৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:১৬

রাজধানীর অলি-গলিতে এখনও কোরবানির পশুবর্জ্য

কোরবানির পশুর বর্জ্য এখনও রাজধানীর অলি-গলিতে পড়ে আছে। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর বর্জ্যভর্তি ডাস্টবিনগুলো ইতোমধ্যে পরিস্কার করা হলেও কিছু কিছু এলাকায় বেশ কয়েকটি ডাস্টবিনে এখনও উপচে রয়েছে বর্জ্য। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে বর্জ্যরে বিশাল স্তূপ। পশু জবাই দেওয়ার পর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হলেও স্যাভলন ও বিøচিং পাউডার না দেওয়ায় সে স্থানগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দাবি করেছেন, নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে তা শতভাগে দাঁড়িয়েছে বলে ডিএসসিসি’র জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। ঐদিন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছে। অন্যদিকে, উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হলেও তা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টনে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মেরাদিয়া, বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ দুই সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু অলি-গলিতে কোরবানির পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে কোন প্রকার বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়নি।
বিকাল ৪টায় দক্ষিণ বনশ্রীর কে বøকের ১৫ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বর্জ্যরে বস্তা ৩৪২ নম্বর বাড়ির সামনে পড়ে আছে। এ এলাকার কাজি বাড়ি সংলগ্ন মোড়ের প্রতিদিন বিকালে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন খেলনা বিক্রিসহ একটি হাট বসে। এতে আশপাশের মানুষজন কেনা-কাটা করতে আসে। কেউ কেউ ঘুরতেও আসেন। ফলে এ সড়কটি দিয়ে চলাফেরা করতে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় এসব মানুষকে।

স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা জোবায়েদ বলেন, গতকালও বর্জ্য ভর্তি এ দুটি বস্তা দেখেছি। আর মেরাদিয়া বাজার থেকে কাজি বাড়ি পর্যন্ত সড়কে হাটের সেই বর্জ্য এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। সিটি কর্পোরেশন যদি এগুলো পরিষ্কার করে বিøচিং পাউডার দেয়া হতো তাহলে এ দুর্গন্ধ আসতো না। একই চিত্র দেখা গেছে মেরাদিয়া বাজারে। বাজারের উল্টো দিকে রামপুরা খালজুড়ে বিশাল একটি বর্জ্যরে স্তূপ পড়ে আছে। আশপাশের বাসাবাড়ির বাসিন্দা ও সিটি কর্পোরেশনের প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিসিএসপি) কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করে এই স্থানে স্তূপ কওে রেখেছেন। কিন্তু তা আর অপসারণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, সেখানে আমাদের দুটি পে-লোডার লাগানো রয়েছে। তারা কাজ করছে। সেই স্তূপটি আমাদের স্থানীয় ডাম্পিং। কর্মীরা বর্জ্য কালেকশন করে সেখানে রাখে। সেখান থেকে আমাদের গাড়ি তা নিয়ে ল্যান্ড ফিল্ডে নিয়ে যায়।
একই অবস্থা দেখা গেছে, দক্ষিণ বনশ্রীর সি বøকের প্রধান সড়কে। এখানে বড়বড় কয়েকটি ডাস্টবিন থাকলেও তা ছিল কোরবানির পশুর বর্জ্যে ভর্তি। এসব বর্জ্যরে গন্ধ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বর্জ্য সরিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে।

অপরদিকে, পুরান ঢাকার বংশাল রোড, নর্থ সাউথ রোড, নবাব ইউসূফ রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার, নবাবপুর রোড, গোয়ালঘাট লেনসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে। তবে এসব এলাকাতেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করতে দেখা গেছে।
ঈদে দুই সিটির কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, এ বছর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় চার লাখ ৭৫ হাজার কোরবানির পশু জবাই হয়েছে। এ থেকে বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১৮ হাজার ও উত্তর সিটিতে ১০ হাজার। এসব বর্জ্য অপসারণের জন্য ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে কাজ করেছে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ঈদের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে। কয়েকটি হাটের কারণে আমাদের কাজ সামলাতে একটু সমস্যা হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত আমরা ১৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। এর মধ্যে নগরবাসী গত রোববার এবং সোমবারও পশু কোরবানি দিয়েছে। এই দুই দিনের বর্জ্য সঙ্গে সঙ্গেই অপসারণ করা হয়েছে। এখন নগরীতে কোনও বর্জ্য নেই। আমাদের শতভাগ কাজ শেষ। এর পরও কোথাও যদি কোনও বর্জ্য থেকে থাকে, আমাদের হটলাইনে ফোন করলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জানান, আমাদের হটলাইনে যারা সেবা চেয়েছে আমরা তাদের প্রত্যেককে সেবা দিয়েছি। গত সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের হটলাইনে এক হাজার ৫১০টি ফোন এসেছিল। এর মধ্যে সেবা চেয়েছিল ৬৭ জন। তাদের সবাইকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা কর্পোরেশনের এ সার্ভিসটি পাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতেই ফোন করেছেন। কিন্তু কোন প্রকার সেবা চাননি তারা।

https://www.dailyinqilab.com/article/94529