১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:০৬

আবারও গভীর উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

‘রাখাইনের নিরাপত্তা দায়িত্বে কে? সেনা নাকি বেসামরিক কমান্ড?’

আবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৫ শে আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ সহিংসতা ও গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ফলে সেখানে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের ৮ই সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই সহিংসতা থেকে পালিয়ে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ৯ই সেপ্টেম্বর। ‘বাংলাদেশ হোস্টিং অব রোহিঙ্গা’ শীর্ষক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন। এতে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। ওদিকে এর আগে ৮ই সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি। এ সময় তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন সাংবাদিকরা। তারা জানতে চানÑ রাখাইনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কে? অবশ্যই সরকার, কিন্তু তা কি সেনা কমান্ডের অধীনে? রাখাইন কি বেসামরিক সরকারের কমান্ডের অধীনে? ওদিকে বিবৃতিতে হিদার নুয়ার্ট বলেন, গত ২৫ শে আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস হামলা ও গণহারে গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া সহ মারাত্মক সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরপর ৮ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ঘোষণা করে, ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে পৌঁছেছে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। হিদার নুয়ার্ট আরো বলেন, এসব রোহিঙ্গাকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘ হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন সহ আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের ভিতরে ও বাইরে এ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত বিপন্ন মানুষগুলোকে মানবিক সহায়তার জন্য প্রায় প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তিনি বলেন, মানবিক এই সঙ্কটে বদান্যতা দেখিয়ে সাড়া দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করি আমরা। আক্রান্ত মানুষের কাছে বাংলাদেশ সহায়তা পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে যে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমরা তারও প্রশংসা করি। ওদিকে ৮ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি। তিনি পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ও পলিসি সমন্বয়ক। এ সময় ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মিয়ানমারের গুরুত্ব অত্যন্ত। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের অল্পবিস্তর জানাতে চাই। রাখাইনের পরিস্তিতির প্রেক্ষতে আমরা মূল কতগুলো লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে সর্বাগ্রে আমরা যা করছি তা হলো, মানবিক সহায়তা পুনঃস্থাপন, যাতে দুর্ভোগে থাকা মানুষগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সহায়তা করতে পারে। রাখাইনে যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে প্রকৃতপক্ষে যারা দুর্ভোগে আছে তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়া যাবে। রাখাইন দেশটির একটি কমপ্লিকেটেড বা জটিল অংশ। অন্যভাবে বলা যায়, রাখাইন রাজ্যটি নিজেই একটি জটিলতার পঙ্কিলে আবদ্ধ। সেকানে প্রকৃতপক্ষে দুর্ভোগে থাকা মানুষ রয়েছেন। তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানেন অন্যরা। আমরা রাখাইনে সাংবাদিকদের প্রবেশ পুনঃস্থাপিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে সেখানে সাংবাদিকরা প্রবেশ করে প্রকৃত চিত্র আরো পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে পারেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপার হামলা, বেসামরিক সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, সাধাণ মানুষের চালানো হামলা সহ সব রকমের হামলার নিন্দা জানাই আমরা। মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ^াসযোগ্য অভিযোগের কারণে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এমন ঘটনায় বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সব পক্ষের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ নিতে। আমরা কর্তৃপক্ষ ও মিয়ানমারের অংশীদারদের কাছে আহ্বান জানাবো যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে তা চিহ্নিত করা এবং এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করা। এর আগের দিন হিদার নুয়ার্ট যেসব তথ্য জানিয়েছেন তার সঙ্গে আরো অল্প কিছু যুক্ত হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্ত অতিক্রম করে যেসব মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিষয়ে আরো ভালভাবে জানতে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে (রোহিঙ্গাদের) যে সংখ্যা বলা হয়েছে বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। ফলে ২৫ শে আগস্ট থেকে এই দেশত্যাগের ঘটনা উল্লেখ করার মতো। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে, দুই লক্ষ্যাধিক মানুষ দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে এসেছে। তবে সবচেয়ে কম জানা গেছে যাদের কথা তারা হলেন আভ্যন্তরীণভাবে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ। এর মধ্যে শুধু রোহিঙ্গাই নন, আছেন জাতিগত রাখাইন ও অন্যান্য সংখ্যালঘু। ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি বলেন, মিয়ানমারে আমাদের রাষ্ট্রদূত ও রেঙ্গুনে তার টিমের মাধ্যমে মিয়ানমারের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ও সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া আমরা অন্যান্য দাতা, অংশীদার, রেড ক্রসের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে রাখাইনে মানবিক অপারেশনের দিকে প্রাথমিকভাবে ফোকাস করেছি। এ ছাড়া মানবিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চলছে। অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এসব দেশ রোহিঙ্গাদের বহু বছর ধরে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। এই সেবা ও রোহিঙ্গাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সহ অন্য দেশগুলোর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এর প্রেক্ষিতে আমরা আপনাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। এরপরই শুরু হয় দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ সময় তাকে প্রথম প্রশ্ন করেন বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিক ডেভ ক্লার্ক। এখানে সেই প্রশ্নোত্তর তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: এই কলের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মিয়ানমারে সম্প্রতি আংশিক নির্বাচিত শাসনে ফিরে গেছে। রাখাইনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কে? অবশ্যই সরকার, কিন্তু তা কি সেনা কমান্ডের অধীনে? রাখাইন কি বেসামরিক সরকারের কমান্ডের অধীনে? নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো বাহিনী যদি গণহত্যা করে থাকে অথবা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত নয় এমন শক্তির হামলা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার ব্যর্থতার জন্য কাকে দায়ী করা হবে?
ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি: প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ ডেভ। আমি মনে করি আপানি মিয়ানমার যেসব জটিলতায় রয়েছে সে বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন। দেশটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকারে ফিরেছে তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটা একটা বড় ব্যাপার। প্রকৃত পক্ষে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে এইটা সেখানে প্রথম বেসামরিক সরকার। দেশটি যে সমৃদ্ধি চায় তার একটি উত্তম প্রক্রিয়া চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=82272