৩১ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:০৩

হাটভর্তি গরু বিক্রি কম

আজ থেকে জমে উঠবে বেচাকেনা * সব হাটেই আসছে ভারতীয় গরু

রাজধানীর হাটগুলো পশুতে ভরে উঠেছে। তবে এখনও পর্যন্ত পুরোদমে শুরু হয়নি বেচাকেনা। আজ থেকে বিক্রি জমে ওঠার আশা করছেন ইজারাদার ও বিক্রেতারা। হাটগুলোতে দেশি ও ভারতীয় গরু মিলে পর্যাপ্ত পশুর সমাহার ঘটেছে। পশুর হাটের বর্তমান অবস্থা বলে দিচ্ছে, রাজধানীবাসী স্বাভাবিক দামে গরু কিনতে পারবেন। আর এতে বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। পশুর বর্তমান দামে বিক্রেতা, ক্রেতা ও ইজারাদার উভয়ই খুশি। তবে আজকের বিক্রি ও ভারতীয় গরু আসার ওপর দরদামের চিত্র মুহূর্তে বদলে যেতে পারে।

সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টায় কামরাঙ্গীরচর পশু হাটের আলীনগর খালপাড় প্রধান সড়কের দুই পাশেই বাঁধা রয়েছে সারি সারি গরু। ওই সড়কে নতুন করে সংস্কার কাজ হওয়ায় কোনো কাদা নেই। সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নভাবেই চলছে হাট। রয়েছে ছোট, মাঝারি থেকে বড় গরু। এ পশুহাটে ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোরের গরু বেশি। দেশি গরুর সমাগম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এ হাট বেশ পছন্দের। এই হাটে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন ফরিদপুরের বেপারি সাত্তার মাঝি। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৯টায় হাটে গরু এনেছেন কিন্তু একটাও বিক্রি করতে পারেননি। তবে আগ্রহী ক্রেতারা দামাদামি করছেন। কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, এবার এ হাটে ১২টি গরু এনেছেন। এলাকার লোকজন হাটে এসে দামাদামি করছেন। কিন্তু কেউ কিনছেন না। আশা করছি, বাকি দু’দিনে গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।

এছাড়া শনির আখড়া ও কমলাপুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সে াতের মতো একের পর এক গরুবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ক্রেতার আনাগোনা চোখে পড়েনি। বেপারিরাও উপযুক্ত ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন। ছোট আকৃতির দেশি ষাঁড় গরু দাম চাইছেন ৪০-৭০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা এবং বড় আকারের গরুর দাম ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চাইতে দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম গতবারের তুলনায় একটু বেশি। তবে বেপারিরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের দাবি, গরু লালন-পালন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে ক্রেতারা সে দামও বলছেন না।

শনির আখড়া হাটে গরু দেখতে এসেছিলেন রায়েরবাগের বাসিন্দা সেলিম সিকদার। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি জমাট বাঁধায় গরু নিয়ে রাখার জায়গা নেই। ঈদের আগের দিন কিনে নিয়ে যাব। দরদাম দেখতে এলাম। এবার গরুর দাম একটু বেশি চাচ্ছে। একই অবস্থা গোপীবাগ ও কমলাপুর হাটে। গরু নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বেপারিরা। হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুলতান মিয়া বলেন, এবার হাট ইজারার কাগজপত্র একটু দেরিতে পাওয়া গেছে। ২৮ আগস্ট রাতে ইজারার কপি হাতে আসে। এরপর থেকে বাঁশ লাগানো, বালু ভরাটসহ হাটের স্থাপনার নির্মাণের কাজ করা হয়। এখনও হাটের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি ঘণ্টায় হাটে গরুবোঝাই ট্রাক এলেও ক্রেতা কম। এর কারণ এ হাট থেকে সাধারণত মতিঝিল এলাকার বাসিন্দারা গরু কেনেন। এদের অনেকের গরু রাখা ও জবাই করার জায়গার সমস্যা আছে। তাই অনেকে ঈদের আগের দিন এমনকি ঈদের দিনও গরু কেনেন। চাঁদ রাত থেকে হাটে বেচাবিক্রি জমজমাট হবে বলে জানান তিনি।

কমলাপুর হাটের মূল ফটকের সামনে দেশীয় বিশাল আকৃতির ষাঁড় নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছিলেন কুষ্টিয়া থেকে আগত বেপারি ফকির চান। তিনি জানালেন, এবার হাটে ৫টি গরু নিয়ে এসেছেন। এগুলো নিজস্ব খামারে ১ বছর যাবৎ মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। ভারতীয় গরু প্রবেশ করছে- এ ভয়ে বাড়িতেই কয়েকটি গরু বিক্রি করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে ক্রেতারা সেই দামও বলছেন না। তার ওপর গরু নিয়ে ঢাকায় আসার সময় যানজটের কারণে অতি গরমে একটি গরু মারা গেছে। সে ক্ষতিও পোষানো যাবে না বলে মনে হয়।

মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন পশুর হাটে এবার প্রায় চার হাজার পশু উঠেছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গরু উঠেছে এ হাটে। ক্রেতাদের আনাগোনা এবং বিক্রিও শুরু হয়েছে। এ হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রিগান মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, আজ থেকে (বুধবার) আমরা এ হাটে কাজ শুরু করেছি। তবে কোনো অসুস্থ পশু পাইনি। তবে মঙ্গলবার এ হাটের একটি পশু মারা গেছে। সেটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।

উত্তরা পশুর হাটের বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। এ হাট ব্যবস্থাপনা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত উত্তরা কোরবানি পশুর হাটে ৩০ হাজারের বেশি গরু উঠেছে। সহনীয় দামে এ হাটে পশু বিক্রয় হচ্ছে।

এ হাটের ইজারাদার মেসার্স শফিক এ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উত্তরা হাটে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। তবে বিক্রি অনেক কম। আশা করছি, বৃহস্পতিবার বিক্রি জমে উঠবে।

গরুর দাম : রাজধানীর কোরবানি পশুর হাটগুলোতে বিভিন্ন দামের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ছোট আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪৫ থেকে ৫০-৫৫ হাজার টাকায়। মাঝারি আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৬৫ থেকে ৭৫-৮০ হাজার টাকায়। আর বড় আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৮৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। এর চেয়ে বেশি দামের বড় গরু পাওয়া যাচ্ছে। তিন লাখ, চার লাখ, পাঁচ লাখ টাকা দামের কিছু গরু রয়েছে বিভিন্ন হাটে। নগরীর বিভিন্ন হাটে এর চেয়েও বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে। যদিও ওইসব গরুর দাম এত বেশি নয় বলে পশু ব্যবসায়ীদের অভিমত। তবে হাটভেদে গরুর দামের ভিন্নতাও লক্ষ্য করা গেছে।

হাটে ভারতীয় গরু : রাজধানীর বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরু উঠতে শুরু করেছে। গাবতলী পশুর হাটে প্রচুর ভারতীয় গরু উঠেছে। এর বাইরে বছিলা, হাজারীবাগ, রহমতগঞ্জ, কমলাপুর, উত্তরা হাটেও অনেক ভারতীয় গরু উঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ট্রাকভর্তি ভারতীয় গরু দেখতে পাওয়া গেছে।

লালবাগ হাটের পশু ব্যবসায়ী জাবেদ আলী যুগান্তরকে বলেন, সারা বছর কত কষ্ট করে গরু লালন-পালন করেছি। আশায় বুক বেঁধে আছি কোরবানির হাটে এ পশু বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করব। যেভাবে ভারতীয় গরু আসতে শুরু করেছে, আমরা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছি।

গাবতলী হাটের পশু বিক্রেতা ঝিনাইদহের ইমরান হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ব্যবসায়িক কারণে ভারত থেকে গরু এনেছি। এতে কোরবানি হাটে পশুর দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মানুষ সাধ্যের মধ্যে পশু কিনতে পারবে। এখন বাজারের যে অবস্থা, তাতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। মানুষ কম দামে পশু কিনতে পারবেন।

কিভাবে চিনবেন সুস্থ গরু : প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রচারণাপত্রে বলা হয়েছে, সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা ভেজা এবং চকচকে হবে। পিঠের কুঁজ মোটা ও টানটান হবে। সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে। স্বাভাবিক চাঞ্চল্য থাকবে এবং জাবর কাটবে। মুখের সামনে খাবার ধরলে নিজ থেকে জিভ টেনে খাবার খাবে। শরীরের চামড়া টান, পশম মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে। চামড়া টান দিয়ে ছেড়ে দিলে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

কিভাবে চিনবেন দেশি গরু : পশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি পশুর মূল বৈশিষ্ট্য ছোট ও মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। এছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশিপশু এক রঙের হয়ে থাকে। পা চিকন হয়, শিং বড় হয়। এসব চিহ্ন ছাড়াও পশু বিষয়ে অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে কোরবানিতে দেশি গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা মন্টু যুগান্তরকে বলেন, দেশি গরু চেনা খুব সহজ। আকার-আকৃতি ছোট। পা চিকন হয়, শিং বড় হয়। বিদেশি গরুর মতো বিশালাকৃতির হয় না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আজমত আলী যুগান্তরকে বলেন, দেশি গরুর আকার-আকৃতি ছোট ও মাঝারি গঠনের হয়। পা চিকন হয়, শিং লম্বা হয়, গরুর রং একই ধরনের হয়ে থাকে। আর দেশি গরু জবাইয়ের পর চর্বির রং হয় হলুদ, বিদেশি জাতের গরুর চর্বির রং হয় সাদা।

নির্ধারিত সীমানার বাইরে হাট : রাজধানীর কোরবানি পশুর হাটগুলো বেঁধে দেয়া সীমানা মানছে না। বছিলা কোরবানি পশুর হাট নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে সড়ক দখল করেছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলির সড়কে পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। গাবতলী পশুর হাট নির্ধারিত সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকার খালি জায়গা দখল করেছে। বেড়িবাঁধ সড়কের একাংশও কোরবানি পশুর দখলে চলে গেছে। বাবুবাজার, কমলাপুর, শ্যামপুর, হাজারীবাগ এলাকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক, ফুটপাত ও অলিগলি পশুর দখলে চলে গেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটগুলো নির্ধারিত সীমানারা বাইরে হাট বসানোর খবর শুনেছেন। এসব নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট নির্ধারিত সীমানার বাইরে স্থাপন করার খবর তার জানা নেই। তবে হয়ে থাকলে সেসব উঠিয়ে দেয়া হবে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/08/31/152480