৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:১০

নির্বাচন কী নিরপেক্ষ হবে?

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার দুই পঙ্ক্তি দিয়ে শুরু করা যায় : ‘আমরা তো তিমির বিনাশী হতে চেয়েছিলাম/আমরা কি তিমিরবিলাসী?’ মনে হচ্ছে আমরা তিমিরবিলাসীই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মেরুদণ্ডহীন ‘রকীব কমিশন’ নির্বাচনের নামে এক প্রহসনের মাধ্যমে আওয়ামী জোটকে আবার ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছিল। ক্ষমতায় বসেই তারা বিরোধী দলকে নির্মূলের নানা আয়োজন চালাতে থাকেন। গুম, খুন, মামলা, হামলা, ক্রসফায়ার নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়।
সরকার বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের করে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কারাগারে পুরতে থাকে। সন্তানহারা শত শত পরিবারে কান্নার রোল ওঠে। মায়ের কান্না, স্ত্রীর কান্না, সন্তানের কান্নায় বাংলাদেশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এখনও প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মীকে বিশেষ অভিযানের নামে আটক করা হচ্ছে। কিন্তু এর যেন কোনো প্রতিকার নেই।

এ রকম সময়ে ব্যক্তিত্বহীন রকীবউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুরু থেকে দাবি করে আসছিল, এবার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। তা নিয়েও অনেক ঢাকঢোল পেটানো হলো। লোক দেখানো সার্চ কমিটি হলো। সে সার্চ কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করেছিল, সেসব নাম প্রকাশের আগেই সরকারের তরফ থেকে কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দেয়া হলো। সার্চ কমিটির তালিকায় নুরুল হুদার নামও ছিল না। কোথাকার কোন এক নামগোত্রহীন রাজনৈতিক দল নাকি তার নাম সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সার্চ কমিটি তো তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেনি। তার পরও হুদাই হয়ে গেলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সরকারি কর্মচারীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় বিএনপি সরকারের আমলে নুরুল হুদাকে যুগ্ম সচিব থাকাকালে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। সে ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে সরকার জানান দিলো যে, আগামী নির্বাচনেও সরকারের ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটতে দিতে চায় না।
গত ১৩ জুলাইয়ের আগে এই নির্বাচন কমিশন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হয়নি। কিন্তু ১৩ জুলাই সারা দেশে ৫৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেই আমরা প্রথম নুরুল হুদার মধ্যে যেন রকীবউদ্দিনের প্রেতাত্মা দেখতে পেলাম। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী এলাকাগুলো সীমিত। সেখানে ভোটার সংখ্যাও কম। কিন্তু এই ৫৬ ইউপি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বাস্তবে যে নির্লজ্জ আওয়ামীপ্রীতি দেখাল, তাতে আমরা শঙ্কিত। এসব নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জাল ভোট মারার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে জাল ভোটের অভিযোগে প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট হয়েছে ব্যাপক হারে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সদস্যরা কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ব্যাপকভাবে জাল ভোট দিয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে ঢুকে জালভোট দিতে শুরু করে। এসব বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। অনেক স্থানে বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা নৌকা প্রতীকে ব্যাপক হারে জাল ভোট দিয়েছে।
ভোট দিতে পারেনি হাজার হাজার মানুষ। কেন্দ্রে এসে দেখেছে, তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক জায়গায়ই সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে ছোটাছুটি করেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রই ছিল ফাঁকা, তারপরও ব্যালট বাক্স ভরে গেছে। কোথায়ও কোথায়ও আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে, এলোপাতাড়ি গুলি পর্যন্ত চালিয়েছে। ধানের শীষের সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয়নি। এত যে অনিয়ম জালিয়াতি হলো, সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন একেবারেই নিশ্চুপ। এ থেকে ধারণা হয়, ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনে তারা কী করবে।
এর মধ্যে গত ১৬ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। ওই দিন তিনি সংবাদ সম্মেলনে আগামী দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন জনাব হুদা। তিনি বলেছেন, এটি একটি সূচনা দলিল মাত্র। নির্বাচনের পথে কাজের জন্য এ কর্মপরিকল্পনাই সব নয়। সংশোধন পরিমার্জন করে, সবার মতামত নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যয় নিয়ে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। জনাব হুদা বলেছেন, তিনি সুশীলসমাজ ও রাজনৈতিক দলসহ সব ধরনের অংশীজনের সুপারিশের পাশাপাশি সবার সহযোগিতা চান। কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘ইসির অধীনে প্রশাসনিকসহ সব ধরনের কাজের তদারকি শুরু হবে’ বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন শুধু সরকারের নয়, রাজনৈতিক দল বা যেকোনো দেশী-বিদেশী প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করতে পারব আমরা। ওই রোডম্যাপে তিনি নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার, কর্মপরিকল্পনার ওপর পরামর্শ গ্রহণ, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ এবং নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণের মতো সাধারণ বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ছিল না। এসব রুটিন ওয়ার্ক। সাংবাদিকেরা তার কাছে জানতে চান যে, এবার জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসায় আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে ওই নেতাদের দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বলে। এ ধরনের তৎপরতায় বাধা দেয়ায় ইসির কোনো পদক্ষেপ থাকবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, এটা সরকারের বিষয়। আমরা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এখন সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ থাকবে না। আইনের সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় বিদ্যমান আইন বিধি প্রয়োগ করে অতীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এখন আইনি কাঠামো আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে ইসি মনে করে না।

তার এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রোডম্যাপ ঘোষণাকালে যে বার্তা দিয়েছেন, সে বার্তা জনগণকে শঙ্কিত করে তুলেছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচনের আশায় মানুষ যে প্রহর গুনছে, তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে ভোট চাচ্ছে। অন্য দিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট চাওয়া তো দূরের কথা, সভা-সমাবেশ করারও অনুমতি পাচ্ছে না।
রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে বসতে চাইলে তাতেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। সিইসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এসব ব্যাপারে কমিশন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত। কিন্তু তিনি এখতিয়ারের প্রশ্ন তুলে বাস্তব অবস্থা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এসব রোধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তারা কিছুই করতে পারবেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তফসিল ঘোষণার আগে যদি তাদের কিছু করারই না থাকে, তবে দু-তিন মাসের জন্য কমিশন গঠন করলেই হয়। তফসিল ঘোষণার আগে যদি কিছু করতেই পারবেন না, তাহলে নির্বাচনের দেড় বছর আগে কেন রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন? তাহলে তারা বলে দিক, কোনো রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের আগে নির্বাচনী তৎপরতা চালাতে পারবে না। তা না করে শুধু মাঠে বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশে পুলিশি বাধা বন্ধ করতে পারবেন না বলে বার্তা দিয়েছেন সিইসি। এসব কারণে সিইসির বার্তায় ভয় পাচ্ছে জনগণ। তাদের আশঙ্কা, তবে কি ফের ৫ জানুয়ারির স্টাইলে আরেকটি কথিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে?

সাধারণত এমনই ঘটে যে, নির্বাচনের দেড়-দুই বছর আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে। এবারও সরকারি দল সে কাজই শুরু করেছে। শুধু বাধা দেয়া হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি ও অন্যান্য দলকে। নির্বাচন কমিশনকে এটা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনী মাঠ সবার জন্য সমান করতে হলে এটা করা জরুরি। তবেই মানুষ বিশ্বাস করবে যে, নির্বাচন কমিশন সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সিইসির কথায় মনে হয়েছে, তারা ৯০ দিনের ঘেরাটোপে বন্দী থাকতে চাইছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা আসলে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চান। সকাল দেখে যেমন দিনটি কেমন যাবে বোঝা যায়, তেমনি সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি, রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ করার অধিকার, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি প্রভৃতি ইস্যুতে ইসির মনোভাবও কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এখন থেকে ইসিকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।... সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, ‘নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। এ সহায়তা শুধু তফসিল ঘোষণার পরেই করতে হবে, তা বলা নেই।
তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে। এসব বাধাবিপত্তি দূর করতে আদালতের সহায়তা চাইতে পারে নির্বাচন কমিশন।’ সিইসি বলেছেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগে তাদের কিছু করার নেই। এই অবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি তাদের কিছু করার নেই? তফসিল ঘোষণার আগে যদি নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার না থাকে, তাহলে তো দু-তিন মাসের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হতো। ওই তফসিলের আগে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলবে না, কোনো তৎপরতা চালাবে না।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনে নিবন্ধিত। সেই দলগুলোকে সরকার সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এ জন্য কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিতে পারে। তা করতে না পারলে শুধু রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে কিছুই হবে না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সিইসি ঘোষিত রোডম্যাপ বলে দিচ্ছেÑ আগামী দেড় বছর এই কমিশন নির্বাচনী কাজগুলো করে যাবে। এর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা ও সংলাপ অন্যতম। এসব কাজ যদি ইসি দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারে, তাহলে আগে ভাগেই নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে তারা কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে না?’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সংলাপ ইত্যাদি করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা-ও তো নির্বাচনী আইনে লেখা নেই। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তারা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহিতা আদায় করতে পারে, তবে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে কেন বলতে পারবে না? কেউ নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে আর কেউ ঘরে বসে থাকবে, তাহলে এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু কিভাবে হবে?
সিইসি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কিভাবে সরকার পরিচালিত হবে এবং রাজনৈতিক পরিবেশের বিষয়গুলো তাদের এখতিয়ার নয়। সরকার এই কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করবে না।’ সিইসির এই বক্তব্য সঠিক নয়। সরকারি দল সারা বছর সরকারি টাকায় সভা-সমাবেশ করবে আর বিরোধী দলগুলো ভোটের আগে মাত্র এক মাস সময় পাবে। তাহলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো না। সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হলে এখন থেকে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ করে দিতে হবে ইসিকে। এ জন্য প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা নিতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই ইসি বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।’ একই ধরনের বক্তব্য রেখেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। এসব বক্তব্য সর্বাংশে সত্য। সিইসির ধামাধরা বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিশেষজ্ঞরা যে কথা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে তা আমলে নিতে হবে। সরকারের নির্লজ্জ তল্পি বহনের পথে থাকলে তাদের বড়ই অসম্মানজনক পথে বিদায় নিতে হতে পারে। তবে এই পথ থেকে সিইসির বেরিয়ে আসার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সে সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। নইলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে এবং ভবিষ্যতে মানুষ আপনাদের দেখলে ঘৃণায় নাক সিটকাবে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/248928