২৯ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:২৮

মংডুর রোহিঙ্গা গ্রামে চলছে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব

শিশুকে মায়ের কোল থেকে টেনে নিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হয়নো ম্যানস ল্যান্ডে হাজার হাজার রোহিঙ্গার আর্তনাদবঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার নৌবাহিনীর ৩টি জাহাজ

 সীমান্তে আশ্রয় নেয়া স্বজন ও সহায়-সম্বলহারা রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ থামছে না। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেপরোয়া গুলির আঘাত ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় নদীর তীরে সময় পার করছে ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব বনি আদম। এর মধ্যে সোমবার নাফ নদীর নৌসীমানা অতিক্রম করার সময় ১৪১ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। গতকাল সকালে নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত পাঠানো এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।টেকনাফ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত পৃথক অভিযানে ১৪১ জন রোহিঙ্গাকে নৌসীমা অতিক্রম করার সময় স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গত চার দিনে ৫৪১ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড।অপর দিকে, গতকাল সোমবারও মর্টার ও গ্রেনেডের শব্দে প্রকম্পিত হয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। গুলি এসে লাগছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। এতে ভীতসন্ত্রস্ত সীমান্তের বাংলাদেশী নাগরিকেরাও। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সীমান্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিজিবির বাধার মুখে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ মিয়ানমারে ফিরে গেলেও আবার এসে জড়ো হয়েছে শূন্যরেখা বরাবর। ওপারের নানা সহিংসতার খবরে কান্নার রোল পড়ে সীমান্তের রোহিঙ্গাদের মধ্যে।গতকাল সকালে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে। এ সময় বেশ কয়েকটি গুলি এসে পড়ে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে। এরপর সীমান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হামিদুল হক জানান, গতকাল সকালে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের বিকট আওয়াজে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে সীমান্তবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কবে নাগাদ কাস শুরু করা হবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।এ দিকে, বর্তমানে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশে ঢোকার আশায়। ওপারে গুলির শব্দ হলেও রোহিঙ্গারা ছুটে আসেন বাংলাদেশের দিকে। আর বিজিবির তাড়া খেয়ে আবার ফিরে যান মিয়ানমারের দিকে। মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় সামরিক হেলিকপ্টার উড়ছে। আর বঙ্গোপসাগরে দুই দেশের নৌসীমানায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ অবস্থান নিয়েছে বলে স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন। এতে সীমান্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। শনিবার ২৬ আগস্ট ও রোববার ২৭ আগস্ট বিকেলে আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় হেলিকপ্টার চক্কর দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দারা জানান। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, সামরিক হেলিকপ্টারটি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম এলাকায় একটি ক্যাম্পে নামে। ঘণ্টা দেড়েক পর আবার চলে যায়। হেলিকপ্টারটি চলে যাওয়ার পর মিয়ানমার সেনারা নির্যাতন আরো বৃদ্ধি করেছে। গতকাল সোমবার ভোর থেকে মংডুর দক্ষিণ-পূর্বে রাথিদং-সংলগ্ন এলাকার ধুংচিপাড়া ইউনিয়নের চারটি রোহিঙ্গা গ্রামে একের পর এক মর্টার নিক্ষেপ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এতে করে আগুন ধরে পুড়ে যাচ্ছে ধুংচি ইউনিয়নের মংচিঘোনা, বড়পাড়া, পূর্বপাড়া ও কুয়েশ্চাং রোহিঙ্গা পল্লী। এসব গ্রামের বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচাতে দিগি¦দিক ছুটে পালাচ্ছে। সেনাবাহিনীর কামানবাহী ট্যাংক গোলা নিক্ষেপ করতে করতে ক্রমেই রোহিঙ্গা পল্লীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। গতকাল সকাল থেকেই ওই এলাকায় নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক কেউ বাদ পড়ছে না নিধনযজ্ঞ থেকে। যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে গুলি করেছে। বন্দুকের বাঁট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে অনেক রোহিঙ্গার মাথা ও মুখ। বুলেট বিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত অর্ধশত রোহিঙ্গা। একটি শিশুকে মায়ের কোল থেকে টেনে নিয়ে পদদলিত করে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।এ দিকে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে মাইকিং করে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে মাইকে ঘোষণা করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্লা ও হাইসসুরাতা এলাকায় ব্যাপক আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে দেখা গেছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ। এ কারণে কোনো মাছ ধরা নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ ও পূর্বে না যেতে বলা হয়েছে। এ দিকে, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে ভয়ার্ত রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির নির্বিচার গুলি। এপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তথা বিজিবির প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান। তবু আহত ও ক্ষুধা পিপাসায় কাতর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের স্রোত এখন সীমান্তের দিকে। মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে তারা অনুপ্রবেশের চেষ্টায় সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছেন। বাঁচার আকুতি। চাওয়া শুধু নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু তাদের কাছে যেন মৃত্যুই ‘নিরাপদ আশ্রয়’ পৃথিবীতে। আর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। এ দিকে আহত রোহিঙ্গারা চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আহত রোহিঙ্গারা চিকিৎসা নিতে ছুটে আসছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত রোববার ও শনিবার রাতে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন মংড়–র ধনখালী গ্রামের দিল মোহাম্মদের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৫)। বোমার আঘাতে তার শরীর ঝলছে গেছে। একই এলাকার মৃত ইউছুফ আলীর ছেলে মোহাম্মদ সাদেকও (২০) ভর্তি আছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসেন মংড়–র শীলখালী এলাকার মৃত আবদুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ নুরুল হক (২৫), একই এলাকার আবদুল সালামের ছেলে মৌলভী মোহাম্মদ শাকিল (২৭), সৈয়দ আহমদের ছেলে রাহমত উল্লাহ (২২) এবং লাল মোহাম্মদের ছেলে নজিব উল্লাহ (২৪)। তাদের শরীর বোমা ও গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা জানান, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ২৫টি গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে যখন তারা ঘুমিয়ে ছিলেন ঠিক তখনই রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে হেলিকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপ করে সে দেশের সেনাবাহনী। বোমা হামলায় শত শত রোহিঙ্গার শরীর ঝলসে গেছে। অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। ওই দিন গভীর রাতেই আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে নাফ নদীর কিনারায় চলে আসেন তারা ২৭ জন। রাত পেরিয়ে শুক্রবার দিন ফুরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশর সীমান্তে ঠাঁই হয়নি তাদের। ওই দিন রাত ৯টায় তারা ২৭ জন একটি ট্রলারে করে টেকনাফের সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে রওনা দেন। শনিবার রাত ৩টার দিকে ঠিকই শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে ওই ট্রলারটি কৌশলে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে। সেখানে পৌঁছার পরই টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে বের করে আশ্রয় নেন তারা। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সহযোগিতা দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ হাসান জানান, বোমার আঘাতে আহত জাহেদ ও সাদেকের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অন্যদের অবস্থাও একই। তাই তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ দিকে ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তে শত শত রোহিঙ্গা ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে কিন্তু বিজিবি সতর্ক প্রহরায় রয়েছে। ঘুনধুম সীমান্তে বাংলাদেশে প্রবেশের আশায় বসে থাকা মোস্তাক আহমদ জানান, তার বাড়ি মিয়ানমার আরাকান রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়া গ্রামে। চার ছেলে ছয় মেয়ের মধ্যে ছেলেদের ধরে নিয়ে গেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। তিনি নিশ্চিত, তার ছেলেদের মেরে ফেলা হবে। সেখানে রোজিনা আক্তার নামে এক মহিলা জানান ‘আমার স্বামীকে শনিবার সকালে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একটি দল। আমার স্বামী আনোয়ার সেলিম নিরপরাধ। আমার চোখের সামনে তার ওপর ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। এ কারণে আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছি।’ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্থানীয় যুবকদের হাত-পা বেঁধে মাথা নিচু করে রাখে। এরপর গুলি করে হত্যা করছে। সে দেশের সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছে কিছু রাখাইন যুবক। তাদের অত্যাচার সেনাবাহিনীর চেয়েও জঘন্য বলে দাবি তাদের। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের ভয়ে কক্সবাজার বান্দরবান সীমান্তে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু। এ দিকে, উখিয়া থানা পুলিশ রোববার রাত আড়াইটার দিকে থাইংখালী এলাকা থেকে ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর কক্সবাজার ৩৪ বিজিবিতে হস্তান্তর করেছে বলে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানিয়েছেন। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে গুলির শব্দ শুনেছি। স্থানীয় শাহনেওয়াজ চৌধুরী বেলা ১টায় ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার বিজিপির প্রচণ্ড গুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসীর মতো আমিও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন জুলুম থেকে বাঁচতে স্বামীকে মিয়ানমারে ফেলে রেখে দুই সন্তান নিয়ে গতকাল সোমবার দুই রোহিঙ্গা নারী কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। মংডু জেলার মাছছিল্লা পাড়ার আজিজুল হকের স্ত্রী তসলিম ফাতেমা জানান, সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণের ভয়ে ইজ্জত বাঁচাতে বেশির ভাগ নারী এপারে চলে আসছেন। সহায় সম্পত্তি ফেলে আসা এ রোহিঙ্গা নারী জানান, মগ সেনারা যেভাবে জুলুম অত্যাচার নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাতে আরাকান রাজ্য মুসলিমশূন্য হয়ে পড়বে। আমিও তাই ইজ্জত বাঁচাতে এ দেশে চলে এসেছি। গতকাল সোমবার সকালে ওই রোহিঙ্গা নারীর বাকরুদ্ধকণ্ঠে এ তথ্য জানান। অপর রোহিঙ্গা নারী রহমত উল্লাহর স্ত্রী আশেক আরা বলেন, আমার সামনে স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জীবন বাজি রেখে কোনো রকম কোলের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে অন্য মুসলিম নারীদের সাথে আমিও এপারে চলে এসেছি। এখানে নতুন, কোনো কিছুই চিনি না। স্বামীকে হারিয়ে ছোট্ট বুকের সন্তানকে কোলে নিয়ে কোনো রকম এপারে এলেও এখন পর্যন্ত মুখে কোন খাবার জুটেনি। গতকাল সোমবার সকালে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায় ওই রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা হলে তারা অত্যাচারের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এ দিকে রোববার বিজিবি মহাপরিচালকের সীমান্ত পরিদর্শনের পর সীমান্তের জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ওই মতবিনিময় সভায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নাই্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম সরওয়ার কামাল, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা সীমান্তের মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার অনুরোধ জানান এবং রোহিঙ্গা প্রবেশে যাতে কেউ মদদ না দেন সে দিকে ল্য রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। বান্দরবান মিয়ানমার সীমান্তে বিজিপির নতুন করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় উত্তেজনা ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের কলাবাগান এলাকায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিজিবি পুশ ব্যাক করতে গেলে ওপার থেকে বিজিপি রোহিঙ্গাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে। এ সময় তিনটি গুলি তুমব্রু বাজারে এসে পড়ে। একটি গুলি তুমব্রু স্কুলে ও অপর দু’টি বাজার পাশের বাগানে এসে পড়েছে। এ ঘটনার পর সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন ও তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বিজিবি সতর্ককাবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/248064