদারকির ব্যর্থতা আছে। ওই সময় সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যান ও পর্ষদ সদস্যরা তো ব্যাংকেই ছিলেন। তাঁরা তখন কী করলেন? একজনও কি বলতে পারলেন না যে কাজটা ঠিক হচ্ছে না!
আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যে এখন বলছে তাদের অগোচরে চুক্তি হয়েছে, তা-ও ঠিক মনে হয় না। তাহলে আমি বলব, তাদের গাফিলতি ছিল। আর চুক্তির প্রথম দিনেই যদি বেসিক ব্যাংক অপর পক্ষকে ৪০ কোটি টাকা দিয়ে থাকে, এটাও তো সন্দেহের উদ্রেক করে। অপর পক্ষ এখন ভবনের আরও তলা ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে চাইছে বলে শুনেছি। কিন্তু চুক্তিতে বোধ হয় বলা ছিল, ওই পক্ষ ভবিষ্যতে আরও তলা তৈরি করে বিক্রি করতে চাইলে আগে ব্যাংককে জিজ্ঞাসা করবে এবং ব্যাংক রাজি হলেই তা সম্ভব, নইলে নয়। তার মানে ভবনের আরও তলা কিনতে বাধ্য নয় ব্যাংক। সে হিসেবে ওই পক্ষ ব্যাংককে জবরদস্তি করছে।
জানি না, জায়গা ভোগদখলে নিতে বেসিক ব্যাংক মামলা করবে কি না। তবে ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। ব্যাংক চাইলে আপাতত একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখতে পারে। আমি মনে করি, টাকাটা ব্যাংকের পাওয়া দরকার অথবা সম্পত্তিটা বুঝে পাওয়া দরকার।
সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1317721/