২৫ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৪১

পেঁয়াজ, রসুনের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই

রাজধানীতে কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তিন সপ্তাহ আগে পাইকারিতে এই পেঁয়াজই ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। কিন্তু এখন পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কমছে না। ফলে দাম কমার সুফল পাচ্ছে না মানুষ।
একই অবস্থা আমদানি করা পেঁয়াজ, দেশি এবং আমদানি করা রসুন ও আদার ক্ষেত্রেও। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলে চাহিদা কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম কমেছে। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেশি।

শ্যামবাজারে গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ছিল ৩৪-৩৫ টাকা। তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬-৪৭ টাকা। খুচরা বাজার মিরপুরের কাজীপাড়া বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৬০-৬৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে চীনা আদা কেজিপ্রতি ১১০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, তা কমে এখন ৮০-৯০ টাকায় নেমেছে। ভারতীয় আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা ও মিয়ানমারের আদা ৪০-৪২ টাকা। খুচরা বাজারে এই আদার দাম ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। শ্যামবাজারের ৫০-৬০ টাকা কেজির দেশি রসুন খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং ৮০ টাকা কেজির চীনা রসুনের দাম ১৩০ টাকা পর্যন্ত চাইছেন বিক্রেতারা।

শ্যামবাজারকেন্দ্রিক বড় আমদানিকারক মো. মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম অনেক কমে গেছে। আমদানি করে ব্যবসায়ীরা বিপুল লোকসান দিচ্ছেন। কিন্তু খুচরা বাজারে দাম না কমলে আমাদের কী করার আছে।’
পাইকারি বাজারে সাম্প্রতিক দাম কমে যাওয়ার সুফল পাওয়া যায় কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের মতো বড় বাজারে। এসব বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় ও পণ্যের সরবরাহ থাকায় দাম দ্রুত কমে।
কারওয়ান বাজারে একসঙ্গে ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনলে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া দেশি রসুন কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, চীনা রসুন ৮০ টাকা এবং ভারতীয় ও চীনা আদা ৮০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের আড়তের বিক্রেতা ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,
‘আমাদের কাছ থেকে এক বস্তা রসুন কিনে তা বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেন। আমরা এখন কেজিতে ১ টাকাও মুনাফা করতে পারছি না।’
রিকশাভ্যানে করে পণ্য বিক্রি করা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও খুচরা দোকানের চেয়ে কম দামে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রি করছেন। গতকাল শেরেবাংলা নগর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা করে চাইছিলেন। প্রতি কেজি ভারতীয় আদার দাম চাওয়া হয় ৮০ টাকা।
ওই বিক্রেতার কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনছিলেন স্থানীয় সরকারি কলোনির বাসিন্দা মো. আলম শিকদার। তিনি বলেন, বাজারে গেলেই দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি দিতে হয়। তাই তিনি পেঁয়াজ-রসুন সাধারণত রিকশাভ্যান থেকেই কেনেন।
পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দামে এত পার্থক্য কেন, জানতে চাইলে মহাখালীর টিভি গেট এলাকার খুচরা বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, ‘আমরা ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম হিসেবে পণ্য বিক্রি করি। এতে ঘাটতি হয়। ২০ কেজি কিনলে আমরা ১৮ কেজি ধরে দাম ঠিক করি। এর ফলেই পার্থক্য বেশি হয়।’
শুধু মসলাজাতীয় পণ্য নয়, অন্যান্য পণ্যের দামও বড় বাজারে কম। কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকানে এক কেজি চিনি ৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ছোট বাজার বা মহল্লার দোকানে তা কমপক্ষে ৬০ টাকা।
এদিকে গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১৩০-১৩৫ টাকা ও ডিমের ডজনপ্রতি দাম ১০ টাকা কমে ৯৫ টাকায় নেমেছে। সবজি ও মাছের দাম আগের মতোই আছে। অবশ্য শুক্রবার বাজারে পণ্যের দাম অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1301641