৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:১০

চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে কড়াকড়ি

কোরবানির পশুর চামড়া পাচারের শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। ঈদের ৪ দিনের মাথায় চামড়ার মজুদ সন্তোষজনক না হওয়ায় এ শঙ্কা জোরালো হয়ে উঠছে। এ লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকা ও সংশ্লিষ্ট জেলায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পার্শ^বর্তী দেশ ভারতে চামড়ার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় পাচার ঠেকাতে ঈদের দিন থেকেই সীমান্তে মাসব্যাপী বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বছর কোরবানির ঈদের সময় ১৮ কোটি বর্গফুট চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। প্রতি বছর এই হার সাত শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সে হিসাবে এবার ১৯ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়ার কথা। কিন্তু ঈদের পর ঢাকার পোস্তা, আমিনবাজার, বেরাইদ, টঙ্গী, জিঞ্জিরা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মদনপুর, আটিবাজার, টাঙ্গাইলের আড়তগুলোয় চামড়ার উল্লেখযোগ্য মজুদ গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন পাচার ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। একই সঙ্গে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণাও দিয়েছে। অনেকের আশঙ্কা ঈদের দিনই বিপুল পরিমাণ চামড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে যেতে পারে।

কথা হয় ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল আলমের সঙ্গে। চামড়া পাচারের শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো মূল্যে চামড়া পাচার ঠেকাতে হবে। ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেয়ার পর দেশে-বিদেশে এ শিল্পের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাভারের সব ক’টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ। এ শিল্প চালু রাখতে হলে প্রচুর
পরিমাণ চামড়া দরকার। এখন সেই চামড়াই যদি না থাকে তাহলে ট্যানারি সরিয়ে নিয়ে কী হবে? এ প্রসঙ্গে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যাতে ভারতে চামড়া পাচার করতে না পারে সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত চিহ্নিত করে টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোলের পুটখালী, গোগা, দৌলতপুর, অগ্রভুলোট, গাতিপাড়া, ঘিবা, সাদিপুর, বড় আচড়া, কাশিপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্ত এলাকায় নিরাপওা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির লোকবল। চামড়া বোঝাই ট্রাক যাতে সীমান্ত অভিমুখে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে বন্দর এলাকাসহ স্থল, জল ও রেলপথে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। চামড়া চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে তাদেরও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

চামড়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এবার চামড়ার ন্যায্যমূল্য না দেয়া, যথাযথ মূল্য দিতে ট্যানারি মালিকেদের অনীহার কারণে চামড়া পাচারের প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠছে। চামড়া পাচারের রোড হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে বেনাপোল, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আশুগঞ্জ-আখাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম ও ফেনী।
ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, ট্যানারি মালিকদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা এবং সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের অব্যাহত কারসাজি আজকে দেশের মূল্যবান চামড়া নিয়ে এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের চামড়া দেশে রাখতে হবে। ট্যানারি মালিকদেরই সদিচ্ছার মনোভাব দেখাতে হবে। লবণযুক্ত চামড়ার ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। ভালো দাম না পেলে চামড়া রক্ষায় যতই বাধা দেয়া হোক তাতে পাচার ঠেকানো যাবে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আবুল এহসান জানান, ভারতে চামড়া পাচারের কোনো সুযোগ নেই। পাচার রোধে ঈদের দিন থেকেই সীমান্তে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি। সীমান্তে এ সতর্কতা জারি থাকবে।
জেলা পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, সীমান্ত অভিমুখে চামড়া বোঝাই কোনো গাড়ি যেতে দেয়া হচ্ছে না। সব থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়া মাত্রই পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, চলতি কোরবানির মৌসুমে প্রতি বর্গফুট চামড়ার স্থানীয় দামই ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অর্ধেক। মাঠপর্যায়ে কেনার সময় দাম দেয়া হয়েছে তারও অর্ধেক। এ সুযোগে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চামড়া নিতে মুখিয়ে রয়েছেন। ঈদের আগেই তারা বাংলাদেশি দালাল-ফড়িয়া ও বড় বড় বেপারির মাধ্যমে মাঠপর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে বিপুল পরিমাণ অর্থও অগ্রিম লগ্নি করেছেন। ভারতীয় আমদানিকারদের সঙ্গে ব্যবসায়িক খাতিরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালীখ্যাত বেশ কিছু চামড়া ব্যবসায়ী যোগ দিয়েছেন বলে একটি সূত্র বলছে। এ কারণে এবার অনেক চামড়া দেশের শীর্ষ আড়ত ও মোকামগুলোয় সংরক্ষণ বেচাকেনার জন্য আনা হয়নি।

বাংলাদেশ হাইড আন্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে চামড়ার দাম কম হওয়ায় নানা উপায়ে অবৈধভাবে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মুহূর্তে চামড়া প্রান্তিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের কাছে নেই।
বর্তমানে ভারতে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ১০৫-১১০ টাকা। কিন্তু ভালো মানের চামড়া হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এর দাম ৬০ টাকার বেশি নয়। তবে এ বিষয়ে নাটোর, সিলেট ও চট্টগ্রামের একাধিক চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা যুগান্তরকে বলেন, ট্যানারি মালিকদের মূল্যবৃদ্ধির এ ঘোষণা গ্রহণযোগ্য ও যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্টদের দাবি, চামড়া দেশে রাখতে হলে দাম প্রতি বর্গফুটে কমপক্ষে ৮০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/09/06/153101