৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৩

খাদ্যের জন্য রোহিঙ্গাদের হাহাকার

প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা খাদ্যের জন্য হাহাকার করছেন। অন্য দিকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন ও সীমান্তে তাদের পেতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত রোহিঙ্গারা চিকিৎসা এবং ওষুধের অভাবে কাতরাচ্ছেন। চার দিকে কান্নার রোল আর হাহাকার। আর কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না তারা।
স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পালিয়ে আসা এসব মানুষের জন্য প্রয়োজন খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসা সুবিধা। এখনই এসবের জোগান নিশ্চিত না হলে সঙ্কট হঠাৎ করেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রাত কাটাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে খোলা আকাশের নিচে। সেখানেও অনেকের জায়গা না মেলায় তারা শয্যা পেতেছেন সড়কের ওপর। অনেকেই আশ্রয়ের খোঁজে পাহাড়-সমতল ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। দীর্ঘ পথ হাঁটার কান্তি ও অনাহারে-অর্ধাহারে শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খোলা আকাশের নিচে এসব রোহিঙ্গার নিত্যসঙ্গী হয়েছে রোদ আর বৃষ্টি। পেটের ুধা মেটাতে নলকূপের পানিই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।
ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ অফিসের মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা বলেন, নিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের সীমিত আকারে তাঁবু, খাদ্য ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট বেশি। কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, ক্যাম্পে খাদ্য ও পানির সঙ্কট বাড়ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১০ দিনে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদনে এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার কথা বললেও বাস্তবে এ সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে।
জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা ভিভিয়েন ট্যান বলেছেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে। বাংলাদেশে এর আগেও পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্ত এলাকার এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ঈদের দিন ঘুমধুম সীমান্তে জাফর-আয়েশা দম্পতি মিয়ানমার সেনাদের গুলিতে নিহত হওয়ার পরই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিটি সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছেন। যেসব সীমান্তে বিজিবির কড়া অবস্থান রয়েছে সেখানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে রোহিঙ্গারা। রাতে কিংবা বৃষ্টিতে সুযোগমতো তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন।
কুতুপালং ও বালুখালী এবং লেদা রোহিঙ্গা বস্তি নিয়ন্ত্রণকারী মাঝিদের দাবি, তাদের একেক বস্তিতে নতুন করে ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে আরো কয়েকটি বস্তি গড়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দেড় লাখের বেশি।

কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝি আবু ছিদ্দিক ও মুহাম্মদ নূর বলেন, আমাদের ক্যাম্পে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন। বালুখালী ক্যাম্পের মাঝি ইলিয়াছ ও ছৈয়দ নূর জানান, তাদের ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকায় নতুন করে অর্ধলাখ রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন আশঙ্কাজনক হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ঠিক কতসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এ সংখ্যা এক লাখের বেশি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/249726