৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৪:০৮

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ নাকি ৬৪

দেশে সাক্ষরতার হার কত? কয়েক বছর থেকে এ নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে। এ বছর (২০১৭) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.০৩ শতাংশ। ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার দাবি করেন, সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে আগের চেয়ে সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো প্রায় ২৭.০৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর।

অন্য দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৫ সালে সর্বশেষ নমুনা পরিসংখ্যানের তথ্য হচ্ছে, সাক্ষরতার হার হচ্ছে ৬৪.০৬ শতাংশ। ১৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ হার, পুরুষ হচ্ছে ৬৭.০৬ শতাংশ আর মহিলা ৬১.০৪ শতাংশ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে এমনকি ঘটেছে যে, সাক্ষরতার হার ৬৪.০৬ থেকে এক লাফে ৭২.০৩ শতাংশ গিয়ে ঠেকেছে। এ ধরনের উল্লম্ফন কিভাবে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরক্ষরতা দূরীকরণে এবং সাক্ষরতা হার বাড়াতে যেসব প্রকল্প সরকার বিভিন্ন সময়ে হাতে নিয়েছিল তার কোনোটিই শতভাগ সফল হয়নি; বরং প্রকল্পের অর্থ নানাভাবে ব্যয় দেখিয়ে লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, যেটি এখন চলমান। প্রকল্পটি হচ্ছে, দেশের ৬৪ জেলার ২৫০ উপজেলায় ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প’। এ প্রকল্পটি নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ প্রকল্পটিতে ১৫-৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে জীবনদক্ষতাসহ মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৪৫২ কোটি টাকার নিরক্ষরতা দূরীকরণসংক্রান্ত ওই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়ার সময় বলা হয়েছিল দেশে স্বাক্ষরতার হার হচ্ছে ৬৭ শতাংশ। তিন বছর ধরে এ প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলছে নিরক্ষরতা দূর করতে।
এ দিকে ইউএনডিপির (জাতিসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচি) সর্বশেষ (২০১৪ সালের) পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর হচ্ছে ৫৭ শতাংশ। আর ‘এ্যাসেসমেন্ট সার্ভে’ নামের আরেকটি সংস্থার (২০১৩ সালের) পরিসংখ্যান বা হিসাব মতে, দেশে নিরক্ষরতার হার হচ্ছে ৫১.০৩ শতাংশ। এখানেও নিরক্ষরদের বয়স হচ্ছে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। অন্য দিকে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের আগে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে অঙ্গীকার করেছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পরও সে লক্ষ্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি।

এরূপ প্রেক্ষাপটে আজ সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। আজ ৮ সেপ্টেম্বর ‘সারতা অর্জন করি, ডিজিটাল বিশ্ব গড়ি’ স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সারতা দিবস পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের মতো এবারো আলোচনাসভা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এবারের সব অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিামন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসঙ্ঘ সংস্থা ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সারতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাক্ষরতা বিস্তারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা, বিগত বছরের সাক্ষরতা কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/249963