২৭ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১০:৫৯

ঈদ যাত্রায় ভাঙ্গা সড়কের আতঙ্ক

এবার ঈদে বাড়ি যেতে এখন থেকেই ভোগান্তি শুরু হয়েছে। ঈদের আরো ৬ দিন বাকি থাকলেও এখন থেকেই দুটি মহাসড়কে শুরু দীর্ঘ যানজট। ফলে ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তার কোন অন্ত নেই। গত ঈদে শঙ্কা থাকলেও শেষটায় মানুষ নির্বিঘেœ গ্রামে ফিরতে পেরেছিল ঈদুল ফিতরের আগে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর এখন বেহাল দশা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের ২১ জেলার ৭ হাজার ১৩০ কিলোমিটার সড়ক। ফলে ঈদযাত্রা নিয়ে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে মানুষ। তবে এত অসুবিধার মধ্যেও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন প্রয়োজনে রাস্তায় থাকবো। তারপরেও ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে কাজ করবো।

সূত্র জানায়, দেশের চার মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা-যশোর-খুলনা এবং তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। তবে এ তিন মহাসড়কের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ক্ষতির পরিমাণ কম বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এর পরেও এই মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজট ঘরমুখো যাত্রীদের চিন্তায় ফেলেছে। সম্প্রতি উত্তর দক্ষিণের দুটি মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ যানজটে এখন থেকেই তারা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় কাটাচেছন।

এদিকে সড়কের এই বেহাল দশা থাকলেও বরাবরই আশার কথা শুনিয়ে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের । তিনি বলেছেন, ‘সড়ক পথে ভয়, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। বৃষ্টি-বাদল, ঝড় যাই হোক, যে কোনও মূল্যে সড়ক-মহাসড়ক সচল রাখা হবে।’ অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) উপ-সচিব জি এম আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, বন্যায় ৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ঈদ যাতায়াতে দুর্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জামালপুর জেলা। এ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার পরিমাণ ১ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। অন্যান্য জেলার মধ্যে টাঙ্গাইলে ৯৯৭ কিলোমিটার, কুমিল্লায় ৮৮০ কিলোমিটার, পঞ্চগড়ে ৮৫৮ কিলোমিটার ও নীলফামারীতে ৫৩৬ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা ও শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ বন্যার কবলে পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৩৯ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভালো অবস্থায় রয়েছে। ৩৭ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা, ২৪ শতাংশ সড়ক মোটামুটি চলনসই। তবে এরমধ্যে কিছু অংশে হালকা বা ভারি মেরামত প্রয়োজন। বাকি সড়ক পুননির্মাণ করতে হবে। সওজের ১০টি জোনের জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থা ঢাকা ও রংপুরের। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুমিল্লা ও খুলনার। এর বাইরে রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও কুমিল্লা জোনের সড়কের বড় অংশই মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে। উল্লেখ্য, সারাদেশে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অধীনে জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ১২৩ কিলোমিটার।

আগামী ২ আগস্ট সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এ ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখী মানুষেরা। এ ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে এবং অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে আজ রেবাবার অর্থাৎ ২৭ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনের অগ্রিম টিকিটে যাত্রীরা নিজ গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেছেন। বাসের অগ্রিম টিকিটের যাত্রীরা কাল পরশু থেকে যাত্রা শুরু করবেন।
বিআইডব্লিউটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা বন্দর হতে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ইচুলী, মাদারীপুর, কালাইয়া, আমতলী, বোরহানউদ্দীন, পটুয়াখালী, হুলারহাট, লালমোহন, রাঙ্গাবালী, টরকী এবং লেতরা বাজার রুটে এই বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। এ ছাড়া চাঁদপুর নদী বন্দর থেকে বরিশাল এবং নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর থেকে চাঁদপুর, তালতলা, রামচন্দ্রপুর, মাছুয়াখালী, সুরেশ্বর ও মতলব রুটেও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে।

http://www.dailysangram.com/post/297679