১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৮:৫৯

এ না হলে মগের মুল্লুক !

তৃতীয় নয়ন

মীযানুল করীম

ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। তবে এর রেশ এখনো কাটেনি। এবার বিশ্বসেরা ক্রিকেট টিম অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ হারিয়েছে ঈদের প্রাক্কালে। এতে ক্রিকেটপ্রেমী কিছু মানুষের ঈদের আনন্দ কিছুটা হয়তো বেশি ছিল। তবে ঈদের প্রাক্কালে আবার গুম-গায়েবের হিড়িকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খোদ রাজধানী থেকেই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সঞ্চার করেছে। এর সাথে ঈদ উপলক্ষে যেসব দুর্ভোগ-দুর্গতি ফিবছর আমাদের নিয়তি, সেগুলোর কমতি ছিল না। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আবার নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, বিতাড়িত রোহিঙ্গা নরনারী, শিশু, বৃদ্ধের যে অবিশ্রান্ত স্রোত আসছে মিয়ানমার থেকে, তা ঈদের আনন্দ শুধু মুছেই দেয়নি, ব্যাপক আতঙ্ক আর আহাজারিরও কারণ হয়েছে। আমরা ঈদে যখন পশু কোরবানি দিয়েছি, তখন সীমান্তের ওপারে মগের মুল্লুকে নরপশুরা হত্যা করছে অসহায়-বিপন্ন রোহিঙ্গাদের। আর বিশ্বের সর্বাধিক ভাগ্যহত এই জনগোষ্ঠী তাদের প্রাণ-সম্ভ্রম-সম্পদ কোরবানি দেয়ার পরও শত বছরের আবাসভূমি থেকে নারকীয় নির্মূল অভিযানের শিকার।

মিয়ানমারের পশ্চিমাংশে, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এবং বাংলাদেশের প্রান্তসংলগ্ন, সাবেক আরাকান প্রদেশটিতে বয়ে যাচ্ছে রক্তের বন্যা। অবাধে চলছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনোৎসব। সেখানে মানবতা আজ ধর্ষিত, আর পশুত্বের উৎকট জয়োল্লাস। গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির দিক দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনদের চেয়ে ভিন্ন বলে এবং মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর লোক না হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের জানমাল-ইজ্জতের বিন্দুমাত্র মূল্যও নেই মহামতি বুদ্ধের অহিংসানীতির অনুসারী হওয়ার দাবিদার সহিংস রাখাইনদের কাছে। মুসলিম রোহিঙ্গা, এমনকি অমুসলিম বাংলাভাষীদেরও বিতাড়িত করা হচ্ছে; ভিটেমাটিছাড়া করা হচ্ছে বর্বরোচিত পন্থায়। মিয়ানমারের সরকার ও সমাজে যারা ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী, তারা পাশবিক আক্রোশে শত শত বছরের ভিটেমাটি ও সহায়-সম্পত্তি থেকে উৎখাত করে তাদের দেশছাড়া করতে আগ্রাসী উন্মত্ততায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। ‘পানিতে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ।’ রোহিঙ্গারা কোনোমতে জান বাঁচাতে নাফ নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরেছে বহু নারী-পুরুষ-শিশু। এ দিকে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় মিয়ানমার সেনাদের আকাশপথে ও স্থলপথে হামলায় অনেক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন চাটগাঁর হাসপাতালে।

এবার রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের শিকার কত লোক, নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব নয়। নাফ নদীতে তাদের লাশ ভেসে আসছে প্রতিদিন। যার মোট সংখ্যা অনেক হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ সূত্র শুক্রবার জানায়, এক হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে গত ক’দিনে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশিও হতে পারে। কারণ, মিয়ানমার সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল রুশ মিডিয়ারও খবর, ‘কিছু পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাম্প্রতিক সঙ্ঘাতে তিন হাজারের মতো মুসলিম নিহত হয়েছে।’ এ দিকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। বার্মা বা মিয়ানমার সরকারের বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ ও নির্মূল অভিযানের তাণ্ডবে গত ক’দিনে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা (সাথে কিছু বাঙালি হিন্দু) বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে।
The world vowed never again after the Holocaust, never again after Bosnia, never again after Rwanda and yet in Myanmar it seems that here we are again. অর্থাৎ হলোকাস্টের (হিটলারের ইহুদি গণহত্যা) পর বিশ্ব প্রতিজ্ঞা করেছিল, ‘আর কখনো এমন অপরাধ ঘটতে দেয়া হবে না’; বসনিয়ায় (সার্বিয়ার) গণহত্যার পরও অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ‘আর এমনটি হতে দেয়া হবে না’; একই প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় হত্যাযজ্ঞের পর। কিন্তু তারপরও আজ মনে হচ্ছে, আমরা মিয়ানমারে সে পরিস্থিতির সম্মুখীন।
বসনিয়ার সারাজেভো ভার্সিটির শিক্ষক জারেড ও বেল তার সাম্প্রতিক এক নিবন্ধের শুরুতেই এ কথা বলে বিস্ময়, দুঃখ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অনস্বীকার্য তিক্ত বাস্তবতা সাক্ষ্য দিচ্ছে, নিকট অতীতে বারবার গণহত্যা কিংবা ভয়াবহ হত্যা-নির্যাতন-ধ্বংসতাণ্ডব ঘটেছে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশেÑ আমাদের এই উপমহাদেশেও। প্রতিবারই বিশ্ববাসী অঙ্গীকার করেছে, ‘না, আর কখনো এমন পাশবিকতা ও নারকীয়তা সংঘটিত হতে দেবো না।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা ঘটছেÑ একবার আফ্রিকায়, একবার ইউরোপে, এরপর এশিয়ায়। ঘটছে আরো ব্যাপকভাবে, আরো ভয়াবহ মাত্রায়, অধিক নৃশংসতার সাথে। কিভাবে তা সম্ভব হচ্ছে এতবার? দেশে দেশে সাধারণ মানুষের হত্যাযজ্ঞ ও পৈশাচিক ধর্ষণ-নির্যাতন-ধ্বংস-উচ্ছেদ ঘটছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মদদে কিংবা নির্লিপ্ততায়। বিশ্বনেতারা ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলেও এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি হতো না। সর্বশেষ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের বেনজির বর্বরতাও ঘটে চলেছে অভিন্ন কারণে। গত কয়েক বছরে রাখাইন রাজ্যে সরকার-সেনা-সংখ্যাগুরুদের সম্মিলিত হামলা-হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ তথা জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হয়েছে ও হচ্ছে কয়েক দফায়। এজন্য স্থানীয়ভাবে বৌদ্ধ মগ সম্প্রদায়, জাতীয়ভাবে নৃতাত্ত্বিক সাম্প্রদায়িকতায় কলুষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিকপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য এবং সেই সাথে ভারত-চীনের ভূমিকা দায়ী।
রোহিঙ্গা ইস্যুর নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারত ও চীন গুরুত্বপূর্ণ। এবার রোহিঙ্গা নিধনের চূড়ান্ত মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমার সফর এবং এই ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের সাথেও রোহিঙ্গাদের অনুকূলে প্রস্তাব নেয়ার প্রয়াস নস্যাতে দৈনিক সাফল্য থেকে এটা স্পষ্ট, এশিয়ার এই দুই পরস্পর বৈরী শক্তি রোহিঙ্গা প্রশ্নে কিন্তু অভিন্ন অবস্থানে। তারা যদি স্বীয় স্বার্থে মিয়ানমারের নিপীড়ক সরকারের মাথায় ছাতা ধরে রাখে, তাহলে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন রাজ্য এক রকম নরক হয়ে থাকবে অনির্দিষ্টকাল ধরে।

এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন বলেছেন, ‘মিয়ানমারের প্রতিবেশী চীন ও ভারতের সাথে দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের সাথেও এ দু’টি দেশের সম্পর্ক নিবিড়। অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির পাশাপাশি কি এদের মাধ্যমেও মিয়ানমারকে বাস্তবতা স্বীকার করার জন্য প্রভাবিত করা যায় না। তিনি আরো বলেন, সামরিক জান্তা প্রভাবিত মিয়ানমারকে যুক্তির পথে আনার জন্য মালদ্বীপের মতো অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির কথাও ভাবা উচিত। এ ক্ষেত্রে ওআইসি এবং আসিয়ানভুক্ত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাশে পাওয়া যেতে পারে।’
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, গত শতাব্দীতে ষাট, সত্তর ও আশির দশকে চীন ও রাশিয়ার মাঝে তীব্র বৈরিতা থাকলেও গত সিকি শতাব্দী সময়ে তা দূর হয়ে গেছে। সাম্প্রতিককালে বিরাট দেশ দু’টি, যারা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘ভোটোর অধিকারী বৃহৎশক্তি, বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে নিচ্ছে অভিন্ন অবস্থান। চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষপাতদুষ্ট ও বৈষম্যপুষ্ট সরকারের অনুকূল ভূমিকায় নেমেছে। রাশিয়ার পুতিনও সে পথে এগোতে পারেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট চরম মানবিক বিপর্যয়ের সর্বশেষ নজির। সু চির মুরব্বিয়ানায় পরিচালিত মিয়ানমার প্রশাসন বিশেষত মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা করছে ঠাণ্ডা মাথায়, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। তবুও সঙ্কীর্ণ স্বার্থে গণতন্ত্রী ভারত ও সমাজতন্ত্রী চীন সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এ ক্ষেত্রে নীতিহীনতার পরিচয় দিচ্ছে।

এ দিকে রাশিয়ার প্রভাবশালী গণমাধ্যম অনেকটা তাদের কর্তৃত্ববাদী সরকারের মনোভাব তুলে ধরেছে। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নয়, বরং মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা, ‘চরমপন্থা’র প্রতিরোধ এবং আসিয়ানের ‘ঐক্য’ অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। তবে রুশ মিডিয়াও স্বীকার করেছে হাজার হাজার মুসলিম পরিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি। ‘গণতন্ত্রের কন্যা’ অং সান সু চির দেশে তার দলের শাসনামলে এখন বইছে ‘রক্তের বন্যা।’ এই রক্ত কোনো ভয়াবহ সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্ত কিংবা অত্যাচারী সৈন্য বা স্বৈরাচারীর নয়। এটা নিরীহ, দরিদ্র, নির্যাতিত ও অবহেলিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর; তাদের ওপর দমন-পীড়নের যত ওজর-অজুহাত দেখানো হোক, আসল অপরাধ হলো রোহিঙ্গারা দেখতে দেশটির অন্যদের মতো নয়, গায়ের রঙ ভিন্ন, ভাষা কৃষ্টি এবং সর্বোপরি ধর্মবিশ্বাস আলাদা। এ প্রেক্ষাপটে সু চির শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ার জোর দাবি উঠেছে। কেউ কেউ দায়ে পড়ে ‘ওকালতি করে বলছেন, না সেটা সম্ভব নয়।’ কিন্তু এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত, কোনো পুরস্কার যারা দিয়ে থাকেন, তারা প্রয়োজনে তা ফিরিয়ে নেয়ার অধিকারও রাখেন।

ইতোমধ্যেই পাশ্চাত্যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সু চির নোবেল প্রাইজ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এমন একটি আবেদনপত্রের অন্যতম স্বাক্ষরদাতা কলামিস্ট জর্জ মনবিয়ট গার্ডিয়ান পত্রিকায় লিখেছেন ‘সু চির নোবেল ফিরিয়ে নিন’ শীর্ষক নিবন্ধ। উপসংহার টেনেছেন এভাবেÑ ‘এ সপ্তাহে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার বাতিলের জন্য একটি পিটিশনে স্বাক্ষর দিতে গিয়ে। বিশ্বাস করি, নিজেদের দেয়া পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দায় কাঁধে নেয়া উচিত নোবেল কমিটির। এই পুরস্কার দেয়া হয় যে মূলনীতির ভিত্তিতে, তা ভঙ্গ করা হলে পুরস্কারটি ফিরিয়ে নেয়া উচিত।’ তিনি এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে এর কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘নোবেল পিস প্রাইজের একজন বিজয়ী এখন জড়িত মানবতাবিরোধী অপরাধে।’

মিয়ানমারে এখন আর সামরিক সরকার নয়, সু চিদের দাবিমাফিক ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারই দেশ চালাচ্ছে দীর্ঘ দিন পরে। তিনি এই সরকারের নেপথ্যকর্ত্রী, সোজা কথায় মুরব্বিÑ এটা দেশ-বিদেশে সবার জানা। কিন্তু তিনি অন্তত নৈতিক দায়িত্ব, চক্ষুলজ্জা ও নিজের ইমেজের কারণেও রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণের পথ খুলে দিচ্ছেন না। গত ফেব্রুয়ারিতেই জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের প্রতি চরম অন্যায়-অবিচারের করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মিডিয়ার ভাষায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা প্রয়োগ না করে সু চি চুপ থাকছেন; স্বচ্ছ নথিভুক্ত প্রমাণকেও করছেন অস্বীকার, এমনকি বাধা দিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায়। লন্ডনের গার্ডিয়ানের এক কলামে জাতিসঙ্ঘের আলোচ্য রিপোর্ট সু চি পড়েছেন কি না সন্দেহ ব্যক্ত করে বলা হয়, এতে রোহিঙ্গাদের প্রতি লোমহর্ষক অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং এই নিপীড়নে অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। পরিবারের অন্যদের সামনে নৃশংসতার সাথে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে শিশু ও বয়স্কদের। শিক্ষক, বৃদ্ধ, গোত্রপতিÑ কেউ হত্যা থেকে রেহাই পাননি। হেলিকপ্টার থেকে বেপরোয়া আগুনে বোমা হামলায় গ্রামকে গ্রাম ভস্মীভূত। ঘরে আটকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া এবং সৈন্যদের নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বার সন্তান প্রসব ও নবজাতকের তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। শস্যের ক্ষেত জ্বালিয়ে দেয়া ছাড়াও পলায়নরত মানুষকে মারা হলো গুলি চালিয়ে।
মিয়ানমার প্রশাসন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে বলছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সশস্ত্র হামলায় ১২ জন সৈন্যকে হত্যা করায় তারা অপারেশন চালাতে বাধ্য। অথচ ওই কথিত হামলাকারী গ্রুপকে বাদ দিয়ে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও গণ-উচ্ছেদের টার্গেট করেছে। দশকের পর দশক কোনো গোষ্ঠী-সম্প্রদায় বারবার অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, নিধন-নির্যাতনের অসহায় শিকারে পরিণত হলে সীমিতভাবে হলেও প্রতিরোধ গড়ে ওঠা স্বাভাবিক ও অনিবার্য। সু চি এখন কাউকে সন্ত্রাসী বলার আগে তার নোবেল পুরস্কার নেয়ার সময়ে প্রদত্ত বক্তৃতাটি স্মরণ করা কর্তব্য। তখন তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই ভোগান্তিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই রোপিত হয় সংঘর্ষের বীজ। ভোগান্তি মর্যাদাহানি করে; জন্ম দেয় তিক্ততার এবং সৃষ্টি করে ক্রোধ ও ক্ষোভ।’ কথাটি নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গাদের বেলায়ও সত্য।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250499