২৫ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৪৩

মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার দুর্ভোগের যেন শেষ নেই

দফায় দফায় সময় আর ব্যয় বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। ঢিমেতালে কাজ চলায় বছরের পর বছর ধরে চলছে ভোগান্তি। নির্মাণাধানী ফ্লাইওভারটি এখন নগরবাসীর বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। আদৌ কবে এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হবে এর কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। গত জুন মাসে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুন মাসে শেষ করা সম্ভব হয়নি। জুন মাসে বলা হয়েছিল, আরো একমাস অপেক্ষা করতে হবে এই ফ্লাইওভারে কাজের শেষ দৃশ্য দেখার জন্য। অর্থাৎ জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগস্টের শেষে এসেও নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে কাজ। ফ্লাইওভারের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ার কারণে উন্নয়নমূলক এই প্রকল্পের জন্য দুর্ভোগ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয় দু’বছর। যদিও মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাতেম আলী জানিয়েছেন ঈদের আগেই শান্তিনগর থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের একাংশ খোলে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শেষ মুহূর্তের টুকটাক ফিনিশিং এর কাজ চলছে। তবে নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এখনো অনেক কাজ বাকি। প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রমিক দিয়ে কাজ চলছে। ঈদের আগে ফ্লাইওভার চালু হবে কিনা এবিষয়ে তারা কোনো আশার বাণী শুনাতে পারেননি। গতকাল সরজমিন মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-আবুল হোটেল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এখনো ফ্লাইওভারের অনেক স্থানে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। কোথাও ঝালাই আবার কোথাও ফিনিশিং এর কাজ চলছে। মৌচাক থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ, মালিবাগ মোড় থেকে রাজারবাগ, মালিবাগ মোড় থেকে শান্তিনগর রাস্তার দু’পাশের রাস্তার অবস্থা বেহাল। এছাড়া এসব রাস্তার মধ্যখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে রাস্তাকে ছোট করে দেয়া হয়েছে। একদিকে খানাখন্দ, অন্যদিকে সরু রাস্তা। অপরদিকে এসব রাস্তার দুপাশে আবার সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে এই এলাকা দিয়ে চলাচলরতদের দুর্ভোগের শেষ নাই।

মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের কত শতাংশ কাজ বাকি আছে এমন প্রশ্নে ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল জানান, কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন যা কাজ আছে তা কোনো শতাংশের মধ্যে পড়ে না। ফিনিশিং দিয়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ শেষ করে ফ্লাইওভারটি ঈদের আগে উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর ইচ্ছা অনুযায়ী ঈদের আগে ফ্লাইওভার উদ্বোধন করতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এখনো নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে, রাস্তাঘাটের কোনো উন্নতি নাই এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে সিটি করপোরেশনের কাজ চলছে। সবার কাজ শেষ হলে এলোমেলো অবস্থা আর থাকবে না। ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো এক কর্মকর্তা জানান, অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে ঈদের আগেই ফ্লাইওভার খুলে দেয়ার। আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঈদের আগে চালু করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে তিনি অনেকটা সন্দিহান। কারণ শান্তি নগর থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত কাজের উন্নতি হলেও আবুল হোটেলসহ রাজারবাগের দিকে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরে সবকটি লুপ চালু করার চিন্তা মাথায় আছে। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকদিন টানা বৃষ্টির কারণে ঢালাইয়ের কাজ শেষ করা যায়নি। শুধু তাই নয়, ঢালাই কাজের পর যে পরিমাণ আর্দ্রতা প্রয়োজন, রোদের প্রয়োজন তাও পাওয়া যায়নি। যে কারণে ফ্লাইওভারের কাজ বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেল।
এদিকে মৌচাক মালিবাগ শান্তিনগর রাজারবাগ এলাকায় চলাচলরত নগরবাসী, গাড়িচালক, ব্যবসায়ীরা নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভোগান্তির কারণে অনেকেই এই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বাসা নিয়েছেন। বিশেষ করে মৌচাক মালিবাগ শান্তিনগর এলাকার ব্যবসায়ীদের বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা মন্দা চলছে। বছরের পর বছর ধরে ব্যবসায়ীরা তেমন কোন আয় রোজগার ছাড়া দিন পার করছেন। এখানকার ফরচুন, মৌচাক, আনারকলি, সেন্টার পয়েন্টসহ আশেপাশের সবকটি মার্কেটের ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙ্গে ভেঙ্গে দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন ভাতা ও পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন। ফরচুন মার্কেটের কসমেটিক ব্যবসায়ী জাভেদ রায়হান জানান, রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। গর্ত, খনাখন্দ, কাঁদা পানিতে ভর্তি। এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে ভয় পায়। ঈদ সামনে আসন্ন। অন্য বছর এই সময়গুলোতে দম ফেলার সময় পাওয়া যায়নি। আর এই কয়েক বছর ধরে ক্রেতাশূন্য সময় পার করতে হচ্ছে। গিফটলেটের বিক্রয়কর্মী জাহিদ হাসান জানান, তাদের ক্রেতারা এখন অন্যত্র গিয়ে কেনাকাটা করছেন। গত তিন দিন ধরে এক টাকার বিক্রি করতে পারেননি। যেসকল ক্রেতা দোকানে আসেন তারা এসেই অভিযোগ করেন রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। তিন আরো জানান, মাসের পর মাস বিক্রি কম থাকার কারণে মার্কেটের মালিকরা দোকানের ভাড়া কমিয়ে নিচ্ছেন। রিকশাচালক হাদিস মিয়া জানান, সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার রিকশার বেয়ারিং ভাঙ্গে। মালিবাগ মোড়ের কাপড়ের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, আগে যেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করতেন সেখানে এখন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি করা কঠিন। নভেল মিয়া নামের এক চাকরিজীবী বলেন, এখানো অনেক কাজ বাকি। কি করে তারা ঈদের আগে ফ্লাইওভার চালু করবেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=80330