রাজবাড়ী সদরের ধাওয়াপাড়া ঘাটের কাছে গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টায় কোরবানির গরুবোঝাই ট্রলার ডুবিতে ৪৬টি গরু মারা গেছে। এ সময় মাঝিরা গরুর গলার দড়ি কেটে দিলে ৮-১০টি গরু সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হয়। ওই ট্রলারটি কালুখালি উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের সাদারচর থেকে ছেড়ে পদ্মা নদী দিয়ে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। নদীতে তীব্র ¯্রােত থাকায় ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে বেপারীরা কিছু গরুর গলার দড়ি কেটে দিলেও গরুগুলো ভেসে ও ডুবে দূরে চলে যায়।
গুরুগুলো আরিচা থেকে ট্রাকে ঢাকার গাবতলীর হাটে নেয়ার কথা ছিল। দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি সঙ্কটের সমস্যা এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে কালুখালি ও পাংশার পাঁচজন গরুর বেপারী ধাওয়াপড়ার আবদুল জব্বার মাঝির বড় ট্রলারে কোরবানির গরুবোঝাই করে ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিল। তবে ওই ট্রলারের মাঝি-মাল্লাসহ গরুর বেপারীরা সবাই গরুর মায়া ছেড়ে সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন।
সদরের চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল আলম চৌধুরী ও ধাওয়াপাড়া ঘাটের মাঝিরা জানান, ওই বড় ট্রলারটি ৫৪টি গরু নিয়ে ঈদ উপলক্ষে ঢাকার গরুর হাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল ট্রলারটি। পদ্মায় তীব্র ও ঘূর্ণায়মান স্্েরাতের টানে ট্রলারের মাঝি নিয়ন্ত্রণ হারালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ দিকে পদ্মায় তীব্র স্্েরাত ও ফেরি সঙ্কটে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাটের সিরিয়ালে আটকা পড়ে অসুস্থ হচ্ছে কোরবানির পশু। ইতোমধ্যে গতকাল এখানে আরো দুই গরুর মৃত্যু হয়েছে।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় অব্যাহত যানজটে আটকে পড়ছে কোরবানির পশুবাহী শতশত ট্রাক। এতে করে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় আটকে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পশু ও রাখাল।
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা হতে কোরবানির গরুবাহী শতশত ট্র্রাক নদী পারাপার হতে দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে শুরু করেছে, কিন্তু ঘাটে এসে এ সব পশুবাহী ট্রাকগুলো অন্যান্য গাড়ির সাথে সিরিয়ালে আটকা পড়েছে। আগের দিন রাত থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত যানবাহনের সিরিয়ালে আটকা পড়েছে।
ফেরি সঙ্কটে পরে গত এক সপ্তাহ ধরে যান পারাপার ব্যাহত হওয়ায় মহাসড়কে আটকা পড়েছে শতশত যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস। রোববারের নৈশকোচগুলো সোমবার বেলা ১১টায়ও ঘাট থেকে অনেক দূরে মহাসড়কে আটকে আছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, রুটে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। এ নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি না থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কঠিন হচ্ছে।
তা ছাড়া পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতে তীব্র ঘূর্ণায়মান স্্েরাতের টানে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগায় ফেরির ট্রিপও কমে গেছে।
ফলে প্রতিদিন যে পরিমাণ গাড়ি আসছে তা পার হতে না পারায় প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকছে।
কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ৪ শতাধিক ট্রাকের দীর্ঘ লাইন
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, পদ্মায় পানি কমলেও প্রবল ¯্রােতের কারণে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকাগামী শতশত গরুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করে কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে। ফেরিতে গরুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে কর্তৃপক্ষ। এতে ঘাট এলাকায় চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। ট্রাকশ্রমিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জানা যায়, পদ্মায় পানি কমলেও প্রবল ¯্রােতের কারণে গত কয়েক দিন ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শিমুলিয়া থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভাটি ঘুরে ফেরিগুলো কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসায় প্রায় ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগছে।
দৌলতদিয়ায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক আর যানবাহনের চাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ রুটে যানজট বাড়তে বাড়তে গতকাল সোমবার ভয়াবহরূপ ধারণ করে। গত রোববার বিকেল থেকে গতকাল ভোর নাগাদ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দৌলতদিয়া থেকে মোকবুলের দোকান পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা যায়। এ সময় পাঁচ শতাধিক গরুবাহী ট্রাকসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকা পড়ে। পথে পথে কোরবানির পশু ভোগান্তি ও যাত্রী দুর্ভোগের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। গতকাল সকালে মোকবুলের দোকান এলাকার সড়কসংলগ্ন ভেন্ডার মো: আক্কাছ আলী শেখ জানান, ভোরে খানখানাপুর বড়বাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার যানজট ছিল।
প্রতিদিন সকালে যানজটে যানবাহনের লাইন কিছুটা কমলেও দুপুরের পর থেকেই আবার তা বাড়তে থাকে। ভোর পর্যন্ত একই অবস্থা চলতে থাকে। দৌলতদিয়ায় এ অবস্থা চলছে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে।
