মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে যানজট এখন নিত্যদিনের
২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:২৯

ফ্লাইওভারের টোলের টাকা যোগাতে যানজট

# রাস্তা দখল করে এলোপাতাড়ি রাখা হয় লোকাল বাস
# ১০ মিনিটের রাস্তা যাতায়াতে সময় লেগে যায় দেড় ঘন্টা
টোলের টাকা যোগাতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার (যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার) প্রবেশ পথে প্রতিদিন যানজট সৃষ্টি করছে লোকাল বাস সার্ভিস। ফ্লাইওভার পার হতে প্রতিটি মিনিবাসকে টোল পরিশোধ করতে হয় ১৭৩ টাকা। এ টাকা যোগাতে ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথে লোকাল বাসগুলো প্রতিদিন দীর্ঘ সময় দখলে রাখে। এ কারণে প্রতিদিনই দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। স্বল্প সময়ে ফ্লাইওভার পার হলেও প্রবেশ পথে যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না মানুষ। অনেক সময় এক থেকে দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স থেকে শুরু করে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রবেশ পথ পর্যন্ত সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিনই তীব্র যানজট থাকে। অপর দিকে রায়ের বাগ থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথে প্রতিদিনই যানজট দেখা যায়।

অনুসন্ধানের দেখা গেছে, ফ্লাইওভাবরের প্রবেশ পথে লোকাল বাস সার্ভিস গুলো এলাপাথারী রাখা হয়। অনেক সময় যাত্রী নেয়ার জন্য থাকে প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া যাত্রীর অপেক্ষায়ও দীর্ঘ সময়ে বাস দাড় করে রাখা হয়। এর ফলে দেখা দেয় তীব্র যানজট। একটি মিনিবাস প্রায় ৮ থেকে ১০মিনিটে ফ্লাইওভার পার হতে পারলেও প্রবেশ পথে যানজটের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে বাড়ছে দুর্ভোগ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানীর ৫ হাজার ৪০৭টি যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে থাকে। এর মধ্যে মিনিবাস ৩ হাজার ১২৬টি এবং বড় বাস ২২৮১টি। ১৬৮টি রুটে এসব বাস যাতায়াত করে থাকে।

সূত্র জানায়, টাউন সার্ভিসের ১৬৮টি রুটের মধ্যে প্রায় ২০টি রুটের মিনিবাস প্রতিদিন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পারপার হয়ে থাকে । এসব রুটের মধ্যে অন্যতম হলো গুলিস্তান টু রায়ের বাগ, গুলিস্তান টু সাইনবোর্ড, গুলিস্তান টু শনি আখড়া, গুলিস্তান টু চিটাগায় রোড, গুলিস্তান টু কাঁচপুর, মদনগঞ্জ, আদমজী. তারাবো, ডেমরা. সারুলিয়া, গুলিস্তান টু জুরাইন পোস্তগোলা , দোলেশ্বর . ঢাকা ম্যাচ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. লোকাল মিনিবাসে সিট থাকে ৩৫/৪০টি। সির্টিং করা হলে অবস্থা ভেদে ভাড়া আদায় হয় ১০০/১৫০ টাকা। কিন্তু ফ্লাইওভারের টোলই দিতে হয় ১৭৩ টাকা। আর টোলের টাকা আদায়সহ একটি সিটি বাসকে প্রতি ট্রিপে পর্যাপ্ত যাত্রী বহন করতে হয়। এর ফলে যাত্রী উঠাতে বাসগুলোকে দীর্ঘ সময়ে অবস্থান করে ফ্লাইওভারের প্রবেশে পথে। এ জন্য প্রতিদিনই দেখা দেয় তীব্র যানজট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী থেকে শহরতলী এলাকা গুলোতে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক বাস যাতায়াত করে। এর মধ্যে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা চিটাগাং রোড সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা সাভার বেশী বাস যাতায়াত করে থাকে
গুলিস্তান টু মদনগঞ্জ লোকাল সার্ভিস শ্রাবন পরিবহনের হেলপার আজমত আলী জানান, প্রতিট্রিপে যাত্রী কম থাকে। অনেক সময় টোলের টাকা উঠানো কষ্ট হয়ে যায়। এজন্য ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথে আমরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করি।
আপনাদের কারণে যানজট হচ্ছে এটা দেখছেন না এমন প্রশ্নে আজমত জানান, আমারা আর কত লস দিয়ে গাড়ি চালাবো। মালিকের এক কথা প্রতিদিন তার জমার (দৈনিক আদায়) দিতেই হবে । কোন কিছুই মানতে নারাজ।
যাত্রাবাড়ি এলাকায় আজমতের সাথে কথা বলার সময় তার শ্রাবন পরিবহনের পেছনে প্রায় ১৫টি লোকাল বাস রাস্তায় দাড়িয়ে যাত্রী ডাকাডাকি করছিল।

চিটাগায় রোডে যাতায়াতকারী লোকাল সার্ভিস আশিয়ান পরিবহনের চালক রহিম শেখ জানান, ফ্লাইওভারে প্রবেশ করলেই ১৭৩টাকা দিতে হয় । যাত্রী কম থাকে প্রায় সময়ে তাই আমাদের প্রতিট্রিপে লোকসান দিতে হয়। রাস্তায় না দাড়িয়ে উপায় কি বলেন ? পাল্টা প্রশ্ন তার।
গুলিস্তান থেকে নারায়নগঞ্জগামী উৎসব পরিবহনের যাত্রী কামরজ্জামান রুবেল জানান, ফ্লাইওভারের প্রবেশে পথে প্রতিদিনই যানজট থাকে। এতে আমাদের দুর্ভোগ বেশী হয়। নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা আসতে ৪০/৪৫ মিনিট লাগার কথা থাকলেও ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথে যানজটের কারণে আমাদের অনেক সময় দেড় থেকে দুইঘন্টা লেগে যায়। লোকাল বাস রাস্তায় এলোপাতারী রাখার কারণে যানজট হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

http://www.dailysangram.com/post/297243