৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৫৫

দু’দফা শুল্ক হ্রাসের প্রভাব নেই রাজধানীর বাজারে

তবুও কমছে না চালের দাম

চালের দাম কমাতে সরকারি পদক্ষেপের সুফল এখনও ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। সরকার দুই দফায় চালের শুল্ক কমিয়েছে ২৭ শতাংশ। এ পদক্ষেপের পর চালের দাম কমার কথা ছিল। কিন্তু গত এক মাসের হিসাবে দাম না বাড়লেও মোটা চাল ছাড়া সব ধরনের চালের উচ্চমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। তবে রাজধানীর খুচরা চালের বাজারগুলোতে দামের তারতম্য লক্ষ করা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাসের ব্যবধানে মান ভেদে নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। তারা বলছেন, কম দামে চাল কিনতে হলে আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে শুল্ক হ্রাস সুবিধায় সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও ভোক্তাদের পকেট কাটা যাচ্ছে আগের মতোই। মাঝখানে মুনাফা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর চালের বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই দফায় আমদানি শুল্ক কমানোর পরও গত এক মাসে চালের দাম কমেনি। বরং মাসের ব্যবধানে বেড়েছে নাজিরশাইল চালের দাম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কম দামে চাল কিনতে হলে আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের বাজার দরের তথ্য মতে, প্রতি কেজি সরু চালের দাম ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, যা এক মাস আগে একই দাম ছিল। সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট চালের দাম ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। ভালো মানের নাজির ও মিনিকেট চালের দাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। ভালো মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। যা গত এক মাস ধরে একই দাম লক্ষ করা গেছে। কিন্তু প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ও চায়না ইরির বাজারদর দেয়া আছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা, যা এক মাস আগের ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে এক মাসে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। টিসিবির তথ্য মতে, গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের। ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক বছর আগে যে মোটা চাল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। তবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দামের এ চিত্রে ভিন্নতা দেখা গেছে। মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক মো. দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মান ভেদে নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, মান ভেদে নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আঠাইশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি চালের দোকানে মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা ও আঠাইশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। মালিবাগ বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হুমায়রা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘চালের দাম এখনও তেমনভাবে কমছে না। তাই প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। দাম ক্রয়ক্ষমতায় না আসায় জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এতে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’ ভিন্ন চিত্র পাইকারি বাজারেও। রাজধানীর বাদামতলী ও কারওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। মিনিকেট ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আঠাইশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। কারওরান বাজার শপিং কমেপ্লেক্সের আল্লারদান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে। যার কারণে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’ খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু যুগান্তরকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়ায় শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। আমদানি করা প্রতি কেজি মোটা চালের দাম পড়ে ৩৬-৩৭ টাকা। পরিবহন খরচসহ তা বাজারে বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে মোটা চালের দাম স্থিতিশীল আছে। আগামী মাস থেকে সরকারি উদ্যোগে দেড় লাখ টন মোটা চাল বাজারে ছাড়া হবে।

https://www.jugantor.com/industry-trade/2017/09/08/153616