২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:২৯

স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোতে কাজ না করেই ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোতে কাজ না করেই ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন পরিচালক। দায়িত্ব পালনের ৮৩ দিনেই পরিচালক এ ধরনের অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার ছাড়াই পরিচালক ৬০ লাখ টাকা খরচ করে গেছেন। অর্থ জোগানদারেরা এ খরচের বিরুদ্ধে অডিটে আপত্তি তুলে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক ভারপ্রাপ্ত লাইন ডিরেক্টর মো: নাসির উদ্দিন বিনা টেন্ডারে এ টাকা খরচ করেছেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। জানা গেছে, তাকে সহযোগিতা করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির-এইচপিএনএসডিপির বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট নিরীক্ষা অধিদফতর (ফাপাড) কোটেশনের মাধ্যমে এভাবে টাকা তুলে নেয়ায় এটাকে অনিয়ম হিসেবে দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে ফাপাড এ অভিযোগের জবাব চেয়েছে তৎকালীন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত লাইন ডিরেক্টর মো: নাছির উদ্দিনের কাছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো বছরে রাজস্ব থেকে ১০ লাখ ও উন্নয়ন বাজেট থেকে ২০ লাখ মোট ৩০ লাখ টাকা খরচ করতে পারে।

ফাপাডের নিরীক্ষা থেকে জানা গেছে, ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা উন্মুক্ত টেন্ডার না করিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নাছির উদ্দিন ও সিন্ডিকেট মিলে কোনো কাজ না করেই এই বিল উত্তোলন করে নেন। মাত্র ২ মাস ২৩ দিন ভারপ্রাপ্ত লাইন ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মো: নাছির উদ্দিন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে মো: নাসির উদ্দিন ওপেন টেন্ডার না করে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানটিকে।
ফাপাডের আপত্তিপত্রে দেখা যায়, বিল নং-১ এর মাধ্যমে (১২/০১/২০১৪) স্বাস্থ্যবার্তা সংবলিত ডায়েরি ডিজাইন, প্রিন্টিং ও বাঁধাই বাবদ চার লাখ ৯৬ হাজার টাকা, বিল নং-২ এর মাধ্যমে (১২/০১/২০১৪) স্বাস্থ্যবার্তা সংবলিত ক্যালেন্ডার ডিজাইন, প্রিন্টিং ও বাঁধাই বাবদ চার লাখ ৯৪ হাজার, বিল নং-২৩১ (২৩/০২/২০১৪) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের চিত্রসহ প্রদর্শনী বিলবোর্ড বাবদ চার লাখ ৮৭ হাজার, বিল নং-১ এর মাধ্যমে (১২/০৩/২০১৪) ডিজিটাল ক্যামেরা বাবদ চার লাখ ৬০ হাজার, বিল নং-২৪৩ এর মাধ্যমে (১৩/০৩/২০১৪) টিভি স্পট, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্বাস্থ্যবার্তা সংবলিত ডকুমেন্টারি বাবদ চার লাখ ৮৯ হাজার, বিল নং-২৪৪ এর মাধ্যমে (১৩/০৩/২০১৪) টিভি স্পট, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্বাস্থ্যবার্তা সংবলিত ডকুমেন্টারি বাবদ চার লাখ ৮৪ হাজার, বিল নং-২৪৫ এর মাধ্যমে (১৩/০৩/২০১৪) টিভি স্পট, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্বাস্থ্যবার্তা সংবলিত ডকুমেন্টারি বাবদ চার লাখ ৯৪ হাজার, বিল নং-১ এর মাধ্যমে (১২/০১/২০১৪) ট্রেইনিং ম্যাটেরিয়াল বাবদ চার লাখ ৯৪ হাজার ৩২০ টাকা, বিল নং-২০ এর মাধ্যমে (১৭/০২/২০১৪) ট্রেইনিং ম্যাটেরিয়াল বাবদ চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৮৫ টাকা, বিল নং-১ এর মাধ্যমে (১৭/০২/২০১৪) পিএবিএক্স স্থাপন বাবদ তিন লাখ ৬২ হাজার ৭১০ টাকা, বিল নং-২২৭ এর মাধ্যমে (০৫/০২/২০১৪) শীতকালীন স্বাস্থ্যবার্তা প্রচার চার লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিল নং-১ এর মাধ্যমে (১২/০৩/২০১৪) আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা বিল হিসেবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

মো: নাসির উদ্দিন অবশ্য এখন আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোতে নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পুরোটাই তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী কোনো কোটেশন ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারে নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। তিনি জানান, তিনি যে কাজ করেছেন তা তৎকালীন মহাপরিচালকের অনুমোদন ছিল। ফাপাড যে জবাব চেয়েছে তিনি তার জবাব ৯ অক্টোবর জমা দিয়েছি, এ অভিযোগগুলো গতানুগতিক। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো বছরে ২০ কোটি টাকার কাজ করে কিন্তু ফাপাড তারা আপত্তি জানিয়েছে মাত্র ৬০ লাখ টাকার। এতে প্রমাণ হয় অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যমূলক করা হয়েছে।
অবশ্য পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আনোয়ারুল ইসলাম খান এবং গণ উন্নয়ন সংস্থার আব্দুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে। এ দু’জনের বিরুদ্ধে কাজ না করে ২৮ লাখ টাকা নেয়ায় চার্জশিট দিয়েছে দুদক।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246621