৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:১৪

ঈদভাঙা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

রাজধানীর মালিবাগ বাজার। বাজারের চিরচেনা রূপ এখানে পুরোপুরিই অনুপস্থিত। সুনসান নীরবতা। মানুষের কোলাহল নেই। মাছবাজারের কোলাহলে মুখর পরিবেশের যে উদাহরণ দেয়া হয় তা পুরোপুরিই এখানে অনুপস্থিত। তবে ঈদের পর এই বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
গতকাল ছিল ঈদের পর প্রথম শুক্রবার। তবে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে শুক্রবারের মতো কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। বেশির ভাগ দোকানি এখনো দোকানই খোলেননি। যারা খুলেছেন তারাও বিক্রির জন্য পণ্য তুলেছেন সামান্যই। ক্রেতার সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গতকাল কাউকে বাজারে আসতে দেখা যায়নি।
মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আবদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, সকাল থেকে অল্প কিছু সবজি নিয়ে বসে আছি। ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম থাকায় আমরাও কম দামে বিক্রি করছি। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া না গেলে তো সবই লোকসান। তিনি বলেন, ঈদের পরে কাস্টমারের কষ্ট হবে ভেবে দোকান খুলেছি। এখন দেখছি নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ কম থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা আরো কম থাকায় বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ঈদের আগের চেয়ে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম দামে। মাছের দামও তুলনামূলক কম। কম দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগিও। আর বিক্রি করতে না পারার আশঙ্কায় গরুর গোশতের দোকানগুলো গতকাল পর্যন্ত খোলা হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুনের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কমিয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেজি প্রতি করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। ৪০ টাকা কমে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
কচুর লতি ১০ টাকা কমে ৫০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা, কাঁচামরিচের দাম ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে দেখা যায়। লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি ৭০ টাকা, গাজরের কেজি ৬০, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ১০ টাকা এবং লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। ধনে পাতার আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং কাঁচকলার হালি ২৪ থেকে ২৮ টাকা।

বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ঈদের আগে এ দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় উঠেছিল। দেশী মুরগির পিস ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা ও পাকিস্তানি লাল মুরগি আকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা দরে। আর গরু খাসির যে কয়েকটি দোকান খোলা ছিল সেগুলোয় বিক্রেতা না থাকলেও দাম হাঁকা হচ্ছে ঈদের আগের মতোই, গরু ৫০০ এবং খাসি ৭৫০ টাকা।
এ দিকে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চালের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হলেও বাজারে চালের দাম এখনো কমেনি। সরু চালের কেজি এখনো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। মাঝারি মানের চাল বিআর আটাশ ও লতা ৫১ থেকে ৫২ টাকা ও পাইজাম ৫০ থেকে ৫১ টাকায়, মিনিকেট ও নাজিরশাইলের কেজি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা।

মাছের বাজারে গতকাল আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং প্রতিটি ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
মুদি দোকানে গতকাল প্রতি কেজি দেশী রসুন মানভেদে ১৮০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি ৬৪ থেকে ৭০ টাকা, দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মুগ ডাল ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা, মাসকলাই ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ৫ লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল ব্র্যান্ডভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, প্রতি লিটার ১০০ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250192