৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:১৫

ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং

পরামর্শক ব্যয় বাড়তি প্রায় ২৫ কোটি টাকা : মেয়াদ বাড়ছে

দৈনিক বাড়তি ১৯.১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন ; ইপিসি চুক্তি কার্যকরে তিন বছর বিলম্ব

অনুমোদিত নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হচ্ছে না ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটকে রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের কাজ। আরো দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে। অন্য দিকে পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা যুক্ত করতে হবে। ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট চালাতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১৯ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট গ্যাস লাগবে। ইপিসি বা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন চুক্তি তিন বছর বিলম্বে কার্যকর করার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা এবং কেন্দ্রটির কার্যকাল বৃদ্ধির জন্য ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটকে রি-পাওয়ারিং করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৪ সালে। এখানে গ্যাস টারবাইন জেনারেটিং ইউনিট, গ্যাস বুস্টার কমপ্রেসার ও অক্সিলারিজসহ ডিজেল জেনারেটরসেট স্থাপন করার লক্ষ্যে দুই হাজার ৫১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৫ সালে। এ বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট নেয়া হচ্ছে হংকং সাংহাই ব্যাংক (এইচএসবিসি) থেকে দুই হাজার ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকার ৮৬ কোটি ৭৮ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং বিউবোর নিজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

সম্প্রতি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান স্টিম টারবাইন পুনর্বাসনসহ একটি গ্যাস টারবাইন ও দু’টি হিট রিকভারি স্টিম জেনারেটর বা এইচআরএসজি স্থাপন করা হবে। ফলে বর্তমানে ব্যবহৃত একই পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট থেকে ৪১৬ মেগাওয়াটে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইপিসি বা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তিন বছর পর চুক্তি কার্যকর হয়। ফলে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে আরো তিন বছর সময় প্রয়োজন, যে কারণে এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসম্বের পর্যন্ত করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ বলছে, এই মেয়াদ আর দ্বিতীয় বার বাড়ানোর কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ইসিএ বা এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঋণ জোগানকারী প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসির সাথে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক সুবিধা সম্মতি (এফএফএ) চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী মিগা, সার্ভ ও সিনোসার প্রকল্পের ঋণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। এফএফএ অনুযায়ী ওই তিন কোম্পানির সাথে সম্পাদিত চুক্তির প্রেক্ষিতে প্রকল্পের জন্য দু’জন পরামর্শক নিয়োগ দিতে হবে : একজন কারিগরি পরামর্শক এবং অপরজন পরিবেশ ও সামাজিক পরামর্শক। এইচএসবিসি ওই দু’জন পরামর্শক নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ২টি আলাদা পরামর্শক চুক্তি তাদের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানায়।

জানা গেছে, দু’জন পরামর্শকের সার্ভিস চার্জ বাবদ ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মোট ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই সংশোধিত ডিপিপিতে পিডিবির অংশে ওই ব্যয় যুক্ত করতে হবে। ডিপিপিতে পিডিবির অংশে পরামর্শক সেবা খাতে ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকার সংস্থান আছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানান। তবে সার্ভিস চার্জসহ অনার ইঞ্জিনিয়া খাতে মোট ১৫ কোটি ৪২ লাখ ৮১ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এখানে বাড়তি ৪ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার টাকার জোগান দিতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে তিতাস গ্যাস কর্তৃক প্রতিদিন ২৪ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। উল্লিখিত প্রকল্পসহ ঘোড়াশালের সব প্রকল্প সম্পন্ন হলে সেসব ইউনিট এবং বিদ্যমান বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য মোট ৪৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন প্রয়োজন হবে।
পিডিবির চেয়ারম্যান সভাকে জানান, ইতোমধ্যে গ্যাস টারবাইন ও জেনারেটর প্রকল্প সাইটে পৌঁছেছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্টার্ট আপ পাওয়ার প্রয়োজন বলে ইপিসি ঠিকাদার জানিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250213