২৮ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১১:১৭

উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং দৈনিক ৪০০ মেগাওয়াট ঘাটতি

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকার নিয়েছে। চাহিদামত বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় দৈনিক ৪০০ মেগাওয়াট করে ঘাটতি চলছে। এর ফলে এই অঞ্চলে বিদ্যুতকেন্দ্রিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি রাজশাহীতে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে জানানো হয়, চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পেয়ে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে দৈনিক প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদু্যুতের ঘাটতি থাকছে। এ জন্য পুরো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং-এর এই পরিস্থিতি অব্যাহত আছে। এ নিয়ে গত জুলাইয়ে বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুতের অফিসে বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলার খবর আসে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শহর ও গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং এ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এ কারণে কলকারখানায় উৎপাদন থেকে শুরু করে সেবামুলক বিভিন্ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর এলাকার পাঁচটি অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার দিকে এই চাহিদা আরো বেড়ে যায়। সেই অনুপাতে সরবরাহ বাড়েনি। ফলে লোড ম্যানেজমেন্ট করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাসহ দেশের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সমস্যা আছে। এদিকে রাজশাহীর কাটাখালী গ্রিড থেকে জেলার পবা উপজেলার কিছু এলাকা, পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকা ও চারঘাট উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ মেগাওয়াট তাকলেও বিপরীতে সরবরাহ মিলছে গড়ে ২১ মেগাওয়াট। এছাড়া রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও পবার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যুতের এই চরম বিপর্যয় যেন পাল্লা দিয়ে চলেছে তীব্র গরমের সঙ্গে। কোন কোন দিন রাতভর বিদ্যুতের লুকোচুরিতে নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে রাজশাহীবাসীকে। বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে এই অঞ্চলের কল-কারখানাসহ দোকান-পাটও। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স নির্ভর দোকানগুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় কেনাকাটায়ও নেমেছে ধস। বিদ্যুতের অভাবে থমকে যাচ্ছে অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম। চার্জ দিতে না পারায় অনেক মানুষের অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অফিসিয়াল কাজের ল্যাপটপটিও। এদিক বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কথাও জানা যায়। পাবনা পৌরসভা প্রায় ১৭ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে। তারা অনেক চেষ্টার পরেও তা আদায় করতে পারছেন না। রংপুরে কৃষিতে সেচ বাবদ প্রায় ৬১ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। চেষ্টা করে সেই টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।

http://www.dailysangram.com/post/297812-