পানিবন্দী মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া চালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ টন চাল কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে গায়েব হয়েছে। এ ঘটনায় র্যা ব রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সিএসডি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে চাল ভর্তি ট্রাক আটক করেছে।
গতকাল দুপুরে র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যা ব-২-এর সদস্যরা কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে অভিযান চালান। গত মঙ্গলবার রাতে চালের ট্রাকটি খাদ্যগুদাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আটক করে র্যা ব।
র্যা ব সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে তেজগাঁও খাদ্যগুদামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুদামের ব্যবস্থাপকের কে গিয়ে বিভিন্ন নথি পরীা করেন। নথিতে গরমিল পাওয়ার পর গুদামে গিয়ে চালের বস্তা বের করে সেটি মাপার ব্যবস্থা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। চালের বস্তাগুলো মাপার সময় প্রতিটি বস্তায় অসংগতি দেখা যায়।
র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের নির্বাচনী এলাকার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ৩০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ওই চালের চালান কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে খালাস দেয়ার সময় এই অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রতি বস্তায় চাল থাকার কথা ৩০ কেজি। কিন্তু বাস্তবে বস্তায় চাল পাওয়া যায় ১২ থেকে ২০ কেজি। এভাবে মোট ৩০ টন চালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ টন চালের ঘাটতি পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের ওই চালানটিতে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, অনেক দিন থেকেই একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সরকার কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দের চাল পরিমাণে কম দিয়ে চালগুলো কালোবাজারে বিক্রি করে আসছিল। ঢাকার আশপাশের ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যরা প্রায়ই অভিযোগ করে আসছিলেন যে ঢাকা কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে চাল পরিমাপে কম দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার গোপন সূত্রে সংবাদ পেয়ে তার নেতৃত্বে সন্ধ্যা ৭টায় খাদ্যগুদামের বাইরে অবস্থান নেয় র্যা ব-২-এর একটি দল। রাত সাড়ে ৮টায় দুটি ট্রাক চাল নিয়ে বের হলে ট্রাক দু’টি খাদ্যগুদামের ফটকের সামনে থেকে আটক করে ভেতরে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তিনি গোডাউনের ব্যবস্থাপকসহ অন্য কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। রাত সাড়ে ৯টায় ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবিরসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ট্রাক দু’টি আবার খাদ্যগুদামের ডিজিটাল মেশিনে পরিমাপ করলে দেখা যায় ৩০ টন চালের মধ্যে সাড়ে ৯ টন চাল কম। তিনি জানান, ট্রাক দু’টি ব্যবস্থাপকের জিম্মায় রেখে গতকাল বেলা ২টায় আবার খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বস্তাগুলো পরিমাপ করলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসে।
তিনি জানান, আরো ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়ে যখন নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় ঢাকা জেলা আনসারকে ৭৫ টন চাল সরবরাহ দিয়ে লেজার ও অন্যান্য রেজিস্টারে ২৫৮ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে মর্মে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় তিনি ঢাকা জেলা আনসার কমান্ডার মো: আমিন উদ্দিনকে ফোন করলে তিনি জানান, তারা ৭৫ টন চাল পেয়েছেন। এ বিষয়ে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থাপক ও অন্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকার করেন যে আনসারকে ৭৫ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে। পরে পরিমাণে কম চাল সম্পন্ন বস্তাগুলো জব্দ করে গোডাউনে রেখে ৩০ টন চাল মেপে সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলার প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, চালের বস্তাগুলো পরিমাপ করা হয়েছে। এগুলো নমুনা হিসেবে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং দুর্নীতি হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।