৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৫১

ফাঁকা শহরেও স্বস্তি মিলছে না যাত্রীদের

ঈদ শেষ হলেও ছুটির আমেজ বহাল আছে রাজধানীতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ঢিমতালে শুরু হয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহন ও যাত্রী—দুটোরই সংখ্যা কম। যানজট নেই, নেই কানফাটা শব্দ।

তবে গণপরিবহন কম বলে বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আবার যাত্রী কম বলে বাস থামছে ঘাটে ঘাটে। ফলে বাস পেলেও ভোগান্তি যাচ্ছে না যাত্রীদের। গন্তব্যে পৌঁছতে সেই বেশি সময়ই লাগছে। রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর অটোরিকশা? রাস্তার নামার পর থেকে তারা যেন আইনের ঊর্ধ্বে। তারা মিটারে চলে না, কিন্তু বলার কেউ নেই। যা ইচ্ছা ভাড়া চায়, দেখার কেউ নেই। জিম্মি যাত্রী ফাঁকা রাস্তায় চলাচলের আনন্দটুকুও নিতে পারছে না।
ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বিআরটিসির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাস এখনো রাজধানীতে ফেরেনি। ঈদে ঢাকার বাইরে যাত্রী নিয়ে গেছে এসব বাস।
বেশ কয়েকটি রুটে সরেজমিনে দেখা গেছে, যানজট না থাকলেও যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে সময় বেশিই লাগছে। বাসগুলো যাত্রীর অপেক্ষায় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে অধিক সময় থাকছে। পাশাপাশি চলছেও ধীরগতিতে; যেখানেই একজন লোক দেখা যায়, সেখানেই বাস দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

বিহঙ্গ পরিবহন সার্ভিস মিরপুর দুয়ারিপাড়া থেকে সদরঘাট পর্যন্ত চলে। এ পরিবহনের ৫০টি গাড়ির মধ্যে ৩০টি চলছে। যাত্রী কম থাকায় বন্ধ আছে কয়েকটি। আর কয়েকটি ঢাকার বাইরে চলাচল করছে।
বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসকে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে। চালকের সহকারী মো. বেলাল হোসেন যাত্রী ডেকেই চলছেন। বললেন, ‘রাস্তায় যাত্রী নাই। খালি বাস চালাইলে তো তেলের দাম উঠবে না।’
এ বাসটিতেই উঠে বসেন এই প্রতিবেদক। ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে বাসটি বাসস্ট্যান্ডগুলোতে অপেক্ষার পাশাপাশি রাস্তায় একটু পরপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলেছে। যাত্রীরা বিরক্ত হচ্ছেন। চালকের সহকারীর সঙ্গে এ নিয়ে যাত্রীদের বিতণ্ডাও হয়েছে কয়েকবার। যাত্রী রানা জামান বলেন, ‘লোক নাই। তারপরেও দাঁড়ায় থাকবে। মনে হয় বাসা থেকে যাত্রী ধরে আনবে।’
একই ঘটনা ঢাকা পরিবহন লিমিটেডের বাসটির ক্ষেত্রেও। এই গাড়ি গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলে। চালক মো. রতন জানান, গাজীপুরের চৌরাস্তা ও গুলিস্তান ছাড়া কোথাও তেমন যাত্রী নেই। ১২-১৫ জন যাত্রী হতেই আধা ঘণ্টার মতো লাগে। এ জন্য বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তা থেকে যাত্রীও তুলতে হয়।
শিববাড়ি থেকে এ বাসে চড়েছেন মো. সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় জ্যাম না থাকলেও ড্রাইভার সময় খাইয়া ফালাইছে। জ্যাম থাকলেও যা, না থাকলেও তা। যাত্রীর সব সময়ই ভোগান্তি।’
একই কথা আরেক যাত্রী সুমাইয়া বেগমের। তিনি বলেন, ‘ফাঁকা রাস্তায় এত সময় লাগবে বুঝি নাই। লোক নাই, তা–ও গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।’ বাচ্চাকে নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসও কম চলছে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া বললেন, ঈদ ফেরত ভোগান্তি লাঘবে মাওয়া এবং আরিচা ফেরিঘাটে বাড়তি কিছু গাড়ি দেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার নাগাদ বিআরটিসির সব বাস চলবে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ এখন আর কোনো খবর নয়। অটোরিকশার সংখ্যা রাস্তায় কম। কোনোটাই মিটারে চলছে না। ভাড়া নিচ্ছে ইচ্ছামতো। শাহবাগ মোড় থেকে ধানমন্ডি ২০০ টাকা ভাড়ায় রাজি হয়েছেন যাত্রী রিমা আক্তার। রিমা বলেন, ‘এই ঈদে কত টাকা যে বাড়তি দিলাম, তার হিসাব নেই। যেতে তো হবে।’
একই ঘটনা রিকশার ক্ষেত্রেও। রিকশাচালকদের অনেকেই কোরবানির মাংস নিয়ে রাজধানী ছেড়েছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরা ভাড়া হাঁকছেন দ্বিগুণ। এমন একজন রিকশাওয়ালা গাইবান্ধার জামশেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুইডা টাকা বেশি কামাইয়ের জন্যই তো পরিবার-পরিজন ছাড়ি পইড়্যা আছি।’ এই রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে এক যাত্রী বলেন, ‘কারণ যা–ই হোক না কেন, সব মাশুল যাত্রীকেই দিতে হয়।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1314506