৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:০৮

অব্যবস্থাপনায় ঢাকামুখী মানুষ বিড়ম্বনায়

লঞ্চগুলো যত যাত্রী নিয়ে গতকাল ঢাকায় এসেছে তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়েও কম। যাত্রী কম থাকলে কী হবে; ঈদের অজুহাতে এসব যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে বাড়তি ভাড়া। একইভাবে বাসের টিকিটেও রাখা হচ্ছে বাড়তি টাকা। কর্মস্থলমুখী মানুষ সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়ছেন ঢাকায় পা দিয়েই। ঈদের আগে তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়েছে বখশিশের কথা বলে; আর এখন মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে বেশি ভাড়া দিতে।
গতকাল ভোরে সদরঘাট টার্মিনালে দেখা যায় একটির পর একটি লঞ্চ আসছে। কিন্তু বেশির ভাগ লঞ্চ তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া স্থানে না করে ইচ্ছেমতো বার্দিং করছে। যে কারণে অন্যান্য লঞ্চের যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নেমে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা নামতে পারছেন না।

রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা আতাউর বলেন, বাড়তি টাকা দিতে সমস্যা ছিল না; যদি শান্তিতে বাসায় যেতে পারতেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাকে বহনকারী লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটে আসে। ঘাটে তখনো সিঁড়ি লাগাতে পারেনি, এর মধ্যেই ডাকাডাকি। যাত্রীদেরকে নেমে যাওয়ার অনুরোধ। কারণ, লঞ্চটি নিয়ে তারা আবার বরিশালে যাবে। এই লঞ্চ বিকেলে আবারো যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন লঞ্চ থেকে নামতে। তিনি বলেন, কীর্তনখোলা ২ নামের ওই লঞ্চটির একটি কেবিনে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসতে সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া যেখানে এক হাজার টাকা, তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে দেড় হাজার টাকা। আতাউর বলেন, কেবিনের এই বাড়তি ভাড়া মালিক পেয়েছেন কি না তিনি জানেন না। তবে তার পকেট থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে ঠিকই।

আতাউর বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে দেখেন বাসের বিশাল লাইন। ফলপট্টি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গাড়ি আর গাড়ি। গাড়িগুলো রাখা হয়েছে ঈদ ফেরত যাত্রীদেরকে বহন করার জন্য। সদরঘাট টার্মিনালের সামনের রাস্তায় হাঁটারও কোনো জায়গা ছিল না। এখান থেকে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, সাভারসহ আশপাশ সব রুটের বাসই ছেড়েছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় পার্কিং করা নিষেধ থাকলেও তারা কিভাবে পার্কিং করলেন তা জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন চালক জানালেন, ‘টাকা দিয়েছেন’। এই লাইনে সিএনজি অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব এবং ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট গাড়িগুলোও লক্ষ্য করা যায়। তবে ভাড়া ছিল কয়েকগুণ। বাসে মহাখালীর ভাড়া রাখা হয়েছে দেড় শ’ টাকা। সেলিম নামে এক যাত্রী বলেন, মহাখালী পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া হাঁকানো হয়েছে ৯ শ’ টাকা। একাধিক যাত্রী বলেন, যেকোনো পরিবহনই যাত্রীদের কাছ থেকে যেভাবে পারছে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে তারা ঈদ বখশিশের নামে অর্থ হাতিয়েছে, আর এখন নিচ্ছে ঠেকিয়ে।

এ দিকে সকালে অব্যবস্থাপনার কারণে সদরঘাটে অনেক যাত্রী গাড়ি চাপায় আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব নামে এক পথচারী বলেছেন, সকাল ৭টার দিকে টার্মিনালের কাছেই আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের ১১-৯২২১ নম্বর গাড়ির চাপায় অন্তত ৫ জন পথচারী আহত হয়েছেন। এ সময় পথচারীরা এর প্রতিবাদ করলে উল্টো পরিবহন শ্রমিকেরা তাদের ওপর চড়াও হয়। কাছেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ওই বাসের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর ছিনতাইকারী-পকেটমারদের এখন টার্গেট ঢাকামুখী যাত্রীরা। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হলেও গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দেখা গেছে, বুয়েটের সামনের রাস্তায় একটি পুলিশ ভ্যানের চার পুলিশ সদস্যের মধ্যে তিনজনই ঘুমাচ্ছেন।
কমলাপুর স্টেশনে যেসব যাত্রী এসে গতকাল নেমেছেন তাদেরকেও বাসায় পৌঁছতে নানা ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়। সিদ্দিকুর নামে এক যাত্রী বলেন, দুই-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে বাসায় পৌঁছতে হয়েছে ঢাকায় আসা যাত্রীদের। সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গাড়ির চালক অভিযোগ করেছেন, টার্মিনাল এলাকায় গাড়ি পার্কিং করতে এক-দেড় শ’ টাকা দিতে হয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকেই ওই টাকা তারা আদায় করছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/249492