২৬ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ৯:২৩

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

দৌলতদিয়া ঘাটে গরুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন

প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গরু * পারাপারে লাগছে দ্বিগুণ সময় * দুই কিলোমিটার ভাটিপথ ঘুরে চলাচল * ফেরি স্বল্পতায় বাড়ছে সমস্যা * প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে নির্বিঘœ ঈদযাত্রা
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সংকটে দৌলতদিয়া প্রান্তে গরুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ছে। এতে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক গরু। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ রুটের অধিকাংশ ফেরি পুরনো হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন সেগুলোতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। বহরের ছোট-বড় ১৬টি ফেরির মধ্যে পাঁচটি বিকল হয়ে পড়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ঘরমুখো মানুষ ও ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল নামে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে। ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে যাত্রীদের পারাপার কতটুকু নির্বিঘœ হবে সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে প্রকৃতি আর ফেরি সচল থাকার ওপর। ঘাট এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ঈদযাত্রাকে ঘিরে যাত্রীসাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে নানা শঙ্কা।

কয়েকদিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ফেরিগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। তীব্র স্রোতের কারণে নির্দিষ্ট চ্যানেল ছেড়ে ফেরিগুলো দুই কিলোমিটার ভাটিপথ ঘুরে চলাচল করছে। এতে পারাপার হতে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় বেশি লাগছে। ফলে নদী পারাপার হতে আসা গাড়ি ২-৩ ঘণ্টা ঘাটেই আটকা থাকতে হচ্ছে। এছাড়া এই রুটে চলাচলকারী ১৬টি ফেরির মধ্যে ২-৩টিকে প্রায় সময় মেরামতের জন্য ডকে পাঠানো হয়। ফেরি সংকটে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের আগে চলাচল নির্বিঘœ করতে ফেরি বহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮ থেকে ১৯টি ফেরি থাকার কথা। কর্তৃপক্ষের দাবি, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এ রুটে ১৮টি ফেরি প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজমল হোসেন জানান, প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমবে। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস ও ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ রুট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন গাড়ি পারাপার হয়। প্রতি বছর উভয় ঘাটে ঈদের আগে ও পরে মানুষের ঢল নামে। এ সময় গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে নাড়ির টানে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী নানা দুর্ভোগের শিকার হয়।

এ রুটে এরই মধ্যে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও অন্য যানবাহনের বাড়তি চাপ শুরু হওয়ায় দৌলতদিয়া প্রান্তে দুই সপ্তাহ ধরে দেখা দিয়েছে নিত্য যানজট। এতে আটকা পড়ছে শত শত গরুবাহী ট্রাক। ৪-৫ দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসন গরুবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে পার করছে। তবে ফেরির অভাব ও নদীতে তীব্র সে াতের কারণে ফেরি পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগায় দুর্ভোগ কাটছে না।

বিআইডব্লিউটিসির ভাসমান কারখানা মধুমতির প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, শুক্রবার এ রুটে ৬টি রো রো (বড়), ৬টি ইউটিলিটি ও ২টি কে-টাইপ ফেরি চলছে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ফেরিটি যান্ত্রিকভাবে দুর্বল থাকায় প্রায় ২ মাস ধরে মধুমতিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। তীব্র সে াতের বিপরীতে ফেরিটি চলতে পারছে না। এটিকে পুনর্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের প্রপেলারের ব্লেড ভেঙে তিন সপ্তাহ ধরে বসে আছে। ফেরিটিকে দ্রুত সংস্কার করে নামানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে সংস্কার কাজ সেরে রো রো ফেরি আমানত শাহ দু-একদিনের মধ্যে পাটুরিয়ায় চলে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া সাময়িক সময়ের জন্য শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে পাঠানো কে-টাইপ ফেরি কাবেরীকে এখানে নিয়ে আসারও কথা রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়া তেলের পাম্প এলাকায় গরুবাহী ট্রাকের চালক শাহেদ আলী জানান, কুষ্টিয়া থেকে ৯টি গরু নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় তিনি এসেছেন। পার হতে এখনও ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এ সময় ১৬টি গরু নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ট্রাকের চালক জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড গরমে তার ট্রাকের একটি বড় গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বেপারিরা অনেকভাবে চেষ্টা করছেন সেটিকে সুস্থ করতে। ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি আটকে আছেন। আরও আটকে থাকলে অন্য গরুর অবস্থাও খারাপ হতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন জানান, এ রুটে ফেরি কম থাকায় রাস্তায় গাড়ি আটকা পড়ছে। তবে দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী বাস ও কোরবানির পশুবাহী যানবাহনগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে এক সিরিয়ালে পার করা হচ্ছে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/08/26/151065