৩১ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:৩৪

পোশাক শ্রমিকদের নির্ঘুম রাত

তিন থেকে পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া। ভাড়া দিতে না পারায় অনেককে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। দোকান ও মেস আর বাকিতে খাবার দিচ্ছে না। দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। এদিকে ঈদুল আজহাও ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় দিশাহারা শ্রমিকরা গত সোমবার সকালে বাধ্য হয়ে বেতনের দাবিতে রাজধানীর কাওরানবাজারে আসে। পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কিন্তু দিন পেরিয়ে রাত নামলেও মালিক বা বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে কোনো সমাধান মিলেনি। অগত্যা রাস্তায় দাঁড়িয়ে-বসে সোমবার রাত পোহাতে হয়েছে শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিককে। গতকাল দুপুরে অমানবিক পরিস্থিতিতে রাত যাপনের কথা জানালেন গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের এডর্ন কিন্ট ওয়্যার লিমিটেডের শতাধিক শ্রমিক ও নারী শ্রমিকরা। ওই প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি ইনচার্জ মো. শরীফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই আমি কাজ করে আসছি। গত এপ্রিলে অর্ধেক বেতন দেয়। স্টাফদেরকে পরের চার মাসের বেতনও দেয়া হয়নি। তখন থেকে বাসাভাড়া দিতে না পারায় এক সপ্তাহ আগে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে মালিক। দোকানে আর খাবারও বাকিতে দিচ্ছে না। খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি। ঈদ তো দূরের কথা। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদেরও করুণ দশা। প্রতিষ্ঠানটির হেলপার শারমিন ও শিমু এবং অপারেটর সানজিদা আক্তার ও রিমু বলেন, আমরা সোমবার থেকে আসলেও মালিক এবং বিজিএমইএ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। গাড়ি ভাড়া না থাকায় বাসায় ফিরতে পারিনি। সারা রাতসহ দু’দিন ধরে রাস্তায় বসে থেকে ও দাঁড়িয়ে সময় পার করছি। খেয়ে-না খেয়ে আছি। জানা যায়, গাজীপুর সদরের কাশিমপুরের সারাবো এলাকার মামুন নগরের প্রতিষ্ঠানটি গত ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে। রেজাউল করিম চৌধুরীসহ তিনজনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস যেতেই স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রাখতে শুরু করে। এখন তাদের বকেয়া ৫ মাসে গিয়ে ঠেকেছে। অন্যদিকে ওয়ার্কারদের বেতন বকেয়া রয়েছে ৩ মাস ধরে। তারিখের পর তারিখ দিলেও বেতন দেয়া হয়নি। বহুবার ঘুরিয়েছে। শেষে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ এখন বেতনের দাবিতে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে রাত পার করছে। একইভাবে বেতন-বোনাসের দাবিতে প্রতি সপ্তাহেই কোনো কোনো পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিজিএমইএ’র সামনে এসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। স্বত্বাধিকারীদের একজন রেজাউল করিম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়নসহ শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের কথা ছিল ৩০শে আগস্ট বকেয়া বেতন দেয়া হবে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের তো অভাব নেই। অন্য সংগঠন এর দু’দিন আগেই শ্রমিকদেরকে বিজিএমইএ’র সামনে এনে বসিয়ে রাখে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সহযোগিতা করছি বলেই তো বেতন দেয়ার জন্য একটা দিন নির্ধারণ করেছি।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার বলেন, এখনও টাকা দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়নি মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনের দাবিতে এসে অমানবিক পরিস্থিতিতে রাস্তায় নির্ঘুম রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ বস্ত্র পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মরিয়ম আক্তার বলেন, স্টাফদের ৫ মাসের এবং ওয়ার্কারদের ৩ মাসের বকেয়া বেতনের জন্য শ্রমিকরা এসেছে। বারবার অনুরোধেও সোমবার রাতে নারীদেরকে বাথরুম ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে পারিনি। পানির জন্যও ভেতরে যেতে দেয়নি। শ্রমিকদের ঘামের পয়সা চুষে মালিক অট্টালিকার পর অট্টালিক তৈরি করলেও তাদের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতা দেখায়নি। এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেয়া যায় না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=81074