৩১ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:৩৪

ফুটপাথে ভাঙাগড়া দুর্ভোগ চরমে

বছরজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাথগুলো হকারদের দখলে থাকে। এ নিয়ে অতিষ্ঠ নগরবাসীর কথা চিন্তা করে চলতি বছর ফুটপাথ থেকে ক্ষুদে ব্যবসায়ী উচ্ছেদ করা হয়। একপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় সন্ধ্যার পর হকাররা বসতে পারবেন। তবে এর মাঝেও কেউ কেউ ফুটপাথ দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে একাধিকবার নানা প্রশ্ন উঠলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তবে হালে নতুন করে আরেক সমস্যা যোগ হয়েছে শহরে। মেরামতের নাম করে চলছে ‘ফুটপাথ ভাঙাগড়া’। বিশেষ করে রাজধানীর ভিআইপি সড়কগুলোর ফুটপাথে হাঁটতে গেলে এমন চিত্রেরই দেখা মিলবে। বছরজুড়েই চলছে নতুন প্লেট তথা টালি সংস্কারের কাজ। সরজমিনে দেখা গেছে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পেছন দিকের ভিআইপি সড়কটির ফুটপাথে কোথাও কাজ চলছে আবার কোথাও পুরনো প্লেটগুলো সরিয়ে থমকে আছে কার্যক্রম। এর ফলে ওই ফুটপাথটিতে চলাচল করা পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে ফুটপাথে না হাঁটতে পেরে হাঁটছেন মূল সড়কে।

সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলামটর হয়ে পরীবাগ-শাহবাগ এলাকায় যাওয়ার এ রাস্তাটিতে দেখা গেছে পুরনো প্লেটগুলো উঠিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে বৃষ্টি এলেই পানি জমে ফুটপাথটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। পাঁচতারকা ওই হোটেলটি পার হয়ে আরেকটু সামনে এগুলেই দেখা যাবে কিছু দূর পর পর একেকটি ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা। যেগুলো মেরামত করার কথা থাকলেও হচ্ছে না অতি শিগগির। শুধু তাই নয়, মেরামত না হওয়া এ ফুটপাথটির ওপর কিছু নতুন প্লেট এনে জমা করায় পথচারীদের হাঁটাচলায়ও বিঘ্ন ঘটছে। কিছুদূর হাঁটলে দেখা যায় ওই সড়কের ফুটপাথ মেরামতের জন্য আনা বালিও ফেলে রাখা হয়েছে। তার পাশে আবার একাধিক গর্ত করে রাখা হয়েছে। বাংলামটরের আগের হাতিরঝিল প্রকল্পের অভিমুখে বসে থাকা বেশ কয়েকজন শরবত ও পান বিক্রেতা জানান, মাঝে মাঝে অনেক পথচারী খেয়াল না করে ওই খোলা গর্তে পড়ে যান। অনেকের আহতের ঘটনাও ঘটেছে সে জায়গাটিতে। মেরামতের নাম করে ওই ফুটপাথটি অগোছালো অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই এলাকার পথচারীরা। এ প্রসঙ্গে শফিউল নামের এক পথচারী বলেন, আমি প্রায়ই এ পথ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত হেঁটে যাই। ফুটপাথটির এমন অবস্থা যে কোথাও ঢাকনা খোলা ম্যানহোল আবার কোথাও প্লেট বসানো নেই। বরং পুরনো প্লেটগুলো উঠিয়ে রাখা হয়েছে। চলাচলে তো এমনিই কষ্ট তার ওপর বৃষ্টি হলে হাঁটতে হয় মূল রাস্তায়। মাঝে মাঝে আতঙ্কে থাকি কখন বাস এসে ধাক্কা দেয়। সীমা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাসা এখানেই। এই রাস্তা দিয়েই কলেজে যাই। একদিন আমার আরেক বান্ধবী ফুটপাথের এই খোলা ম্যানহোলে পড়ে যায়। পরে লোকজন এসে তাকে উঠিয়ে নেয়। এমন অনেকেরই চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে এই ফুটপাথে।

বাংলামটর মোড় অতিক্রম করে কিছু সামনে এগুলে দেখা যায়, কয়েকজন লোক পরীবাগের কাছাকাছি ওই ফুটপাথটি মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে বসানো হচ্ছে নতুন প্লেট। তবে এখানেও কাজ নিয়ে প্রশ্ন দেখা গেছে। যে প্লেটগুলো বসানো হচ্ছে তার নিচে শুধু বালু ও সামান্য পরিমাণ সিমেন্ট মেশানোর পর কোনোভাবে বিট দেয়ার কাজ সম্পন্ন করছে। প্লেট সংস্কারের কাজে নিয়জিত দুলাল নামের এক রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ফুটপাথটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের নাম জামিল। এই প্লেটগুলো এভাবেই বসানোর নিয়ম। কতদিন স্থায়ীত্ব সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একেকটি প্লেটের দাম ৩৫ টাকা করেও বলে জানান ওই মিস্ত্রী। দুলাল জানান, ফুটপাথের জন্য বসানো প্লেটগুলো একাধারে পরীবাগ থেকে বাংলামটর পর্যন্ত লাগানোর দায়িত্ব তার। এর মধ্যে বেশ কিছুটা পথের কাজ শেষ করেছেন। এই অবস্থায় থাকলে কমপক্ষে পাঁচ বছরের মধ্যে কিছু হবে না। তবে মেরামতের জন্য আবার যদি খুঁড়াখুঁড়ি করা হয় তাহলে আবারো নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে পরীবাগের আরেকটি অংশে অর্থাৎ ফুটওভার ব্রিজের নিচের অংশটিতে দেখা গেছে সেখানে মেরামত তো হয়নি বরং ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে ফুটপাথটি। ওই এলাকাটি ঘুরে আসার পর রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকার প্রজাপতি গুহার আগের অংশের ফুটপাথটির অবস্থাও নাজেহাল দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে স্থাপন করা ইটগুলো ভেঙে একাকার হয়ে আছে। বর্ষার দিনে সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাফর আহমদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এড়িয়ে যান। মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই। সিভিল ডিভিশনে কথা বলতে পারেন। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=81083