৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৫২

ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না ঈদ ফেরত যাত্রীদের

ফেরিঘাটে আটকে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা

নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিলেন ঈদের ছুটিতে। যাওয়ার সময় রাস্তায় রাস্তায় ভোগান্তি হলেও তা অনেকটা ভুলে গিয়েছিলেন স্বজনদের দেখা পেয়ে। কিন্তু ফিরে আসতে তার কয়েক গুণ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। এমনটিই জানালেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী থেকে ঢাকায় আসা নুরুদ্দিন। তিনি বলেছেন, কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে পদ্মা পাড়ি দিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬ ঘণ্টা। যে সময়ে বাড়ি থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। ফেরির সিরিয়াল পেতেই এই সময় লেগে যায়। নুরুদ্দিন বলেন, ঢাকায় আসতে এতটা কষ্ট পেতে হয়নি কোনো দিন।

এস এম রাশিদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী দৌলতদিয়া ঘাট থেকে জানিয়েছেন, ‘দিন পেরিয়ে রাত আসে, তবু থেকে যাই দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। পাঁচ ঘণ্টা পরও দেখা নাই ফেরির।’ মো: ইউনুস আলী নামে এক যাত্রী ভোরে জানিয়েছেন, ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে পারেননি। এভাবেই পথে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঈদ-ফেরত যাত্রীরা।
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, হঠাৎ নদীতে পলি জমে নাব্যতা কমে গেছে। যে কারণে ঈদের পরদিন থেকেই এই রুটে বড় ফেরি চলাচল করতে পারছে না। ছোট আকারের কয়েকটি ফেরি চলাচল করছে নদীতে। যে কারণে ঘাটে শত শত গাড়ির জট লেগে থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গাড়ি ফেরিতে উঠছে না। এ দিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি চলাচলে বিঘœ হওয়ায় অনেক গাড়ি চলে যাচ্ছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়। যে কারণে ওই ফেরিঘাটেও তীব্র জট দেখা দিয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় মোবাইলে একাধিক যাত্রী বলেছেন, উভয় ঘাটে কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট। কোন গাড়ি কখন ফেরিতে উঠবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পরিবহন শ্রমিক নেতা আলী রেজা বলেছেন, মাঝে মধ্যে ঘাট কর্র্তৃপক্ষের সাথে ঘাটের ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ হয়। এতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ঘাটে যানবাহনের জট লাগানো হয়। এতে ওই ব্যবসায়ীরা আটকে পড়া যাত্রীদের জিম্মি করে মুনাফা করে। ১৫ টাকার এক বোতল পানির মূল্য রাখা হয় ২৫ টাকা।
এ দিকে কোনো ফেরিঘাটেই টয়লেটের সুবন্দোবস্ত না থাকায় যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। পুরুষ যাত্রীরা কোনো মতে সারতে পারলেও চরম ঝামেলায় পড়েন নারী ও শিশু যাত্রীরা। একাধিক যাত্রী বলেছেন, টয়লেট না থাকায় চরম কষ্ট স্বীকার করতে হয় তাদের। রাতের বেলায় আশপাশে কারো বাড়িতে ঢুকবেন তারও সুযোগ থাকে না।
এ দিকে, ঢাকায় এসেও অনেককে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাসেল নামে এক যাত্রী বলেন, ভোরে সদরঘাটে এসে চরম বিপাকে পড়েন। লঞ্চ ঘাটে পৌঁছার পরেই তাড়া দিচ্ছিল লঞ্চের লোকজন। বাধ্য হয়ে অন্ধকারের মধ্যে লঞ্চ থেকে নেমে যেতে হয়। টার্মিনাল পার হয়ে রাস্তায় এসে পড়েন আরো বিপাকে। সিএনজি অটোরিকশায় দেড় শ’ টাকার ভাড়া হাঁকানো হয় ৮ শ’ টাকা। শেষ পর্যন্ত সদরঘাট থেকে কাঁঠালবাগানে রিকশায় যেতে হয় আড়াই শ’ টাকা দিয়ে।
এ দিকে, পরিবহনগুলো এখনো বাড়তি টাকা আদায় করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা ঢাকায় আসছেন তাদের বেশ কয়েকজন বলেছেন, বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। মাওয়া থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ৭০ টাকা। গতকাল বিকেলে এক যাত্রী জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে এক শ’ টাকা। এভাবে সব যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250029