৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫৮

ভোগান্তি নিয়েই ফেরা শুরু

ঈদের ছুটি শেষে ভোগান্তি নিয়ে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে যাওয়া লোকজনের অনেকেই এখনো গ্রামের বাড়িতে। তবে গতকালই যাদের অফিস খুলেছে তারা এখন ঢাকায়। যানবাহনে মানুষের চাপ কম হলেও যারা গতকাল ঢাকায় ফিরেছেন তাদের অনেকটা ভোগান্তি নিয়েই ফিরতে হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাসহ নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হয়েছে তাদের।
অফিসমুখী লোকজন গতকাল ট্রেন, বাস ও লঞ্চে ঢাকায় ফিরেছেন। প্রথম দিনে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম হলেও তাদের অভিযোগ যাত্রাপথে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বাস এবং লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন তারা। বরাবরের মতো বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ফিরতি পথে মূল চাপ পড়বে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত। এ সময় পথে ব্যাপক যানজটের পাশাপাশি নানা ভোগান্তি বাড়বে। তাই অনেকেই ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কর্মস্থলের দিকে পা বাড়িয়েছে। এ সুযোগে কেউ কেউ টিকিটের দাম বাড়িয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল সোমবার পর্যন্ত দু-একটি বাদে বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছায়। ছিল না তেমন ভিড়ও। ট্রেনে খুব একটা ভোগান্তি না হলেও কিছু কিছু যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কালোবাজারে বেশি দামে টিকিট কিনেছেন।

এ দিকে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে আসা বিভিন্ন রুটের বাসেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। যাত্রীরা জানান, সড়কের কোথাও যানজট না থাকায় আসতে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে ফিরতি যাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন অনেকেই। যাত্রীরা বলছেন, এবারের ঈদের ছুটি সংপ্তি হওয়ায় ঘরে ফেরা বেশির ভাগ মানুষই দুই-তিন দিনের বাড়তি ছুটি নিয়েছেন। তাই ঈদের ছুটি রোববার শেষ হলেও যানবাহনের ফিরতি টিকিটের সঙ্কট রয়েছে মূলত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত। এ সুযোগে পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে গোপন আঁতাত করে কালোবাজারিরা বাস, ট্রেন ও লঞ্চের বিপুলসংখ্যক টিকিট আগেভাগেই নিজেদের সংগ্রহে রেখে কর্মস্থলে ফেরা মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো পরিবহন মালিক নিজেরাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।

এ দিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দিনভর ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটসহ বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়ক ফাঁকা থাকলেও যানবাহন সঙ্কট কর্মস্থলমুখী মানুষকে ভুগিয়েছে। এর ওপর ঘরমুখো যানবাহনের চাপে জোড়াতালির সড়ক-মহাসড়ক নাজুক হয়ে পড়ায় ফিরতি পথের ভোগান্তিতে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাস শ্রমিকেরা জানান, ঈদের আগে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে তাড়াহুড়া করে মেরামত করা সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দ রীতিমতো মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। এতে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় অনেক মালিকই গতকাল তাদের সব বাস রাস্তায় নামাননি বলে দাবি করেন অনেকে।

তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্য, ঈদের পর মানুষ কর্মস্থলের দিকেই বেশি ফিরছেন। এতে যাওয়ার পথে বেশির ভাগ গাড়ির অর্ধেকের বেশি আসন খালি থাকছে। সে তি পুষিয়ে নিতেই তারা এখন টিকিটের দাম সরকার নির্ধারিত রেটে নিচ্ছে। মালিকদের দাবি, ঈদের ছুটি ছাড়া অন্য যেকোনো সময় তারা টিকিটের দাম কিছুটা কম নেন। তাই সরকার নির্ধারিত ভাড়া চাইলেই যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তোলেন।
যশোর থেকে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় ফেরা যাত্রী শাহিন আলম জানান, ঈদের আগে বাড়ি যেতে বাসের টিকিট কিনেছিলেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দুই শ’ টাকা বেশি দিয়ে। ফেরার পথে কালোবাজারে টিকিট কিনতে তিন শ’ টাকা গচ্চা গেছে। এরপরও অতিরিক্ত লাগেজের দোহাই দিয়ে বাসের হেলপার এক শ’ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, তিনি দেড় শ’ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কিনেছেন।
একইভাবে বরিশাল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতীরা, নড়াইলসহ দণিাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা বেশির ভাগ পরিবহনের যাত্রীকেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ টাকায় কালোবাজার থেকে টিকিট কিনতে হয়েছে। বাস ও লঞ্চের কাউন্টারেও বাড়তি ভাড়ায় টিকিট বিক্রিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ দিকে নৌপথেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলাসহ বেশির ভাগ রুটে লঞ্চ সঙ্কট না থাকলেও সবখানেই কেবিনের টিকিট নাই! নাই! রব উঠেছে। ফলে এসব টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কেনার সুযোগ পাননি। লঞ্চ কর্তৃপ আর কালোবাজারিদের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারাই কেবল দুই থেকে তিনগুণ দামে ফিরতি টিকিট পেয়েছেন।
এ দিকে ফেরি সঙ্কটের কারণে শিমুলিয়া (মাওয়া) ও কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আটকা পড়ছে যাত্রীবাহী বাস। পদ্মায় পলি জমার কারণে বিআইডব্লিউটিএ’র চলাচলকারী বড় ফেরিগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকামুখী শত শত যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। একাধিক যাত্রী জানান, রোববার রাত ১২টা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত কয়েক শ’ বাস যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ীতে আটকা পড়ে। পদ্মায় পলি জমার কারণে রাতে বড় ফেরিগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েকটি ছোট ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখা হয়। ফলে পদ্মার দুই পাড়েই বিপুল বাস আটকা পড়ে। এতে করে ঢাকায় অফিসমুখী লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ দিকে দূরপাল্লার পরিবহনের মতো বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট ও রেলস্টেশন রুটের নগর সার্ভিসের বাস-মিনিবাস, সিএনজি অটোরিকশার চালক-শ্রমিকেরা। সুযোগ বুঝে তারা দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি ভাড়া আদায় করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/249253