বান্দরবান সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের প্রবেশে বাধা দিতে বিজিবির সতর্ক প্রহরা
২৭ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১১:১৫

আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের ওপর বিজিপির গুলিবর্ষণ

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে গুলিবিদ্ধ মিয়ানমার নাগরিকের মৃত্যু

বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নাফ নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে সহায় সম্বলহীন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু। এসব রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। অপর দিকে এসব আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা গুলি ছুড়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উখিয়া বালুখালীর সীমান্তের তুমব্রু দুইটি পয়েন্টে এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গুলিবর্ষণের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। প্রতিবাদে বিজিপি এ জন্য ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে। গুলির এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।’
বিজিপির এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সীমান্তে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী। বিজিবির পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও সীমান্তে কাজ করছে। দুই দিন ধরে অসংখ্য রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিজিবি কঠোর হাতে তা দমন করেছে।’
গত বৃহস্পতিবার আনান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর ফের নতুন করে শুরু হয় সহিংসতা। এতে বৃহস্পতিবার রাতেই মিয়ানমারের মংডুর নাইকাদং ও কোয়াংছিদং গ্রামে রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এ সময় সে দেশের ১৭ পুলিশ ও ৭৭ রোহিঙ্গা নিহত হয়। গত শুক্রবার ২৫ আগস্ট সন্ধ্যার পরপরই সে দেশের সেনাবাহিনীর লাগিয়ে দেয়া আগুনে জ্বলছে আরাকানের মেরুল্লা, সীতাপুরিক্যা, হাইচ্ছুরাতাসহ আশপাশের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। আরাকানের এ বৃহৎ গ্রাম একসাথে পোড়ার আগুনের কুণ্ডলী সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে পরিষ্কার দেখা গেছে বলে জানিয়েছে দ্বীপবাসী। এ ঘটনার পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে গহিন অরণ্যে ঢুকে পড়েছে। রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা নাজুক অবস্থায় পাহাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করছে। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা শিশু ও নারীদের আহাজারি চলছে পাহাড়ে। সেনাবাহিনীদের বুলেটের আঘাতে স্বজন হারানোর বেদনায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। এ ছাড়া গত শুক্রবার সেনা আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম রাথিদং শহরের নিকটবর্তী শিলখালীর প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা পাহাড়ে রাত যাপন করেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী ও শিশু। সৈন্যরা গ্রামটিতে অগ্নিসংযোগ করে সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘঠেছে। অপর দিকে বুথিদংয়ের তংবাজার, নাইক্ষ্যান্দং, লাবাদকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে হ্যালিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ নিক্ষেপ করে রোহিঙ্গা বসতি জ্বালিয়ে দিয়েছে সৈন্যরা। রাথিদংয়ের ফিরিন্দক থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরের পর দশ-বারোটি সেনা কপ্টার বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গা পল্লীর ওপর চক্কর দেয়। এ সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত হয়ে পাহাড়ে ও নদীর তীরে চলে যায়। কপ্টারগুলো ঘুরে ঘুরে রোহিঙ্গা পল্লীতে গোলাবর্ষণ করে। এতে আগুন ধরে পুড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি।

সেখানে হ্যালিকপ্টার থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পুরো আরাকান পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। গত রাতের হামলায় কতজন মারা গেছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এক দিকে সরকারি বাহিনী আর অন্য দিকে রাখাইনদের আক্রমণে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ কোনো স্থান নেই। বেশ কিছু রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ফলে মিয়ানমারের আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ফের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গা স্রোত দেখা যাচ্ছে। আরাকানের বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রামে নতুন করে সেনা অভিযান, ধরপাকড় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আবারো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত দু’দিনে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে পয়েন্ট দিয়ে ঢোকার চেষ্টাকালে ২২০ জন মিয়ানমারের নাগরিককে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে আনান কমিশনের দাখিল করা চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্বসহ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযোগে না দিলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে চরম পন্থা ভাব দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিন রাতেই আরাকানের ২৪টি বিজিপির ক্যাম্প আক্রান্ত হয় বলে আন্তজার্তিক সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর থেকেই রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ফের সেনা অভিযান শুরু হয়। সেনা অভিযানেই মারা যায় ৫৯ জন রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা শুক্রবার ভোরে থেকেই দুপুর পর্যন্ত ওপারের ব্যাপক গোলা বর্ষণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপির ব্যাপক গোলা বর্ষণের মুখে শত শত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার বালুখালী, রহমতের বিল টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে জড়ো হয়। এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে নাফ নদীর পাড়ে এসে আশ্রায় নেয়। ছোট ছোট নৌকা দিয়ে তারা নাফ নদী পার হয়ে বিভিন্ন চিংড়িঘের, কেওড়া বাগান ও খালের পাড়ে আশ্রায় নেয়।

গত শুক্রবার সকাল থেকেই বিজিবি সীমান্তে কড়া পাহারা বসায়। বিজিবি জানিয়েছে শুক্রবার সারা দিন মিলে নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কয়েক সহস্র্রাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বাধা দেয় তারা। টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশকালে মিয়ানমারের ৭৩ জন নাগরিককে আটক করে সে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির অভিযানে ১৭ জন এবং নাফ নদীতে কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৫৬ জন মিয়ানমারের নাগরিক আটক হয়। পরে এ ৭৩ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
টেকনাফের বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলমান জানান, শুক্রবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, লম্বাবিল পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের ১৭ জন নাগরিককে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কোস্ট গার্ডের পূর্বজোনের গণসংযোগ কর্মকর্তা লে. কমান্ডার ফকরুদ্দিন জানান, নাফ নদীতে একটি ফিশিং ট্রলারে করে মিয়ানমারের ৫৬ জন লোক বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল। তাদের আটক করে সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার লে. কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম জানান, বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
এ দিকে গতকাল প্রবেশকালে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গাকে বাধা দিয়েছিল বিজিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে বিজিবি কড়াকড়ি জোরদার করেছে।

তা ছাড়া গত শুক্রবার রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে মাইকিং করে সাগরে মাছ ধরার ট্রলারগুলো না যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে মাইকে প্রচারণা চালানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, গত রাতে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্লা ও হাইসসুরাতা এলাকায় আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে দেখা গেছে মিয়ানমার নৌ-বাহিনীর তিনটি জাহাজ। এ কারণে কোনো মাছ ধরা নৌকাকে পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ ও পূর্বে না যেতে বলা হয়েছে।

এ দিকে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী ও বিছিন্নতাবাদী সংঘটনের মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার জের ধরে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। টেকনাফের বিজিবির সিও লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, নাফ নদী সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গা প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি পোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকাগুলো বিজিবির সতর্ক অবস্থান রয়েছে বলে জানায়।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি বিজিপি ক্যাম্পে বিদ্রোহী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সেনা অভিযানের মুখে এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গত শুক্রবার থেকে নতুন করে শুরু হওয়ার সহিংসতা এবং সেনা অভিযান অব্যাহত থাকলে আবারো ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশের গ্রামবাসী।
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর হামলার শিকার হলো রাখাইন রাজ্যের অসহায় মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। হোয়াইক্যং সীমান্ত থেকে ধামনখালী সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আতঙ্কিত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গারা এ দেশে ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী ও পালংখালী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল আবেদিন জানান, ওপারের প্রচণ্ড গুলির শব্দে এপারের লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বিজিবির বাধার মুখে আটকা পড়েন। শত শত রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া সীমান্ত হয়ে নদী পেরিয়ে নৌকা দিয়ে এ পারে এলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি তাদের সাথে কথা বলি। এ পারে দুপুর ১২টায় পৌঁছে নারী শিশুর একটি দল। এর পর বিকেলের মধ্যে বহু রোহিঙ্গা একত্রিত হয়ে এখানে অবস্থান নেন। জুমার নামাজ শেষে সেখানে গিয়ে দেখি এক নারী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। ঘণ্টা খানেক পর বিলের ওপর অন্য সহযাত্রী নারীদের সহায়তায় একটি সন্তান জন্ম দেন। এসব নির্যাতিত নারীদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা চালানোর বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ ও বিকৃত ইতিহাস রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো লোমহর্ষক হামলা বর্বরতার নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। ঢেকিবনিয়া বাজার হয়ে হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে নদী পথে আসার সময় নৌকা ডুবে নারী ও শিশুসহ অনেকে মারা যায় বলে জানিয়েছেন মংডু ফিয়াজী পাড়া এলাকার মোহাম্মদ আয়ুব নামে এক রোহিঙ্গা।
এ দিকে রাখাইন মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান বর্বরোচিত নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করেছে রোহিঙ্গাদের একটি বিদ্রোহী সংগঠন। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে সংগঠনটি বর্বরতা বন্ধ না হলে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকিও দিয়েছে। সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশ হওয়া এক ভিডিও বার্তায় এআরএসএ নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মা জুনুনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি করেন।
বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু, বুছিদং, জেলার ৩১ নিরাপত্তা স্থাপনাকে ল্য করে আবারো হামলা চালিয়েছে দেড় শতাধিক অজ্ঞাত লোক। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্তঅজ্ঞাত লোকদের সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রাখাইনদের উল্লেখিত অঞ্চলের ৩১টি নিরাপত্তা স্থাপনাকে ল্য করে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এ অঞ্চলগুলোতে গত বছরের অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত সেনা ও বিজিপি মোতায়েন রয়েছে। এতদসত্ত্বেও চলতি মাসের শুরুতে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের ল্য নিয়ে আরো প্রায় এক ডিভিশন পদাতিক সৈন্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ সেনা মোতায়েনের পর থেকে পালাচ্ছে নিরহ রোহিঙ্গা মুসলমানরা। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গার বসবাস। সরকার ওই অঞ্চলে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে। ফলে সেখান থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী ব্যাপক নিপীড়ন, হত্যা, গণধর্ষণ, এবং গ্রামের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। ওপারে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এপারে প্রবেশ করলে বিজিবি আমাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে জানালেন কৌশলে পালিয়ে আসা আতা উল্লাহ। ২৫ আগস্ট ভোরে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী ও আল একিন নামে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার জের ধরে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ বাড়ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ১৪৬ জন রোহিঙ্গা প্রবেশকারীকে আটক করে ফেরত দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালে গুলিবিদ্ধ মিয়ানমার নাগরিকের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসা দুই রোহিঙ্গার মধ্যে একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। গতকাল বেলা ১১টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত মোহাম্মদ মুছা (২২) রাখাইনের মংডু জেলার জেদিন্না থানার মেহেন্দি এলাকার মো: ইসমাইলের ছেলে। আহত মো: মোক্তার হোসেনের (২৭) বাড়িও একই এলাকায়। তার বাবার নাম গুল মোহাম্মদ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুই রোহিঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি হন। বেলা সোয়া ১১টায় একজন মারা যান। মংডুর লাইনমাখালি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে তারা গুলিবিদ্ধ হন। পালিয়ে গত শুক্রবার রাতে কক্সবাজার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আসেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/247415