২৭ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১১:০৫

মহাসড়কে দুর্ভোগ বাড়ছে

ঘনিয়ে আসছে ঈদ। মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ভোগ। কোথাও সারারাত লেগে থাকছে যানজট। কোথাও সকাল পেরিয়ে দুপুরে গিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে। কোথাও বা গাড়ি চলছে থেমে থেমে। মহাসড়কের ১৫ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর অদূরের প্রধান প্রধান মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে যানজটের এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, গরু বোঝাই গাড়ি, ঈদ কেন্দ্রিক যাত্রীদের চাপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। এই অংশে গতকাল চতুর্থদিনের মতো দেখা গেছে সীমাহীন যানজট। ১৩ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে। গতকাল সকাল থেকে ধীরগতিতে থেমে থেমে চলেছে ঢাকামুখী যানবাহন। মেঘনা সেতুতে উঠতে গিয়ে যানবাহনকে ধীরগতিতে
চলতে হচ্ছে। গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে। ফলে বাড়ছে যানজট। এটি সামনের দিকে ঈদ পর্যন্ত আরো বাড়তে পারে। তবে নিয়মিত যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, শিবচরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গতকাল সকালে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।
শিমুলিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, পদ্মার তীব্র স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। এই নৌরুটে আসা-যাওয়া করতে ফেরিগুলোর আগে দুই ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন পাঁচ ঘণ্টা লাগছে। বর্তমানে ঘাট এলাকায় দেড় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেরিতে উঠতে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফেরিগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে বিকল্প চ্যানেল দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ফলে বেলা যতই বাড়ছে ঘাট এলাকায় দুই পাড়ে ততই আটকে পড়া যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।

স্টাফ রিপোর্টার টাঙ্গাইল থেকে জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ আর উন্নয়ন কাজের কারণে নিয়মিতই যানজট লেগে থাকছে। গতকাল টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, চন্দ্রা চৌরাস্তা, কালিয়াকৈর ও মির্জাপুর এলাকায় ব্যাপক যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যানজটে আটকে থাকা গাড়ির ভেতর ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রীবাহী যানবাহন এবং কোরবানির পশুবাহী ট্রাক বেশি দেখা গেছে। অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট না থাকলেও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে মহাসড়কের কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা, সদর উপজেলার রসুলপুর, রাবনা বাইপাস মোড়, করটিয়া, মির্জাপুরের পাকুল্লা ও দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ধীরগতিতে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা মেরামতের কারণে কিছু সময় ধরে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে থেকে যানজট তৈরি হয়েছে।

এদিকে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার পথে গাজীপুরা, তারগাছ, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড ও ভোগড়া এলাকায় সড়কে মেরামত চলছে। ভোগড়া বাইপাস থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক মেরামত করার জন্য ভাঙা অংশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। তবে এখনো সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোটবড় ভাঙন। ভাঙাচোরা ও এবড়ো-থেবড়ো সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ী পর্যন্ত সড়ক মোটামুটি ভালো থাকলেও কোনাবাড়ী বাজারের শুরুতে সড়কের অসংখ্য খানাখন্দে পানি জমে রয়েছে। অন্যদিকে উড়াল সড়কের নির্মাণকাজের কারণে এক লেইনে যানবাহন চলছে। এছাড়া, কোনাবাড়ী বাজারের আগে-পরে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে।
গাজীপুরের চন্দ্রা বাজার এলাকায় সড়কে ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে রয়েছে। গতকাল সকালে একটি কাভার্ড ভ্যান বিকল হওয়ায় সেখানেও যানজট লেগে রয়েছে। শফিপুর বাজারেও সড়কে খানাখন্দের কারণে যানবাহন চলছে ধীরে ধীরে। গাড়ির চালকরা বলছেন, ঈদের গাড়ি ও গরুর ট্রাক এখনো রাস্তায় বের হয়নি। অথচ এখনই ঢাকা থেকে রংপুর যেতে একদিন লেগে যাচ্ছে। চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত সড়কেও ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দ। এ সড়কের কালিয়াকৈর বাইপাস সড়কের হিজলতলী সেতু ও লতিফপুর সেতু এবং কালিয়াকৈর রেল ওভারপাসের দু’পাশে সড়ক ভাঙাচোরা। মির্জাপুরের দেরুয়া রেলক্রসিং সড়কটি ভাঙাচোরা ও সরু হওয়ায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। লতিফপুর সেতুর দু’পাশের সড়ক অনেকটা দেবে গেছে। ভাঙা অংশে ইট বিছিয়ে মেরামত করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা। এতে দু’পাশে যানবাহন আটকে থাকছে।

সড়ক ও জনপথের মির্জাপুরের উপ সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ সরকার জানান, এখানে ভালো মানের বিটুমিন দিয়ে কাজ হলেও বৃষ্টির পর কী হয় তা বলা যায় না। সাধারণত সড়ক মেরামতে ৪ ভাগ বিটুমিন দিলেই হয়। সেখানে আমরা ৬ ভাগ বিটুমিট দিয়ে ঢালাই করছি। আশা করি কিছু হবে না। কিন্তু বৃষ্টি হলে তখন আর কিছু করার থাকবে না।
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, জেলার সব রাস্তাই কমবেশি ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। এছাড়া গাজীপুর থেকেই রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। কোনাবাড়ীতে নির্মাণধানী ফ্লাইওভারের কারণে যানজট আরো বেড়েছে। ঈদের আগে সবাই যখন একসঙ্গে বের হবে তখন গাড়ির চাপ এমনিতেই অনেক বেড়ে যাবে। গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা জানান, চলতি বছর এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, যা সবার ধারণার বাইরে। তাই রাস্তার কিছুটা সমস্যা তো থাকবেই। কিন্তু সমস্যার জন্য গাড়ি বন্ধ থাকবে না। মহাসড়কে ৩ থেকে ৪ লেইনে গাড়ি চলতে পারবে। এখন যদি বড় ধরনের বৃষ্টি না হয় তাহলে মেরামত করা সড়ক ধরে রাখা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে যান চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
রূপগঞ্জে দুই মহাসড়কে যানজট, ভোগান্তি
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: ঈদে দূরপাল্লার যাত্রী ও কোরবানির পশুবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে যানজটে আটকা পড়েছেন গরুবোঝাই ট্রাক, যাত্রীসাধারণ, ব্যবসায়ী ও যানবাহনের চালকরা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। শনিবার সকাল থেকে এ দুই সড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রতিদিনের মত ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের সংযোগস্থলে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ওই দুই মহাসড়কের উভয় দিকে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি যেন শেষ নেই। অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল থেকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন সেতুর টোলপ্লাজায় ধীর গতিতে টোল আদায়, সেতুর উপরে সড়কের সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা অর্ধেক বন্ধ করে সওজের লোকজন কাজ করার দরুন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, ভুলতা এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজের দরুন যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করার ফলে, পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ফুটপাথ দখল ও নিয়ম ভঙ্গ করে যান চলাচলের কারণে এ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে গরুবোঝাই ট্রাক, যাত্রীসাধারণ, ব্যবসায়ী ও যানবাহনের চালকরা। সকাল থেকে যানজট নিরশনে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহবুব শাহ বলেন, কোরবানির দিন হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আর ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি ও গরু বোঝাই গাড়ি চলাচলের কারণে এ যানজট। আর যানজট নিরশনের আমাদের পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
সড়ক সংস্কারে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে মানুষ
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের সেতাবগঞ্জ অংশের সাগুনি নামক স্থানে একটি কালভাটের দু’পাশের মাটি বন্যায় সরে যাওয়ায় সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ পথ দিয়ে চলাচলকারী ৩ উপজেলার মানুষ।

গত ১২ই আগস্ট প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানির চাপে টাঙ্গন নদীর রাবার ড্যামের পাশে ছোট এই কালভাটটির দু’পাশের মাটি সরে গেলে একেবারে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ একাধিক বার এই কালভাটটিতে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণের কারণে রাস্তার বেহাল অবস্থা সেই সঙ্গে কালভার্টের উভয় পাশের মাটি সরে গিয়ে বিচ্ছিন্ন করেছে ৩ উপজেলার মানুষকে। বাঁশ ফেলে ঝুঁকি নিয়ে কিছু মানুষ চলাচল করছে। সরজমিনে কথা হয় এই পথে চলাচলকারী দৌলতপুরের সহিদ হাসানের সঙ্গে। দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘দুই তিন বছর পর বন্যা হবে আর এই ব্রিজটি ভাঙবে, এক বছর ধরে সংস্কার হবে পরের বছর বন্যায় ভাঙবে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতি খেসারত দিতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী অসংখ্য মানুষকে দিনের পর দিন, দেখার কেউ নেই। বাস ড্রাইভার শামীম বলেন, ‘গত বছর এতটাকা খরচ করে ব্রিজটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এই কয়েকদিনে কিভাবে সড়কটি মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেল কিছুই বুঝি না। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বাস, কোচ, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। চরম ভোগান্তিতে এসব পরিবহনের যাত্রীরা অনেক বেশি পথ ঘুরে পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল এবং হরিপুরের যাতায়াত করছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের শাহানুরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি যান চলাচলের গুরুত্ব অনুভব করে আমি নিজেই উদ্যোগী হয়ে মাটি ভরাটের কাজ করছি।’ আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে বলে আমি আশা করি। এমপি সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে তিনি সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।’ মুঠোফোনে বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন এভাবে কতদিন কতবার রাস্তাটিতে যান চলাচলের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তবে ধীরগতিতে চলা সংস্কার কাজ কতদিনে যান চলাচলের উপযোগী হবে তাই এখন দেখার বিষয়।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=80687