৩১ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:২৩

মন্ত্রীর পরিদর্শনের পরই শিডিউল বিপর্যয়ে যমুনা

ঈদে ট্রেনে ঘরমুখো যাত্রীদের যাত্রা কেমন হচ্ছে তা দেখতে গতকাল রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করতে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, এবার ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা নেই।।
মন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেয়ার পরই মংমনসিংহ-তারাকান্দি রুটে চলাচলকারী যমুনা এক্সপ্রেস বিকেলে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সন্ধ্যায়ও স্টেশন ত্যাগ করতে পারেনি। স্টেশন মাস্টার যমুনা বিলম্ব হওয়ার কারণ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কাছে ওয়াকিটকিতে জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে যমুনা ছাড়বে।

এ দিকে যমুনা ট্রেন বিলম্ব হওয়ার কারণে ওই ট্রেনের ভেতরে গাদাগাদি করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ ও শিশুরা গরমে অস্থির হচ্ছিলেন। এ সময় কেউ কেউ ট্রেনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশে রাগ ঝাড়ছিলেন। কেন এত দেরি? এর আগে সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ৩১টি ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরমধ্যে দু-একটি ট্রেনের সময় কিছুটা এদিক-সেদিক ছাড়া সবই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশন সরেজমিন পরিদর্শনে যান রেলপথমন্ত্রী। তিনি ট্রেনের জানালার পাশে বসা ছোট-বড় যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এ ছাড়া ট্রেনে উঠতে যেন যাত্রীদের কোনো ধরনের কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। ট্রেনের ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মন্ত্রী।

এরপর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এবার ঈদে রেল প্রতিদিন দুই লাখ ৭০ হাজার যাত্রী বহন করছে। আরামদায়ক ও নিরাপদ বাহন হওয়ায় ট্রেনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩০টির মতো ট্রেন ছেড়েছে। তারমধ্যে দু-একটি ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন, রেলপথমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কিবরিয়াসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল থেকে সন্ধ্যায় কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, এ দিন সময় যত বাড়ছিল ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ ততই বাড়ছিল। স্টেশনের ৭ নম্বর প্লাটফরম থেকে ৭ মিনিট বিলম্বে আখাওড়াগামী তিতাস কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যায়। ৪ নম্বর প্লাটফরম থেকে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ছাড়ার অপেক্ষায় থাকে। ২ নম্বর প্লাটফরমে দাঁড়ানো যমুনা এক্সপ্রেস বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সময় নির্ধারণ থাকলেও সেটি সন্ধ্যা ৬টায়ও ছেড়ে যেতে পারেনি। যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউল দেড় ঘণ্টা বিপর্যয় দেখে অন্যান্য ট্রেনের যাত্রীরাও শিডিউল বিপর্যয় আতঙ্কে পড়ে যান। একজন স্টেশন মাস্টারের রুমে এসে জানতে চান, দ্রুতযান কি রাইট টাইম ছাড়বে? জবাবে স্টেশন মাস্টার বলেন, এখন পর্যন্ত রাইট টাইমেই ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষমাণ যাত্রী আ: সাত্তার বলেন, ট্রেনটি ৪টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা। কিন্তু দেড় ঘণ্টায়ও ছাড়ছে না। এখন কী সমস্যা হয়েছে তা তো আর বলছে না। শুধু বলছে ছাড়বে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্টেশনে আসার পর ট্রেন না ছাড়লে তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। অপর এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রী এসে বলছেন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই। কিন্তু মন্ত্রী বলে যাওয়ার পরই দেখছি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। এসব তথ্য কি মন্ত্রীকে জানানো হয়?
এ প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার শাহ চন্দ্র বাবু গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি এই মাত্র এলাম। তবে যমুনা ছাড়া সব ট্রেনই যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। ওয়াশফিট থেকে ট্রেনটি স্টেশনের লাইনে আসতে বিলম্ব হওয়ায় ছাড়তে দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/248340