৩০ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ৯:৪৬

‘ভ্যানিশিং ইন বাংলাদেশ’

মঈনুল আলম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলোর অন্যতম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর আন্তর্জাতিক সংস্করণের ৫-৬ আগস্ট ২০১৭ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশ সরকারকে ‘সততার সাথে জনগণ, বিশ্ব জনমত এবং সত্যের সম্মুখীন হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে।

সম্পাদকীয়টির শিরোনাম হচ্ছে : ÒVanising In Bangladesh” (বাংলাদেশে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া)। সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্যকে এমনভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে তিনি তৃপ্তিবোধ করতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রভাবশালী সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে ইতঃপূর্বে বাংলাদেশের আর কোনো মন্ত্রীর বক্তব্য এমন গুরুত্ব দিয়ে হুবহু উদ্ধৃত করা হয়নি। এর মাধ্যমে বিশ্বমিডিয়ায় তিনি যে পরিচিতি লাভ করলেন, তা অবশ্যই একটি কৃতিত্ব বটে।
সম্পাদকীয়টির হুবহু বাংলা অনুবাদ দেয়া হলো :

ভ্যানিশিং ইন বাংলাদেশ
(বাংলাদেশে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া)

‘আট বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে ৩২০ এর অধিক মানুষকে হয় বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে অথবা অদৃশ্য করা হয়েছে, ঢাকায় মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এ দাবি করেছে। এদেরকে তাদের গৃহ থেকে অথবা রাস্তা থেকে সাদা পোশাক পরিহিত বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন অথবা ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা ব্যুরোর সদস্যরা তুলে নিয়েছে। যাদের তুলে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে সন্দেহভুক্ত অপরাধী এবং ইসলামি জঙ্গিদের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন।

‘অধিকার’-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছর যে ৯০ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে তাদের মধ্যে ২১ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে, যার মধ্যে আছেন মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি জামায়াতে ইসলামী নামীয় বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন আইনবিদ। যে ব্যক্তিরা গত বছরের আগস্টে তার গৃহ থেকে তার স্ত্রী, ভগ্নি ও দুই কন্যার চোখের সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়; তারা তাদের পরিচয় বলতে অস্বীকৃতি জানায়। আহমদ বিন কাসেমের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এসব কার্যকলাপে আশঙ্কিত হয়ে জাতিসঙ্ঘ ফেব্র“য়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় দেশে মানুষ গুম করা বন্ধ করতে বাংলাদেশকে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। কিন্তু গুম হওয়ার হার ক্রমাগত দ্রুততর হচ্ছে বলে প্রতিভাত হয়। শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যুত্তরে এসব অভিযোগ যারা করছেন, তাদেরই নিন্দা করছেন, যাতে প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশের আইনের প্রতি অবজ্ঞা এমন এক সময় যখন সন্ত্রাসবাদকে প্রতিরোধ করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এসব গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনার ওপর ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ যখন জুলাইয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান প্রত্যুত্তরে অবজ্ঞাপূর্ণ ঘৃণা প্রকাশ করে বললেন, ‘এই সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে নিন্দা অভিযান শুরু করেছে।’

মি. খান বলেন, ‘কাকে আপনারা নিখোঁজ বলবেন?’ নিখোঁজ ব্যক্তিদের প্রিয়জনদের মনের ব্যথা আহত করে তিনি বলেন, ‘এ দেশে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছে। আর কিছু ব্যক্তি বিবাহের বাইরে স্ত্রীলোকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পর অদৃশ্য হয়ে গেছে।’

‘মি. খান অবজ্ঞাভরে প্রতিবেদনটিকে উড়িয়ে দিলেন এই মিথ্যা কথা বলে যে ‘জাতিসঙ্ঘ এ ধরনের কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।’

যদি মি. খান জাতিসঙ্ঘকে সম্মান করেন, তার উচিত হবে এই সংস্থার মানবাধিকার শাখার প্রধান জায়েদ বাআদ আল-হোসেনকে আমন্ত্রণ জানানো একটি তদন্ত পরিচালনার জন্য। একমাত্র তখনই বাংলাদেশ সরকার সততার সাথে তার জনগণ, বিশ্বজনমত এবং সত্যের সম্মুখীন হতে পারবে।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/248310