২৮ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১১:০৩

দেখা অদেখা

ঝড় উঠতে পারে

সালাহউদ্দিন বাবর

রাজনীতিতে এখন ওলটপালট হাওয়া বইছে। বিশেষ করে উচ্চ আদালতে সংবিধান সম্পর্কিত একটি রায়ের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল তর্কবিতর্কের শুরু। কোনো রায় নিয়ে এমন বাকযুদ্ধ এর আগে কখনো দেখা যায়নি। বিশেষ করে সরকারের সাথে তথা নির্বাহী বিভাগের সাথে আদালতের বিচার বিভাগের বাকযুদ্ধের কারণ সম্পর্কে প্রায় সবাই অবহিত। কোনো ত্রুটির কারণে যেকোনো বিতর্ককে স্বাগত জানানো যেতে পারে, যাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য আলোচনার প্রয়োজন হয়, যা কাম্য। কিন্তু এখন যা নিয়ে কথা হচ্ছে, তা উচ্চ আদালতের বিচারকদের একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ঘিরে। আমাদের সংবিধান, যা দেশের সর্বোচ্চ আইন, তা বিচারকার্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা তার সংশোধন-সংযোজনের একক এখতিয়ার বিচার বিভাগকে দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের এখতিয়ার তার ক্ষমতার হাত কতটা প্রসারিত হতে পারে ন্যায্য বিষয়ে তা নির্ণয়ের ভার আদালতকেই দেয়া হয়েছে। বিচারকদের অবস্থান ও ক্ষমতা এতটাই উচ্চে; তার কারণ প্রভাবমুক্ত ও বাধাহীনভাবে ন্যায়বিচার করার সবটুকু সুযোগ তাদের দেয়া হয়েছে। চলমান বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিচারকদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই। এমন বিতর্ক সৃষ্টি না করেও সরকারের সংক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি আদালতেই নিষ্পত্তি হতে পারত। যেকোনো বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী হতে পারেন। কিন্তু তার মতো করে বা তার সুবিধামতো বিচারের সিদ্ধান্ত হবে, এটা কারোই কামনা করা উচিত নয়। এখন মনে হচ্ছে, সুবিধামতো সিদ্ধান্ত না হওয়াতেই উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমন উদাহরণ অবশ্যই কারো জন্য কল্যাণকর নয়।
বিচার বিভাগ বা বিচারকদের নিয়ে সরকারি মহল থেকে এমনকি মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা নানা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি সংযমের বাঁধ ভেঙে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই বিতর্কে যোগ দিয়ে অত্যন্ত শক্ত কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের উদাহরণ পেশ করে বলেছিলেন, সেখানে কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে; কিন্তু সেখানে তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে উত্তাপ-উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ দিকে আদালতে দাঁড়িয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, দেশে তো ঝড় উঠে গেছে। এর উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ঝড় তো আপনারা সৃষ্টি করেছেন। প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের উদাহরণ পেশ করায় সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়েছে বলেছেন, প্রধান বিচারপতির সরে যাওয়া উচিত ছিল। এখন পরিস্থিতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে আসলেই বড় ধরনের ঝড়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশ একটি নির্বাচনের মুখোমুখি। এ অবস্থায় যদি কোনো ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়, তাতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। আর সে ক্ষেত্রে দেশ একটি ভয়াবহ শূন্যতার দিকে অগ্রসর হবে। তাতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। কোনো রায় নিয়ে সংক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার সবার আছে; কিন্তু তা একটি সীমার মধ্যে থাকা সমীচীন। এবার সরকারের সংক্ষুব্ধতা প্রকাশের ধরন নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। সীমা কোনো ক্ষেত্রেই অতিক্রম করা ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত কিছু কখনোই কল্যাণ নিয়ে আসে না। বিশেষ করে আদালতের বিষয় নিয়ে কারোই আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়ে আসা সঠিক নয়। আদালত এখনো দেশের আস্থা অর্জন করে আছে। মানুষের শেষ ভরসার স্থলটি নাড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। আদালতের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিমত করার প্রক্রিয়া-পদ্ধতি রয়েছে। সেটাই অনুসরণ করা উচিত। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলোÑ এখন পুরো বিষয়টি নিয়ে জাতি দ্বিধাবিভক্ত। কার ক্ষমতার হাত কতটা দীর্ঘ, সেটি দেশের সংবিধানই নির্ণয় করে দিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা তর্কবিতর্ক হতে পারে। কিন্তু যা আগেই স্থির হয়ে আছে, তা নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি বলেছেন, আদালতের রায় নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
হাজারো সমস্যার দেশ আমাদের এই জন্মভূমি। এখানে সমস্যা সৃষ্টির পরিসংখ্যান তা সমাধানের হারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সবচেয়ে জটিল সমস্যা বিরাজ করছে দেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও সরকারকে ঘিরে। যার সমাধান করা যেমন কঠিন, আবার সব সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা। দেশে সুশাসন তথা আইনের শাসন কায়েম করার জন্য দরকার সুষ্ঠু রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে আমরা স্বাধীনতা তথা স্বশাসনের অধিকার পেয়েছি। এত সময়েও আমরা রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থির নীতি ও আদর্শ গড়ে তুলতে পারিনি। এ সময়ে বিভিন্ন দল শাসনক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু তারা কেউই ক্ষমতার চর্চা ভিন্ন রাষ্ট্রাচার তৈরির উদ্যোগী হয়নি। ফলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠেনি। এ সময়ে বাংলাদেশের বড় অর্জন একটি সংবিধান পাওয়া। কিছু মতপার্থক্য ভিন্ন এই সংবিধান দিয়ে একটি উত্তম রাষ্ট্র গঠন করা যেত। তা না করে এই পবিত্র গ্রন্থ সংবিধানটি বারবার যার যার ইচ্ছামতো ও মর্জিমাফিক সংশোধন করেছে। সংবিধানের মূল আত্মাকে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।
এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার সামনের রাস্তাটি কিন্তু মসৃণ নয়। এখনই নানা সমস্যার চিত্র ভেসে উঠছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়া নিয়ে যেমন ভয় হচ্ছে, তেমনি নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়েও ভরসা করা যাচ্ছে না। এ দুটো বিষয় যদি ভেস্তে যায়, তবে দেশে নেমে আসবে এক ভয়াবহ দুর্যোগ। বিদ্যমান বিধিবিধান একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট নয়। সর্বোপরি এই মত এখন জোরালো হচ্ছে, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন মানেই জনমতের অবাধ সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটানো। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে জাতির সর্বশেষ অভিজ্ঞতা হচ্ছে, কিভাবে কী কৌশলে নির্বাচন ব্যতীত একটি বেসামরিক সরকার গঠিত হতে পারে। এতে দেখা গেল, দেশে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রায় অপ্রয়োজনীয় করা হয়েছে। ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচন বা ভোটাভুটি ছাড়াই একটি দলের প্রার্থীরা সবাইকে বিস্মিত করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে গেলেন। এমন অভাবনীয় দৃষ্টান্ত দেখে দেশবাসীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমাজ হতভম্ব হয়ে গেল পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়ায়। ক্ষমতাসীন হওয়াদের পক্ষ থেকে তখন এমন একটি আভাস-ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল যে, অচিরেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। কিন্তু কোথায় সেসব প্রতিশ্রুতি। তাই এখন যে প্রতিশ্রুতি ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এসেছে, তারা আগামীতে একটি প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চান। কিন্তু এই বক্তব্যের ওপর আস্থা রাখা যাবে কিভাবে, কারণ অতীতের ঘটনাগুলো তো আশাপ্রদ ছিল না। তা ছাড়া বর্তমান সরকার প্রায় ১০ বছর ক্ষমতাসীন রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এমন কোনো সাফল্য ও সুব্যবস্থা তারা করতে পারেননি, যা জনগণের হৃদয়ে দাগ কাটতে পারে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা সফল হননি। দেশের আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি ঘটছে, নারী নির্যাতনের রেকর্ড অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। বন্যাদুর্গতদের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়াতে সরকার সমর্থ হয়নি। এই পটভূমিতে ভবিষ্যতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে। তাই তাদের পক্ষে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কামনা করা সম্ভব নয়। এ দিকে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েই রেখেছে, তারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার সুযোগ আছে বটে; কিন্তু শর্ত হচ্ছে একটি ভালো নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। জনমতের সার্বিক প্রতিফলন থাকতে হবে। এমন নির্বাচনে যেকোনো দল ক্ষমতায় আসতে পারে, তা কারো মাথাব্যথার কারণ হতে পারে না। সবাই তো গণতন্ত্র চায়, আর গণতন্ত্র অর্থই নির্বাচন, যেখানে সব মানুষ নির্দ্বিধায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কোনো ভয়ভীতি থাকবে না।
সত্যিকার গণতন্ত্র চর্চা তথা জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ শুধু কামনা করলেই হবে না, দেশে বিদ্যমান যে ব্যবস্থা তাতে স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়ার অনুকূল অবস্থা নেই। আগেভাগে ক্ষমতাসীনেরা আবার ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়ে আছে। এমন অভিলাষ থাকতে পারে, কিন্তু সেটি ফেরি করার চেষ্টা নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিকূল। ভোটের আগে বিজয়ের আবহ তৈরির প্রয়াস কোনো সাধু সমাচার নয়। এতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের ওপর চাপ ও প্রভাব সৃষ্টি হবে। নির্বাচন-আশ্রয়ী একটি বাজেট তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যাকে পত্রপত্রিকায় নির্বাচনী বাজেট হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের অসক্ষমতা, অর্থনৈতিক মন্দা ও উপর্যুপরি বন্যার আঘাতে সেই বাজেট কার্যকর করা যাচ্ছে না। শোনা গিয়েছিল, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদের আসনওয়ারি বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হবে। এটা সরকারি অর্থের উন্নয়নের লক্ষ্যে না হয়ে রাজনৈতিক ব্যবহার নয় কি; যা কোনোভাবে সিদ্ধ ব্যাপার নয়।
অবাধ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা, প্রত্যয় ও নিরপেক্ষতা খুবই প্রাসঙ্গিক। উত্তরাধিকার সূত্রে কমিশনের যে ভাবমর্যাদা বর্তমান কর্মকর্তারা পেয়েছেন, তা নিতান্ত ভঙ্গুর। নতুন নেতৃত্ব এ পর্যন্ত যে কাজ ও বক্তব্য দিয়েছেন, তা খুব আশাপ্রদ নয়। তাদের কার্যক্রম বিশ্লেষণে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তাদের হাবভাব অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানি। মাছ ধরবেন গা ভিজবে না, এটা তো হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য অনুকূল আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োজন অবশ্যই অনস্বীকার্য। কিন্তু এর সাথে যোগ হতে হবে দৃঢ়তা ও প্রত্যয়। নির্বাচনে সবাই যেন সমান সুযোগ নিয়ে অংশ নিতে পারে, তার ব্যবস্থা গোড়া থেকেই করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ও মনোভাব ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো আস্থায় নিতে পারছে না। এটা এক দিকে কমিশনের দুর্বলতার পরিচায়ক এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তরায়। বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বকে সাধারণভাবে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তারা অতীতের কমিশনের অবস্থান থেকে পৃথক এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। কথা ও কাজের সামঞ্জস্য বিধান করা উচিত। সম্প্রতি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পিছু হটার মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন সব দলের সমান সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা এখন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না বলে উল্লেখ করেছেন।
অথচ সরকারি দলের নেতাকর্মীরা প্রতাপের সাথে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পক্ষান্তরে প্রধান বিরোধী দলকে তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকারি দলের এসব কাজের জন্যই বিরোধী দলের ভয় যে, নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারবে না।
এ লেখার প্রথমে একটি ঝড়ের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, এই আশঙ্কার কথা অবশ্য এসেছে সরকারি মহল থেকে। সরকারি মহল যদি বুঝতে পারে যে ঝড় উঠেছে, তাহলে তাদের উচিত হবে ঝড় সৃষ্টির যে কারণ তা উপলব্ধি করে দূর করা। এখানে আরো একটি কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রধান বিচারপতি এই ঝড় তোলার জন্য সরকারি মহলকেই অভিযুক্ত করেছেন। তাই ঝড়ের পূর্বাভাস যেখান থেকে এসেছে সেখানেই এর বিহিত ব্যবস্থা করতে হবে। ঝড় উঠলে কেউই বিপদমুক্ত থাকবেন না। তাই ঝড় না উঠুক এটাই সবার কামনা করা সঙ্গত। সরকারি মহল থেকে শুধু ঝড় নয়, আরো বলা হয়েছেÑ দেশে আরো একটি ১/১১ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আর এ জন্য তাদের পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতি দোষারোপ করা হচ্ছে। আসলে বিচারালয়ে যে ঝড়ের কথা বলা হচ্ছে, সেজন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করা হয়েছে। আর তাতেই এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যারা দেশের কল্যাণ কামনা করেন, তারা কেউই ঝড় বা ১/১১ চান না। সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থায় যদি কোনো আঘাত আসে তবে শুধু কোনো ব্যক্তি বা দল নয়, গোটা দেশ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরো দুর্ভাগ্যের বিষয় হলোÑ দেশ আজো মসৃণ সাংবিধানিক পথে চলতে পারেনি। এ পথযাত্রায় বারবার হোঁচট খেয়েছে। ফলে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। গণতান্ত্রিক সঙ্কটের কারণেই এই পিছিয়ে পড়া। একটি অপশক্তি দেশে সব সময় সক্রিয় রয়েছে। রাজনীতিবিদদের দুর্বলতাই এই অপশক্তি সৃষ্টির কারণ এবং তৎপরতা চালাতে সাহায্য করছে। রাজনীতিতে মেধার ঘাটতি ও চর্চার অভাব যথেষ্ট। যেসব মেধা রয়েছে, তাদের খল রাজনীতি সুযোগ দিচ্ছে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/247704