নির্যাতনে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক বৃদ্ধ মায়ের কান্না
৩১ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:১৮

জ্বলছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর চলছে গণহত্যা ধর্ষণ

হেলিকপ্টার থেকে মর্টার শেল ও মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ : নাফ নদী থেকে ৪৭৫ রোহিঙ্গাকে ফেরত

ক’দিন আগে অমুসলমান নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পর মিয়ানমার সরকারের সৈন্যরা আরো হিংস্ররূপ ধারণ করে ছড়িয়ে পড়েছে আরাকান রাজ্যজুড়ে। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে শত শত রাউন্ড মর্টার শেল ও গুলি বর্ষণ করছে। নিহতদের শোকে বাকরুদ্ধ আত্মীয়স্বজন। চার দিকে শুধু কান্নার রোল। স্বজনের লাশ পেছনে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে মানুষ। আবার পালাতে চেষ্টা করা হলে পেছন থেকে করা হচ্ছে গুলি। যারা গোলাগুলির শিকার হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গত বৃহস্পতিবার থেকেই অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হিং¯্র থেকে আরো হিং¯্র হয়ে উঠেছে। খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। দিনে ও রাতে হেলিকপ্টার থেকে মর্টার, বোমা হামলা ও মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণের শব্দে মূর্ছা যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু। যেন পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকানে। কথিত উগ্রপন্থা দমনের নামে বোমা ও মর্টার হামলা করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য দাবি করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরাকানের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার তরুণদের। প্রতিনিয়ত আরাকানের আকাশে উড়ে আসা হেলিকপ্টার থেকে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে। শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ও শিশুর কান্নার আওয়াজ।

বৃহস্পতিবার থেকে দিন-রাত থেমে থেমে গুলির আওয়াজ এবং ওপারের অনেক এলাকায় ধোঁয়ার কু লী আতঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর ফলে মিয়ানমার-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টে বাড়ছে রোহিঙ্গা আশ্রায় প্রার্থীর সংখ্যা।
রোহিঙ্গারা বলছেন, যুদ্ধ নয়, গণহত্যার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে সে দেশের সরকারি বাহিনী। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ও রাখাইন সম্প্রদায়। এইসব বাহিনী এবারে পাইকারিভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করে রাখাইন রাজ্য মুসলিম শূন্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের আহ্বানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাজার বছরের রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাসকে ধুলোয় মুছে দিতে গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী কাজ করছে। ফলে মিয়ানমারের সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনে থেকে বাদ পড়ছে না মায়ের কোলের শিশুরা পর্যন্ত। মায়ের কোল থেকে শিশুদের ছুড়ে ফেলছে জ্বলন্ত আগুনে। পদদলিত করে দুই দিনের শিশু খুন করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না তারা। নারী ধর্ষণ করছে গণহারে। এই সব রোহিঙ্গার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দিন দিন উঁবে যাচ্ছে। নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ, লুণ্ঠনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে সহায়-সম্পত্তি ফেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদীর পাড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশু জড়ো হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। আকাশের নিচে মাটির বিছানায় অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষ নিরুপায় হয়ে চেয়ে আছে একটু সহায়তা পাওয়ার আশায়। কোনো মা সন্তান হারিয়ে, কোনো সন্তান মা হারিয়ে অঝোরে কাঁদছে। মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে কোলের শিশুরা সারাক্ষণ কাঁদছে। এ অবস্থায় মায়েরা অসহায় হয়ে পড়েছে। ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে মাতৃত্ব। বয়োবৃদ্ধদের চোখেমুখে চরম হতাশার চিহ্ন। তাদের ছেলে, মেয়ে ও নাতি-নাতনীর চিন্তায় গাল বেয়ে অশ্রু পড়ছে। অনেকের চোখের অশ্রু ফুরিয়ে গেছে। তাই শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে কোনো এক দিকে। একটু আশ্রয় কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দেবে না? উভয় সঙ্কটে পড়েছে তারা। নিজ দেশ মিয়ানমারের বাহিনীর নিপীড়ন ও সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিজিবির বাধা। জিরো পয়েন্টে খোলা আকাশের নিচেই তাদের আশ্রয়স্থল।
রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়ার উত্তরপাড়ার আহমদ হোসেন মুঠোফোনে জানান, রোববার খুব ভোরে সেনাবাহিনীর একটি দল গ্রামে ঢুকে স্থানীয় জহির, করিম ও আব্দুর শুক্কুরকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা পালিয়ে পাশের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পরে ওই তিন তরুণের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে দেয়।
ঢেঁকিবনিয়া পূর্বপাড়ার আবছার কামাল জানান, সেনাবাহিনী সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে। যেসব বাড়িতে মানুষ পাচ্ছে না সেসব বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যাকে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
অপর দিকে রাথদং জেলার সোহাগপ্রাং রোহিঙ্গা পল্লীতে নারকীয় হত্যালীলা চালিয়েছে মিয়ানমারের বর্ববর বাহিনী। পুলিশ, লুন্টিং, সেনা ও বিজিপি সম্মিলিতভাবে এ বর্ববরতা চালিয়েছে। গতকাল সোমবার রাতের শেষ ভাগে এ নৃশংসতা চালিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কয়েক শত সৈন্য গ্রামটি ঘেরাও করে চিরুনি অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা পুরুষদের আটক করে। আটককৃত পুরুষদের দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে গণহত্যা চালায়। রোহিঙ্গা নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে গ্রামের একটি স্কুলঘরে গণধর্ষণ করেছে। উঠতি বয়সের কন্যাশিশুও রক্ষা পায়নি সেনাদের ধর্ষণ থেকে। অনেকেই ধর্ষণে বাধা দেয়ায় তাদের হত্যা করা হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, হত্যার পর গাড়িতে তুলে অনেক লাশ নিয়ে গেছে। তবে বেশ কিছু লাশ এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। এই সময় এই সব রোহিঙ্গাপল্লীতে অগ্নিসংযোগ করে। ফলে পুড়ে মরেছে গবাদিপশুও। গ্রামটি এখন জনশূন্য ও নিঃস্তব্ধ। এরপর আশপাশের সব রোহিঙ্গা পল্লী ঘিরে রেখেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। আরাকানের প্রত্যেক মুসলিম পল্লীতে নিধনযজ্ঞ চালানোর জন্য ইতোমধ্যে অমুসলিমদের সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। এইভাবে বর্বরতা চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো আরাকান রোহিঙ্গাশূন্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ দিকে টেকনাফের নাফ নদীর নৌসীমা অতিক্রম করার সময় ৪৭৫ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) সদস্যরা। রাতে নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত পাঠানো এসব রোহিঙ্গার মধ্যে বেশির ভাগ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। টেকনাফের বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রাতে পৃথক অভিযানে ৪৭৫ জন রোহিঙ্গাকে নৌসীমা অতিক্রম করার সময় প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গত ৫ দিনে ১০১৬ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাটিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
সেন্টমার্টিন নৌপথে বিজিপির তল্লাশি
এ দিকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী ট্রলারগুলোতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি তল্লাশি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা। জেলেরা আরো জানান, নাফ নদীতে বিজিপি টহল জোরদার করেছে। এতে স্থানীয় বাংলাদেশী জেলে ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহমদ জানান, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংস ঘটনান পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ নৌপথে চলাচলকারী ট্রলারগুলোতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি তল্লাশি করছে। মিয়ানমার বাহিনী সে দেশের উপকূলে অবস্থান করে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অভিমুখে ট্রলার দেখলে দ্রুত স্পিডবোট নিয়ে ধাওয়া করে থামিয়ে তল্লাশি চালায়। তিনি আরো জানান, নাফ নদীতে বিজিপি টহল জোরদার করেছে। রাত-দিন মিয়ানমারের সীমান্তে স্পিডবোট এবং ট্রলার নিয়ে টহল দেয়। টেকনাফ- সেন্টমার্টিন দ্বীপ নৌপথে চলাচলকারী ১৮টি যাত্রীবাহী ট্রলার রয়েছে। ট্রলারগুলো প্রতিদিনই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল করে। মাঝ পথে বিজিপির তল্লাশির কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এস এম আরিফুর ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি সীমান্ত এলাকার মানুষের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার সকালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৪০ সদস্যের একটি দল ঘুমধুম সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া হয়ে তুমব্রু দিকে মহড়া দেয়। এ সময় তারা গুলিও বর্ষণ করে বলে নিশ্চিত করেন তুমব্রু উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক।
তিনি জানান, এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় স্কুল ছুটি দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর একবার হেলিকপ্টার মহড়া দেখা যায়। রোববারও দুইবার মিয়ানমারের আকাশে হেলিকপ্টার দেখা যায়। সরেজমিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ দিকে রোববার বসতবাড়িতে গুলি লাগার ঘটনার দ্বিতীয় দিন ধামনখালী সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে, বাড়িটির বারান্দার মাটির তৈরির দেয়ালে চারটি স্থানে নতুন করে লেপন করে দেয়ার চিহ্ন।
গৃহকর্তা ছৈয়দুল হকের ছেলে ফিরোজ মিয়া (৪৫) দাবি করেন, ‘এসব চিহ্ন গত শনিবার বিকেলে ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবুনিয়ার দিক থেকে ছোড়া গুলি লাগার। গুলিগুলো দেয়াল ভেদ করে বের হতে পারেনি। গুলি লাগার কারণে মাটি খসে পড়া দেয়ালের চারটি স্থানে নতুন করে লেপন করা হয়েছে।’
গুলিগুলো এখনো দেয়ালের ভেতরে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মিয়ানমার দিক থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের ২ নাগরিকের বাড়িতে আঘাত লাগার বিষয়টি শুনেননি বলে জানান লে. কর্নেল মঞ্জুরুল।
রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির সীমান্তে কড়া অবস্থানে থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। বিজিবি টহল জোরদার করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবির সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।’
এ দিকে রোববার বিকেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে কেউ যদি সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ক্রস করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, মিয়ানমারে সহিংসতার ৫ম দিন রাতে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে আগুনের লেলিহান শিখা বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

উখিয়া সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে দিয়ে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। ওই এলাকার জিরো পয়েন্টে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটকা পড়েছে। সীমান্তে জড়ো হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করতে মিয়ানমার বিজিপি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গুলি ছুড়েছে এবং বিজিপির ছোড়া তিনটি গুলি তুমব্রু বাজারে এসে পড়েছে। তবে কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। দিশেহারা রোহিঙ্গাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বিজিবি সীমান্তে কড়া পাহারায় রয়েছে এবং অতিরিক্ত টহল জোরদার করেছে।

প্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পুুরুষদের ধরে গুলি করে হত্যা করছে। মহিলাদের নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা আতঙ্কে পাহাড়, ধানক্ষেতে ও বনজঙ্গলে লুকিয়ে আছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু বিজিবি বাধা দেয়ায় কেউ ঢুকতে পারছে না। তারা রাতে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান। পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়ার দিল মোহাম্মদ ও মিনারা বেগম জানান, সেনাবাহিনীরা গ্রামে ঢুকে অত্যাচার করছে। পুরুষদের ধরে নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে, ফলে বাড়ছে উৎকণ্ঠাও।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/248228