২৯ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪৪

ভিসা হাতে নিয়ে ইহরামের কাপড় পরেও হজ্বে যাওয়া হলো না ১২৩ জনের

হজ্ব এজেন্সিগুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর হজ্ব অফিসের চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার শেষ হলো চলতি বছরের হজ্বযাত্রা। শেষ দিনে ভিসা হাতে নিয়ে ইহরামের কাপড় পরেও হজ্বে যেতে পারেননি ১২৩ জন। হজ্ব এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে গত কয়েকদিন রাজধানীর আশকোনার হজ্ব ক্যাম্পে আহাজারি করেও শেষ পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে হজ্ব ক্যাম্প ত্যাগ করছে সবাই। এদিকে, এই ১২২ জন ছাড়াও নানা জটিলতায় নিবন্ধন থাকা স্বত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মোট ৩৯৭ জন হজ্বযাত্রী হজ্বে যেতে পারেনি।

গতকাল সোমবার হজ্ব ফ্লাইট শেষে হজ্ব ক্যাম্পে ভিসাপ্রাপ্ত ১২৩ জনের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এসআই আসাদ। আর বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ব্রিফিং এ জানিয়েছেন, নানা জটিলতায় ৩৯৭ জনের ভিসা হয়নি।
চলতি বছর যাদের ভিসা হয়েও বিমানের টিকিটের অভাবে হজ্বে যেতে পারেনি তাদের সবাইকে আগামী বছর সরকারি খরচে হজ্বে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন।
এক প্রশ্নের জবাবে বজলুল হক হারুন বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি কিন্তু এই ১২৩ জনকে সৌদি পাঠানোর কোন ব্যবস্থা করতে পারিনি। কারণ সোমবার রাত নয়টার পর আর কোন হজ্বযাত্রী সৌদি প্রবেশ করতে পারবে না। তবে আমি কথা দিচ্ছি আগামী বছর এদের সবাইকে সরকারি খরচে হজ্বে পাঠানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সবাইকে বলেছি এই হজ্বযাত্রীদের তালিকা তৈরি করতে। এই তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা থাকবে। আগামী বছর হজ্ব কার্যক্রম শুরু হলে এদের সবাইকে সরকারি খরচে হজ্বে পাঠানো হবে।’
এদিকে, হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টিকিট না দেয়ার অভিযোগে ইকো অ্যাভিয়েশনের তিনজন দালালকে আটক করছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ইজাজ শফি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আশকোনার হজ্ব ক্যাম্পে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন এজেন্সিকে টাকা দিয়েও টিকিট পাননি এমন হজ্ব যাত্রীরা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাদের একটার দাবি আমাদের হজ্বে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ভুক্তভোগী হজ্বযাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আল-সাফা এজেন্সির ১৫ জন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ্ব এজেন্সির ৬ জন, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ৪ জন, আল-বালাদ ওভারসিজ হজ্ব এজেন্সির ২ জন, গোল্ডেন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ্ব এজেন্সির ৮ জন, উলামা আউলিয়া হজ্ব এজেন্সির ৭ জন, আশা এভিয়েশন হজ্ব এজেন্সির ৬ জন, ইকো এভিয়েশন এন্ড টুরিজম হজ্ব এজেন্সির প্রায় ১১ জন, গুলশানে মোহাম্মাদীয়া হজ্ব এজেন্সির ৭ জন, ইউনাইটেড টুরস হজ্ব এজেন্সির ৫ জন, সাউথ এশিয়ার হজ্ব এজেন্সির ১৬ জন, বুশরা হজ্ব এজেন্সির ৩ জন, ইউরো এশিয়ার ২ জন, আবাবিল হজ্ব এজেন্সির ১ জন, সাওবান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ্ব এজেন্সির ৪ জনসহ আরো কিছু হজ্ব এজেন্সির মোট ১২৩ হজ্বযাত্রী টিকিটের অভাবে হজ্বে যেতে পারেনি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মো. আবু ছালেক মৃধা তার স্ত্রীকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে হজ্ব ক্যাম্পে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছিলেন অনেক আগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মুখে হজ্বে যেতে পারার হাসিটা ফোটেনি। এজেন্সির মালিক তাদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

মো. আবু ছালেক মৃধা বলেন, এজেন্সি থেকে আমাদের ফোন করে হজ্ব ক্যাম্পে আসতে বলেছিল। হজ্ব ক্যাম্পে আসার পর তারা আর যোগাযোগ করছে না। বলছে আপনাদের টাকা আমরা পাইনি। হজ্ব অফিস থেকে আমাদের আশা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর আমরা হজ্বে যেতে পারলাম না। আমরা তো বাড়িতে ফিরে গেয়ে মানুষকে মুখ দেখাতে পারবো না। সবাই আমাদের নিয়ে উপহাস করবে।’
শুধু ছালেক মৃধা নয়, তার মত অসংখ্য মানুষ আজ কাঁদতে কাঁদতে হজ্ব ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন।
এদিকে, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, হজ্ব অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ও হজ্ব এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদান হোসাইন তসলিম বারবার বলেছিলেন একজন হজ্ব যাত্রীকে রেখেও তারা কেউ হজ্ব করতে সৌদি আরব যাবেন না।

কিন্তু ১২৩ জন হজ্বযাত্রীকে রেখে ধর্মমন্ত্রী, ধর্মসচিব, হজ্ব পরিচালক, হাবের মহাসচিবসহ সবাই রোববার রাতেই সৌদি আরব চলে গেছেন। এমনকি হজ্ব ক্যাম্পের সহকারী হজ্ব অফিসার আবদুল মালেকও রোববার রাত সাড়ে তিনটার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সৌদি আরব গেছেন। তবে গতকাল সকাল থেকে তাঁর কক্ষে আলো ও ফ্যান চালানো অবস্থায় দেখা যায়। কক্ষের দরজাও খোলা রয়েছে। তবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চেয়ারে কাউকে বসতে দেখা যায়নি।
ভুক্তভোগী হজ্বযাত্রীদের অভিযোগ, আমাদের সমস্যার কথা বলবো এমন কেউ আজ হজ্ব ক্যাম্পে নেই। সামান্য কারণে আজ আমরা হজ্বে যেতে পারলাম না। আজ যদি অফিসে সবাই থাকতো, সবাই যদি চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো আমরা হজ্বে যেতে পারতাম।

ভুক্তভোগী হজ্বযাত্রী আব্দুল আজিজ বলেন, সামান্য কারণে আমরা হজ্বে যেতে পারলাম না। সকাল থেকে কথা বলার মত হজ্ব অফিসে কাউকে পায়নি। সবাই নাকি কালই সৌদি চলে গেছে। এখন আমাদের কি হবে। আমি এর বিচার চাই।
এদিকে, গতকাল সোমবার হজ্বের সার্বিক বিষয়ে নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জনান, অনেক ঝুট ঝামেলার পরেও এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১০৩ জন হজ্বে গিয়েছেন। যাওয়ার কথা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ জনের। সে হিসেবে ৩৯৭ জন যাত্রী ভিসা, টিকেট ও অন্যান্য সমস্যার কারণে যেতে পারছেন না।
মন্ত্রী জানান, বিমানের শেষ হজ্ব ফ্লাইট ২৭ অগস্ট রোববার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। সোমবার বিকাল ৫টা ও রাত সোয়া ৮টায় সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট রয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/297957