৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৯

ব্যাংকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা

কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা

দেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। এতে কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকিসহন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুনে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুনে ছিল ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা।দেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। এতে কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকিসহন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুনে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুনে ছিল ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভুয়া ঋণ ও পর্যাপ্ত জামানত না রেখে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক তদবির ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দিলে ব্যাংকে ঋণ আদায়ের হার কমে যায়। এতে বেড়ে যায় খেলাপি ঋণ ও আদায় অযোগ্যঋণ। ফলে সামগ্রিক আয় কমে যায়। ব্যাংকগুলো তখন খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংরক্ষণ করতে পারে না। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যায়। আর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ যত বাড়বে, প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণের হারও তত বেড়ে যাবে। তখন একই হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত হ্রাস পাবে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়। যেকোনো প্রকার ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষমতা অর্থাৎ ঝুঁকিসহন ক্ষমতা হ্রাস পায়।ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। কমে গেছে কোর ক্যাপিটাল সংরক্ষণের হার। কোর ক্যাপিটালের মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত মূলধন, সংরক্ষিত তহবিল ও রিটেইন আর্নিং বা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়ার পর অতিরিক্ত আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে মূলধন ঘাটতির হার। গত জুন শেষে ৭টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।এ দিকে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় জনগণের অর্থে ব্যাংকগুলোর মূলধনের জোগান দেয়া হচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬টি সরকারি ব্যাংকের জন্য ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংককে মূলধন জোগান দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৮০ কোটি টাকা।২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার ব্যাংককে মূলধন পূরণ করা হয়েছে ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংককে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জোগান দেয়া হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। একই বছরে বরাদ্দকৃত বেসিক ব্যাংককে দুই দফায় ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছাড় করা হয়েছে ৭৯০ কোটি টাকা এবং পরের বছর ১৫ জুন ছাড় করা হয়েছে আরো ৪০০ কোটি টাকা।২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু সমস্যাকবলিত বেসিক ব্যাংককে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মূলধন পূরণ করা হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেসিক ব্যাংকের অনুকূলে এ অর্থ ছাড় করা হয়।।গত অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য বাজেট থেকে আরো প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে বের করে নেয়া হয় সোনালী ব্যাংক থেকে। এ অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা তা আজো বের হয়নি। অথচ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তাকে এ জন্য শাস্তি দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। ২০১২ থেকে শুরু করে মাত্র দুই বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে বের করে নেয়া হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের ওই সময়ের পরিচালন পর্ষদের সদস্যরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ নামক একটি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। পানির মতো টাকা বের হয়ে গেছে রূপালী ব্যাংক থেকে। বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি নির্বিঘেœ দেশ ছেড়েছেন। এসব অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলোর বিশাল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে জনগণের করের অর্থ দিয়ে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, নানা কারণে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অন্যতম সমস্যা হলো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। কারণ, এক দিকে পরিচালনা পর্ষদে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের বেশির ভাগই সরকারি দলের সমর্থক, অপর দিকে ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক চাপ। রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে ঋণের চাপ আসে। আবার ওই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। যারা ঋণ নেন, তারাও কোনো না কোনোভাবে সরকারি আদর্শে বিশ্বাসী। এতে যে ঋণ দেয়া হয় তা আর ফেরত আসে না। এভাবেই সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে যাচ্ছে। আবার ব্যাংক থেকে এসব ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া কঠিন। কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট না দিয়েই অনেকে ঋণ নবায়ন করছে। এটাও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে। কিন্তু দিন শেষে সব দোষ চাপে ব্যাংকের এমডিসহ কর্মকর্তাদের ওপর। ওই এমডি মনে করেন, রাজনৈতিক চাপ না থাকলে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ফিরে আসত।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/249694