২৬ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ৯:৪২

বন্যার্তদের দুঃখ-কষ্ট অশেষ

নদ-নদীর পানি কমলেও খাদ্য বিশুদ্ধ পানি ওষুধের অভাবে বানভাসিদের দুর্ভোগ বাড়ছেই পুনর্বাসনের দাবি : ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগব্যাধি : এখনও ১৫ নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে : কুশিয়ারায় ফের পানিবৃদ্ধি- সুরমা বিপদসীমার নিচে
ইনকিলাব ডেস্ক : উন্নতি হচ্ছে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির। তবে বন্যা কবলিত নিচু এলাকাগুলো থেকে এখনো নামছে না পানি। চর্ম ও পানিবাহিত রোগ এবং খাদ্য সঙ্কটে বানভাসীরা আছেন দুর্ভোগে, ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি তাদের। দেশে কৃষি প্রধান গ্রামে অসহায় মানুষগুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা কৃষি কাজ। সর্বনাশি বন্যা তাদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ায় তাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। অনেকে হারিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয় ,ধার করে তৈরি করা বসতবাড়ি। ফলে বসবাস করার একমাত্র ভরসা এখন রাস্তাঘাট। ঘরবাড়ি মেরামত সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন ছেলে মেয়েদের যেখানে পেট ভরে খাবার দিতে পারবো কিনা তা জানি না, বসতবাড়ি করা তো এখন দুঃস্বপ্ন। তার উপর রয়েছে ঋণের বোঝা। সরকার আমাদের ত্রাণের পাশাপাশি পুনর্বাসন না করলে মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ দেখছি না। এদিকে, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে নদ-নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ক্ষত-বিক্ষত, লÐভÐ হচ্ছে জনপদ। শুধু ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা মসজিদ-মাদরাসা নয়। বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাটও। ভেঙে গেছে সেতু-কালভার্ট। ফলে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ত্রাণ পৌঁছাতে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। ফলে যাতায়াত ও পরিবহনসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। নাটোরে আত্রাই নদীর পানি কমলেও ঘরে ফিরতে পারছে না বানভাসিরা। সড়কেই অস্থায়ী বসতি গড়েছেন সিংড়ার ভাগনাগরকান্দি গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার। ত্রাণ পেলেও বন্যার্তরা বিপদে আছেন গবাদি পশু নিয়ে। কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসী পরিবারগুলোর। বন্যার পানিতে জেলার সঙ্গে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। রাজারহাট উপজেলার বোয়ালমারী বড়পুল এলাকায় রেল সেতুর গার্ডার ডেবে গিয়ে কুড়িগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট :
শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে জানান, উত্তর-জনপদ, মধ্যাঞ্চল, মধ্য-দক্ষিণাংশ ও বৃহত্তর সিলেটের প্রায় এক কোটি বন্যার্ত অসহায় মানুষের নিত্যদিনের দুঃখ-কষ্ট অশেষ, অবর্ণনীয়। উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহের পানি আরও কমেছে। কিন্তু একমুঠো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং জরুরি ওষুধের অভাবে বানভাসিদের দুর্ভোগ-দূর্গতি বাড়ছেই। এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে বিশেষত দূষিত পানির কারণে এবং খাদ্যাভাবে অখাদ্য-কুখাদ্য খাবার খেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বন্যাজনিত বিভিন্ন ধরণের রোগব্যাধি। বন্যার্তদের মধ্যে অন্তত ২০ লাখ শিশু-কিশোর। তাদের বেশিরভাগই ভুগছে গুরুতর অপুষ্টিজনিত রোগে। অথচ খাদ্য পানি ওষুধসহ ত্রাণের জন্য দিনের পর দিন প্রতীক্ষায় থাকলেও বন্যার্তরা তেমন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে এখনও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেছে বলতে গেলে প্রকৃত দুর্দশার বিপরীতে খুবই অপ্রতুল ছিটেফোটা মাত্র। মেডিক্যাল টিম কোথাও কোথাও যাচ্ছে, তবে অনেক জায়গায় চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পৌঁছেনি এখনও।

এদিকে গতকাল (শুক্রবার) অবধি যমুনা নদ, পদ্মা নদী, মহানন্দা, কুশিয়ারা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, তিতাসসহ ১৫টি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার ১৬ নদ-নদী ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে ছিল। প্রধান তিনটি অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনায় পানি হ্রাস অব্যাহত থাকার ফলে দেশের নদ-নদীর ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে গতকাল পানি হ্রাস পায় ৬৯টিতে, বৃদ্ধি পায় ২০টিতে, অপরিবর্তিত থাকে একটিতে। এতে করে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে উজানভাগের উত্তর-পূর্ব ভারতে গত কিছুদিনের বিক্ষিপ্ত ভারী বর্ষণের কারণে ঢল-বানের পানি ভাটিতে নামছে। এতে করে বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম নদী কুশিয়ারায় গতকাল তিনটি পয়েন্টেই পানি ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহত্তর সিলেটের মনু ও খোয়াই নদীর পানির সমতলও বেড়ে গেছে।

তবে সুরমা নদী তৃতীয় দফায় বন্যা কবলিত হওয়ার দীর্ঘদিন পর এখন বিপদসীমার নিচে নেমেছে, কানাইঘাটে মাত্র ৫ সেমি নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। পূর্বাভাস মতে সুরমা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত বা স্থিতিশীল থাকতে পারে। প্রধান সবক’টি নদ-নদীতে উজানভাগের বানের পানি ভাটিতে নামছে। ফলে ভাটি হয়ে মোহনা পর্যন্ত বন্যার পানির চাপ বেড়ে গেছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উত্তর-জনপদ, মধ্যাঞ্চল, মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরের দিকে এখন আরও দ্রæতবেগে নামছে। এরফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
নদ-নদীর পরিস্থিতি এবং গতকাল সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানা যায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিনটি অববাহিকার মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের ভারতীয় ও বাংলাদেশ উভয় অংশে পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় অংশে পানি স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশের গোয়াহাটিতে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮০ কিলোমিটার উজানে) ১১ সেমি, পান্ডু পয়েন্টে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৬০ কিমি উজানে) ১২ সেমি, গোয়ালপাড়া পয়েন্টে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৯০ কিমি উজানে) ১৬ সেমি এবং ধুবরীতে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৫ কিমি উজানে) ১৮ সেমি পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে হ্রাস পাওয়া অব্যাহত আছে।
বন্যা পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। ভারতের উজান থেকে ফের ঢলের পানি নেমে আসার কারণে মেঘনা অববাহিকায় কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে। আর রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ১৫ সেমি পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতলও আগামী ৭২ ঘণ্টায় হ্রাসের ধারা বজায় থাকবে। মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীসমূহের মধ্যে কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াইর পানি আগামী ২৪ ঘন্টায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে উন্নতি অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের বিশেষত মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুঞ্জিগঞ্জ, শরীয়তপুর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে ঢাকার চারদিকের নদ-নদীগুলোর মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদী নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার সর্বশেষ ৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন অপর তিনটি নদী বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টঙ্গীখাল বিপদসীমা থেকে যথাক্রমে ৮৭ সেমি, ১৪ সেমি, ১১ সেমি এবং ৮ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোতে পানির সমতল আগামী ৪৮ ঘন্টায় হ্রাস অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে দেশের বন্যা কবলিত এলাকাসমূহে উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলোর প্রবাহের গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে- উত্তর জনপদের যমুনা নদের পানি আরো হ্রাস পেয়েছে। যমুনা কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও ভাটিতে আরিচায় বিপদসীমার ৫, ২৬ ও ২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিংরায় গুর নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার একশ’ সেমি উপরে আছে। আত্রাই নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ৪৮ সেমি এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি কিছুটা কমে গিয়ে টাঙ্গাইলের এলাসিনে ৫০ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। উত্তরাঞ্চলের মহানন্দা নদীর পানি গতকাল আরো হ্রাস পেয়ে রোহনপুরে বিপদসীমার ৫৯ ও চাপাইনবাগঞ্জে ৫ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। নওগাঁয় ছোট-যমুনার পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপদসীমার মাত্র এক সেমি উপরে ছিল। গঙ্গা নদীর ভাটিতে পদ্মায় পানি হ্রাস পেয়েছে। গতকাল গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদী যথাক্রমে বিপদসীমার ৪০, ৮ ও ১৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে অন্যতম প্রধান মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে বিপদসীমা থেকে ৫ সেমি নিচে নেমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল ৩টি পয়েন্টেই গতকাল আবারো বৃদ্ধি পায়। কুশিয়ারা নদী অমলশীদে বিপদসীমার ৯ সেমি উপরে, শেওলায় ২৯ সেমি উপরে এবং শেরপুর-সিলেটে ১৭ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। দিরাইয়ে পুরাতন-সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৪ সেমি উপরে, নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরো কমে বিপদসীমার ৪১ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫১ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। খুলনায় পশুর নদী বিপদসীমার ৪১ এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সাথে সম্পর্কিত থাকায় কর্ণফুলী ও পশুর নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধি সাময়িক।

শফিকুল ইসলাম বেবু,কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে পানি নেমে গেলেও শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি, গাছপালা, আসবাবপত্রসহ সব কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সর্বনাশী বন্যার পানির ¯্রােত। বাঁধ ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া এসব পরিবার ভিটে-মাটিতে ফিরে সব হারানোর দৃশ্য দেখে শুধুই আর্তনাদ করেই চলেছেন। ঘর-বাড়ি হারানো এসব পরিবারের থাকার জায়গার পাশাপাশি বাড়ি-ঘর মেরামতে সরকারী সহযোতা জরুরী হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত ও ভেসে যাওয়া পরিবারের সংখ্যাই শতাধিক। অনেকের বাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। যেন বড় কোন ঝড় বয়ে গেছে। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামের বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া বাড়ির মালিক তালুকদার (৫০) সাংবাদিক দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, ধরলা নদীর তীব্র বেগে বন্যার পানি বাড়িতে ঢুকে পড়ায় কিছুই নিতে পারি নাই। শুধু বউ-বাচ্চা নিয়ে জীবন বাঁচিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। থাকার জায়গাও নাই, ঘরতোলার একটি খুঁটিও নাই। এখন যে কি হবে আল্লাহই ভালো জানেন।

নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরে আত্রাই নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিংড়া উপজেলায় এখনও পানি না নামায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। তবে নলডাঙ্গায় বন্যার পানি দ্রæত গতিতে নেমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আবদুল হালিম দুলাল মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা থেকে জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় সওজের মিরুখালী-ধানীসাফা রাস্তার (৫কিলোমিটার) ৩ স্থান ভেঙে ৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোকের উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং জনসাধারনের চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে আমন ধানের মৌসুমে পর পর দুবারের বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া ২২ হাজার হেক্টর জমির আমন চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে ৬ উপজেলার ৬শ কৃষকদের মাঝে আমন চারা বিতরণ করেছে স্থানীয় কৃষি অফিস।

মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মা ও যমুনাসহ আভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি কমায় মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৫টি উপজেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়নের মানুষ।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেল ব্রিজ পয়েন্টে পূণর্ভবা নদীর পানি এখনও বিপদ সীমার ৭১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অপর নদী মহানন্দার পানিও কিছুটা কমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, গতকাল বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেছেন স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস।

ইসলামপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বসুন্ধরা গ্রæপ জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিপুল পরিমান ত্রাণ বিতরণ করেছে।
এমদাদুল হক সুমন, নওগাঁ থেকে জানান, গতকাল নওগাঁ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নওগাঁ জেলায় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ইকবাল হোসেন মান্দা থানা এলাকার ১১নং কালিকাপুর ইউনিয়নে বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেন। এছাড়া নওগাঁ জাতীয় পার্টি (জাপা) জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ আমিনুল হক বেলাল, স্ক্যান সিমেন্টর, বদলগাছীতে যুব মহিলালীগের উদ্যোগে পৃথকভাবে জেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, ঢাকাস্থ তেজগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার সাতপোয়া ও আওনা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায বন্যার্তদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেণ।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগে সারা দেশে বন্য্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিরতণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে টাঙ্গাইল জেলা ও উপজেলা বিএনপি। গতকাল ত্রাণ বিতরণকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।ভূঞাপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম তোফা, বিএনপি নেতা ওবায়দুল হক নাসির, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জিয়াউল হক শাহীন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুল হকসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

মোঃ লিহাজ উদ্দীন মানিক, বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ের বোদায় গ্রামীণ ব্যাংক ঠাকুরগাঁও যোনের আটোয়ারী এরিয়ার বোদা শাখার বন্যা কবলিত সদস্যদের মাঝে বিনামুল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদান করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন গ্রামীণ ব্যাংক ঠাকুরগাঁও যোনের যোনাল ম্যানেজার ব্রজ গোপাল রায়।

https://www.dailyinqilab.com/article/93506