এখনো সৌদি আরবে যেতে না পারা হজযাত্রীদের বিক্ষোভ
২৭ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১১:১৩

হজযাত্রীদের বিক্ষোভ আশকোনায়

টাঙ্গাইলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস হোসেন ও তার স্ত্রী জরিনা বেগম চার দিন ধরে রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে অধীর অপেক্ষা করছেন। আল্লাহর ঘর তাওয়াফের আশায় ব্যাকুল হৃদয়ে বসে আছেন তারা। কিন্তু হজ এজেন্সির প্রতারণায় তাদের এখনো সেই আরাধ্য স্থানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আশপাশের হজযাত্রীরা একে একে চলে যাচ্ছেন মক্কা-মদিনায়। আর তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। এই কষ্টে ইদ্রিস হোসেন কিছুক্ষণ পরপরই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন। আর আল্লাহ তায়ালাকে ডাকছেন।

ইদ্রিস হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত বছর প্রাক-নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারিনি। এ বছর রাজধানীর পল্টন মোড়ের মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশনের হাতে দু’জনের জন্য তিনি তুলে দেন প্রায় ছয় লাখ টাকা। হজক্যাম্পে তিন দিন অপেক্ষার পর গত শুক্রবার রাতে এজেন্সি মালিক একজন ছেলের হাতে পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজ পলিথিনে মুড়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু টিকিট দেয়নি। ছেলেটি পাসপোর্ট-ভিসা দিয়েই লাপাত্তা। এজেন্সি মালিককে উপর্যুপরি ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। ইদ্রিস হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, হজের মতো এমন একটি পবিত্র কাজে এভাবে প্রতারণার শিকার হতে হবে তা ভাবতেও পারি না। শুধু ইদ্রিস হোসেন ও জরিনা বেগমই নন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশনের প্রায় ৯৩ হজযাত্রীরই এ রকম করুণ দশা। মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক হজযাত্রী বলেন, তিনি তার বন্ধু সিরাজুল ইসলামসহ মোট ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন ‘মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’র মালিক সাইফুল ইসলামের হাতে। আমাদের ২০ আগস্টের মধ্যে ফাইটে চড়ার কথা বলেছিলেন। তবে ১৯ তারিখের পর অফিস বন্ধ করে তিনি পালিয়েছেন। আমরা এ প্রতারকের শাস্তি চাই, প্রধানমন্ত্রীর হস্তপে কামনা করছি। এ সময় তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন। শুধু এ এজেন্সিই নয়, ফেনীর দারুল ইহসান নামে আরেকটি এজেন্সির ৬৫ জন হজযাত্রীও কয়েকদিন ধরে হজক্যাম্পে অবস্থান করছেন। আহমেদ কামাল উদ্দিন নামে এক হজযাত্রী বলেন, আমি এ বছর নিবন্ধন করেছি। চুক্তি মোতাবেক এজেন্সিকে সব টাকা দেয়ার পরও আরো ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। ভিসা নিয়ে চার দিন ধরে হজক্যাম্পে বসে আছি; কিন্তু এজেন্সি এখনো টিকিট দেয়নি। এ রকম আল বালাক, সানজিদ ট্রাভেল, ইকো ট্রাভেলসহ আরো কয়েকটি এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় ৩০০ হজযাত্রী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
একান্ত বাধ্য হয়েই তারা গতকাল হজক্যাম্পের সামনে বিক্ষোভে নামেন। এ সময় তারা মালিক মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য এজেন্সি মালিকের বিচার দাবি করেন এবং হজে যাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
হজ নীতিমালা অনুসারে, হজযাত্রীদের ফাইটের আগেই সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করে ভাড়ার রসিদ ও বিমানের টিকিট নিশ্চিত করে হজ অফিস থেকে ডিও লেটার নিতে হয়। সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া না করার কারণে অনেক হজযাত্রী ভিসা পেয়েও যেতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে। তারা যদি দুই দিনের মধ্যে হজযাত্রী পাঠানোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

এ দিকে বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের পবিত্র হজ পালন করতে যাওয়ার কথা। ৯৫১ জনের পাসপোর্ট শেষ দিনেও জমা না পড়ায় তাদের ভিসা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যাচ্ছেন এক লাখ ২৬ হাজার ২৪৭ জন। গতকাল পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৬৬৯ জন হজযাত্রী। হজ ফাইট সূচি অনুযায়ী, বিমানের শেষ প্রাক-হজ ফাইট গতকাল শনিবার শেষ হয়। সৌদি এয়ারলাইন্সের শেষ প্রাক-হজ ফাইট শেষ হবে আগামীকাল সোমবার। এ সময়ের মধ্যে ভিসা পাওয়া সাত হাজার ৫২৯ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাতে হবে। এতে প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

১২টি বিশেষ হজ ফাইটের অনুমতি পেল বিমান : আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার সৌদি আরবে ১২টি বিশেষ হজ ফাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সৌদি কর্তৃপ গতকাল শনিবার এ অনুমতি দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের উপরাষ্ট্রদূত মো: নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে সৌদি কর্তৃপ। আগামী দুই দিনে ১২টি বিশেষ হজ ফাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমান ১২টি বিশেষ হজ ফাইট পরিচালনায় অনুমতি পাওয়ায় প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/247413