২৯ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৫১

বন্যায় সড়ক-মহাসড়কের ক্ষতি ২৭০ কোটি টাকা

রাস্তা মেরামতে টাকা চেয়ে চিঠি দিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ * ৮৩ কোটি টাকা ছাড় করেছে সওজ

এবারের বন্যায় সড়ক ও মহাসড়কের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীন এসব সড়ক-মহাসড়কের (সওজ) মধ্যে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী জোনের আওতাভুক্ত জেলাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জোনে ক্ষতি হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে কোন সড়কের কোন কোন স্থানে কী ক্ষতি হয়েছে, এর আর্থিক পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে সওজের প্রকৌশলীদের পাঠানো তথ্য থেকে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব পাওয়া গেছে।

একাধিক প্রকৌশলী জানান, রাস্তা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে সড়ক সংস্কারে এ পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের কাছে আর্থিক প্রয়োজনীয়তার বিষয় উল্লেখ করে চিঠি দিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এদিকে সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখন পর্যন্ত ৮টি জেলার ১৫টি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি পয়েন্ট ওয়াশ আউট বা স্রোতে ভেসে গেছে। এসব কারণে কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ছোট গাড়ি চলছে। সড়ক আরও নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সড়কের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বন্যায় সড়কের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব করা হচ্ছে। এখনও ওই হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সুতরাং সড়ক মেরামতে আর্থিক সংকট হবে না। তিনি বলেন, যেসব পয়েন্টে সড়ক ওয়াশ আউট হয়ে গিয়েছিল, তার বেশিরভাগই মেরামত করা হয়েছে। কিছু পয়েন্ট এখনও বাকি আছে। এ ছাড়া সড়ক মেরামতের কাজ দ্রুত চলছে। আশা করছি, এবার ঈদে যাত্রীরা স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা করতে পারবেন।

সূত্র জানায়, দেশে ৬৪টি জেলাকে ১০টি জোনে ভাগ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সওজ। এর মধ্যে ৭টি জোনের অধীনস্থ সড়কের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, রাজশাহী জোনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, রংপুর জোনে ৭১ কোটি ৪২ লাখ ও ঢাকা জোনে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জোনে ১৯ কোটি ৮৮ লাখ, খুলনা ৬ কোটি ৫ লাখ, সিলেট ৩২ কোটি ও গোপালগঞ্জ জোনে ৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বাকি তিনটি জোন থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। সেগুলো হচ্ছে : কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ৭টি জোনের অধীনে ৩৩টি জেলার সড়কের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে উপরোক্ত টাকার পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হল : সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ভোলা, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যেন দুর্ভোগ না হয় সেজন্য যে করেই হোক রাস্তা মেরামতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব রাস্তা মেরামতে যত টাকা দরকার তার কিছু অংশ ছাড় করা হয়েছে। এই টাকায় রাস্তা টেকসই সংস্কার কোনোভাবে সম্ভব নয়। ফলে দায়সারাভাবে ইট-সুরকি দিয়ে সংস্কার করছি। তিনি বলেন, বন্যার পাশাপাশি অতিবৃষ্টিতেও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ির চাকা ঘোরার সঙ্গে গর্তের আকারও বড় হচ্ছে। এগুলো পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জানা গেছে, দিনাজপুর জেলার ১৫টি সড়কে একশ’ কিলোমিটারের বেশি সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী। একইভাবে মানিকগঞ্জ জেলার ৮টি সড়ক মেরামতে প্রয়োজন ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া জামালপুরের ৭টি সড়ক মেরামতে ৯ কোটি ৫ লাখ, শেরপুর ২ কোটি ৩৬ লাখ, যশোর ৬ কোটি ৫ লাখ, ফরিদপুর ৩৪ কোটি, মাদারীপুর ১৬ কোটি, গোপালগঞ্জ ২০ কোটি ও রংপুর ১২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। একইভাবে অন্য জেলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের নাম, স্থান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩৯ জেলার এক হাজার ১৭৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত এসব জেলা থেকেই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ সড়ক ভবনে পাঠিয়েছেন কর্তব্যরত প্রকৌশলীরা। ঈদের আগে সড়কে যান চলাচলের উপযোগী রাখতে গত সপ্তাহে ৬৪টি জেলায় ৮৩ কোটি টাকা অর্থ ছাড় করেছে সওজ। এর মধ্যে ২১ কোটি টাকা বিভাগীয় মেরামত (রুটিন) ও ৬২ কোটি টাকা মাইনর মেনটেনেন্স খাতে ব্যয় করার জন্য বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরে সড়ক ও মহাসড়ক খাতে বাজেট রয়েছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই বরাদ্দ থেকে এই প্রথম ৮৩ কোটি ছাড় করা হল। তারা আরও জানান, ঈদের আগে সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দ্রুততার সঙ্গে সড়ক মেরামত কাজ চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই সড়ক মেরামতের কাজ পরিদর্শন করছেন।

এখনও ৮টি জেলার ১৫টি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি : শনিবারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮টি জেলার ১৫টি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নামার পর এসব রাস্তা মেরামত করা হবে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের চারটি রাস্তা ওয়াশ আউট হয়েছে। এর তিনটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সড়কে যান চলাচলের উপযোগী করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে আমতলী সীমান্ত পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন অংশ ওয়াশ আউট হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নওগাঁর আত্রাই-সিংড়া ও নওগাঁ-নাটোর সড়কের পানি নামার পর মেরামত করা হবে। একইভাবে নাটোরের সিংড়া-চাটমোহর, কালীগঞ্জ-স্বরকুতিয়া বাজার ও তাড়াশ-গুরুদাসপুর সড়কে পানি থাকায় তা মেরামত করা যাচ্ছে না। গাজীপুরের মাস্টারবাড়ী-নুহাশপল্লী-মাওনা সড়কে পানি থাকায় ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সওজ। তবে ওই সড়কে ছোট যানবাহন সীমিত আকারে চলাচল করছে। মানিকগঞ্জের বানিয়াজুরী-হরিরামপুর ও শিবালয়-হরিরামপুর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগাঁও এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া-শাওনা সড়কে পানি রয়েছে। পানি নামার পর ওই সব সড়ক মেরামত করা হবে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/08/29/151909