২৯ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪৪

রাজনৈতিক ও বিশেষ সুবিধায় পাওয়া বড় অংকের ঋণেই খেলাপি হার বেশি

রাজনৈতিক এবং বিশেষ সুবিধায় পাওয়া বড় অংকের ঋণেই খেলাপি হচ্ছে বেশি এমন তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে গত কয়েক বছরের মধ্যে বড় অংকের যেসব ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হয়েছেন তারা হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ নিয়েছেন অথবা অন্য কোন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়েছেন। আর ঋণ খেলাপিতে শীর্ষে আছে নতুন ঋণ অথবা পুন:তফসিলকৃত ঋণ।


এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত নিয়মিত ঋণগুলো আবার খেলাপি হতে শুরু করায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সূত্র মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠনে (নিয়মিত) বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এ সুযোগ নেন দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় শিল্প গ্রুপের উদ্যোক্তারা।
এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি সাপেক্ষে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। এর বাইরে বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় ব্যাংকগুলো নিজেরা আরো ৬৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করেছে। গত বছরও ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা অব্যাহত ছিল। তার পরও এ খাতে খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েছে।


অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মতে, গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আসছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ফিরছে না গতি। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বাড়ছে না, অন্যদিকে আগে বিতরণ হওয়া ঋণের টাকাও ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। এতে করে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব মতেই চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা এ সময় পর্যন্ত বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণ করেছে। এ সময়ে বেশ কিছু ঋণ অবলোপনও হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটার কোনো প্রভাব নেই। তাই বাড়ছে খেলাপি ঋণ।


অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকায়। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
এদিকে গত বছর জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭৩৯ কোটি টাকা বেড়েছে। আগের প্রান্তিক মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ছয় লাখ ৯৭ হাজার এক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছিল। আর জুন শেষে এ পরিমাণ বেড়ে হয়েছে সাত লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।

http://www.dailysangram.com/post/297962