৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৫৭

খাদ্য গুদামের ত্রাণ রেশনে লুটপাট

মোবাইল কোর্টের অভিযানে সত্যতা মিলেছে ** তদন্ত করতে দুদকের কাছে নথিপত্র হস্তান্তর ** কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সিণ্ডিকেট

সরকারি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম (সিএসডি) থেকে ত্রাণ ও রেশনের চাল সরবরাহ নিয়ে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে হরিলুট করে আসছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কেন্দ্রীয় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত এক শ্রেনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এই হরিলুটের ঘটনা এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে তা আর গোপন থাকছে না। প্রকাশ্যে চলে আসছে। সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বিষয়টি জানলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারনে হরিলুটের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই দুর্নীতির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে খাদ্যগুদামে। অবশেষে র্যাবের অভিযানে এর সত্যতা মিলেছে। এই হরিলুটের ঘটনা ধরা পড়ার পর কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসছে যে এই সিন্ডিকেটের শেকড় অনেক গভীরে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই হরিলুট কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এদের সঙ্গে অনেকেরে জড়িত থাকার বিষয়টিও র্যাবের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। এই বিশাল দুর্নীতির কার্যক্রম র্যাবের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে নথিপত্র হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

মজার ব্যাপার হলো এই হরিলুটের ঘটনা র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের ম্যানেজার হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একজন কর্মকর্তা বলেন, এই হরিলুটের ঘটনা ধরা পড়ার পর এখন কেউ মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন না। কারন খাদ্যগুদামের দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের জোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের হরিলুটের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। যেহেতুে শস্যের মধ্যেই ভুত রয়েছে সেহেতু হরিলুটের ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে এই কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের ত্রাণ ও রেশনের চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ র্যাবের কাছে করা হয়। র্যাব বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করে বিষয়টি নিশ্চিত হয় যে কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে ত্রাণ ও রেশনের চাল নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদেরকেও সনাক্ত করে র্যাব। এই দুর্নীতির ঘটনা র্যাবের কর্মকর্তাদেরও ভাবিয়ে তুলে। বুধবার র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তেজগাঁওয়ের সরকারি খাদ্যগুদামে অভিযান চালায়। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গুদামের অভ্যন্তরে দুটি ট্রাকে থাকা চালের বস্তা পরিমাপ করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে ৩০ কেজি চালের বস্তায় কোনটিতে পাওয়া গেল ১২ কেজি, কোনটিতে ১৪ কেজি, কোনটিতে ১৬ কেজি। একইভাবে তাদের সরবরাহকৃত রেজিস্ট্রার বই খতিয়ে দেখা হয়। সেখানে দেখা গেছে ঢাকা জেলা আনসার কমান্ডড্যান্ট তার কার্যালয়ে রেশনের চাল হিসাবে সরবরাহ করা হয়েছে ২৫৮ টন। এটি রেজিস্ট্রারে উলে¬খ রয়েছে। মোবাইল কোর্ট তাত্ক্ষনিক ঢাকা জেলা আনসার কমান্ডড্যান্ট কার্যালয়ে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে তারা পেয়েছেন মাত্র ৭৫ টন চাল। ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার জন্য বরাদ্ধকৃত ত্রাণের ৩০ টন চাল গুদামে রক্ষিত ছিলো। সেই চালগুলো মেপে দেখা গেলে ৩০ টনের স্থানে রয়েছে মাত্র সাড়ে ২০ টন। সাড়ে ৯ টন চাল নেই। গুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ট্রাক দুটি চাল পুনরায় খাদ্য গুদামের ডিজিটাল মেশিনে পরিমাপ করলে এ ঘটনা ধরা পড়ে। এ সময় গুদামের উপস্থিত কর্মকর্তারা একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকেই ছিলেন নীরব। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সরবরাহকৃত রেজিস্ট্রার বই পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে রেস্ট্রািরে যে পরিমাণ উলে¬খ রয়েছে ট্রাকে সেই পরিমাণ চাল ছিলো না। ছিলো অর্ধেকেরও কম। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে কতটুকু চাল পৌছেছে সেটা তদন্ত করলে আরো ভযাবহ ঘটনা বেরিয়ে পড়তে পারে। এরকম ত্রাণ ও রেশনের চাল যেসব জেলা ও উপজেলায় বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে সেখানেই সরবরাহে বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে আনসার কমান্ডড্যান্ড নুরুল আমিন বলেন, আমি খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহকৃত ৭৫ টন চাল পেয়েছি। ২৫৮ টন চাল পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এই কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে ঢাকাসহ ঢাকার বাইরে যেসব স্থানে রেশন ও ত্রাণের চাল সরবরাহ করা হয়েছে সকল স্থানেই পকুর চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে কর্মকর্তারা। এটা এখন প্রমাণিত। বিষয়টি দুদক দীর্ঘ তদন্ত করে এর সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করা দরকার। এ কারনে পুরো বিষয়টির নথিপত্র দুদকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

http://www.ittefaq.com.bd/national/2017/09/08/126532.html