২৮ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১১:১৪

ঈদে ট্রেনযাত্রায় বিপত্তি

যাত্রীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ‘নিরাপদ বাহন’ ট্রেনযাত্রা। এ দিন ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল উপচেপড়া। তবে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়ার কারণে নারী-পুরুষসহ নানা পেশার মানুষকে প্রথম দিনই ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা সহ্য করেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। এর মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ট্রেন লাইনে সমস্যা দেখা দেয়ায় বেশকিছু ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকেই এক থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যায় খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ৭টায় স্টেশন ত্যাগের কথা থাকলেও সেটি স্টেশনেই আসে বিলম্বে। শুধু খুলনাগামী নয়, দিনাজপুর, দেওয়ানগঞ্জসহ বেশকিছু ট্রেনের হাজারো যাত্রী তার আগেই ট্রেনের জন্য স্টেশনে এসে অপেক্ষায় রয়েছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, সকাল থেকেই ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এ ছাড়া কাক্সিক্ষত ট্রেনের অপেক্ষায় টার্মিনালের বিভিন্ন বেঞ্চে অনেককেই ঠাঁয় বসে আবার কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবারই টিকিট কেনা থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত ঘরমুখোদের স্টেশনে এসে দুর্ভোগ ও হয়রানি পোহাতে হয়। এবারো স্টেশনে এসে ঘরমুখোদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাদের দাবি অন্তত ট্রেন স্টেশনে এসে যাতে কাউকে ঠাঁয় বসে থাকতে না হয় সে দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
কমলাপুর রেলস্টেশনে স্ক্রিনের সামনে সন্ধ্যায় ভিড় করেন ঘরমুখোরা। কিন্তু হঠাৎ করেই স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন শুধু বাংলাদেশ রেলওয়ে, ট্রেনের সময়সূচি লেখা ভেসে ওঠে। কিন্তু কোন ট্রেন কোন গন্তব্য যাবে তা না দেখতে পেরে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তারা একপর্যায়ে স্টেশন ম্যানেজারের রুমে ছুটে যান। আবার অনেকে টার্মিনালের ৩ নম্বরে যান। খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৭টায় কমলাপুর স্টেশন ত্যাগের কথা ছিল। কিন্তু সেই ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে। স্বাভাবিকভাবে ওই ট্রেনের পাওয়ার কার, বিদ্যুৎ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পানি সরবরাহ শেষে কমপক্ষে এক ঘণ্টারও বেশি বিলম্বে ছেড়ে যাবে। এ সময় দেখা যায়, সাতটির মধ্যে শুধু ৭ নম্বর প্লাটফরমে ট্রেন রয়েছে। ওই সময়ে একটি ট্রেন ঢুকে ৩ নম্বরে। বাকি প্লাটফরম ছিল ফাঁকা। তবে প্রতিটি প্লাটফরমের সামনেই যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েক যাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম দিনই সময়মতো ট্রেন ছাড়ছে না। শুনছি লাইনে সমস্যা হয়েছে। তাহলে সামনে তো আরো চাপ বাড়বে। তখন কী হবে? তিনি আশঙ্কা করছেন এবার ট্রেন যাত্রায়ও চরম ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার সময়সূচি স্ক্রিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে এগারসিন্দু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬টা ৩০ মিনিটে, দিনাজপুরের উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস রাত ৮টায়, নোয়াখালীর উদ্দেশে নোয়াখালী এক্সপ্রেস রাত ৮টা ২০ মিনিটে, দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে ভাওয়াল এক্সপ্রেস ৯টা ২০ মিনিটে, সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৫০ মিনিটে, রাত ১০টা ১০ মিনিটে লালমনি এক্সপ্রেস, রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেইল ও রাত ১০টা ৫০ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ সুরমা মেইল ছেড়ে যাওয়ার কথা। উত্তরবঙ্গগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদে বাড়ি ফিরতে অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। আজকের টিকিটের জন্য নির্দিষ্ট দিনে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করেছিলাম। আজ (গতকাল) যখন যাচ্ছি, তখন এসে দেখি ট্রেন বিলম্ব।
তিনি আরো বলেন, এত ভোগান্তি, তবু বাড়ি ফেরাতে আলাদা একটা আনন্দ। তাই সবাই ভোগান্তি উপেক্ষা করেও বাড়ি ফেরেন।
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আশিস সৈকত। তিনি বলেন, সড়কপথে অতিরিক্ত যানজট। তাই এবার অনেকে ভোগান্তি সহ্য করে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন দেরি করে ছাড়বে।
কমলাপুর স্টেশন-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মোট ৬৬টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ ছেড়ে যাবে।
এ দিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার পরে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ও তেজগাঁও স্টেশনের মাঝামাঝি স্টাফ রোডে রেললাইনে সমস্যা দেখা দেয়ায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েছে বিলম্বে। লাইন ডাউন হওয়ায় নীলসাগর, একতা, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে বিলম্বে স্টেশন ত্যাগ করে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই সব ট্রেনের যাত্রীরা। তবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে স্টেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/247739