২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:২৫

সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের ৮৯ ভাগই আদায় অযোগ্য

ঋণ নবায়ন ও পুনর্গঠনের নামে খেলাপি ঋণ কমানোর পরও মন্দ ঋণের কবল থেকে বের হতে পারছে না দেশের ব্যাংকিং খাত। খেলাপি ঋণের ৮৩ শতাংশই আদায় অযোগ্য অর্থাৎ কুঋণে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থানে সরকারি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে ছয় সরকারি ব্যাংকের খেলাপির ৮৯ শতাংশই আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় আবারো বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে কয়েক দফা জনগণের অর্থে বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি পূরণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণই বেড়ে হয়েছে ৬১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। মন্দ ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের বেশি হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। ফলে ব্যাংকের নিট আয় কমে যায়। অন্য দিকে মন্দ ঋণের বিপরীতে যে সুদ অর্জিত হয় ওই সুদ আয় খাতে নিতে পারে না ব্যাংকগুলো। এতে এক দিকে মুুনাফা থেকে মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়, পাশাপাশি সুদ আয় হিসাবে নিতে না পারায় ব্যাংকের আয় সঙ্কুুচিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণই ১০ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। ব্যাংকটির আলোচ্য সময়ে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আয় দিয়ে পুরো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। যেমন, জুন শেষে সাত হাজার ৫০ কোটি টাকার প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছে চার হাজার ২৪১ কোটি টাকা। এতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণই প্রায় সাড়ে ৮৮ শতাংশ বা চার হাজার ২০১ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের সাড়ে ৮৪ শতাংশ খেলাপি ঋণই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। জুন শেষে চার হাজার ৯০৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের চার হাজার ১৩০ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ।
বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের প্রায় শতভাগই খেলাপি ঋণের মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংকটির সাত হাজার ৩৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে সাত হাজার ৮৬ কোটি টাকাই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে, যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৯৬ শতাংশ। ব্যাংকটির এ সময়ে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৮০ কোটি টাকা।
আরেক সমস্যাকবলিত ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। ব্যাংকটির ৭৬৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ছয় হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণের কিস্তি পরপর তিন মাস আদায় না হলে ওই ঋণকে নি¤œমানের ঋণ বলা হয়। আবার কোনো ঋণ পরপর ছয় মাস আদায় না হলে তা সন্দেহজনক ঋণ বলা হয়। সন্দেহজনক ঋণ হলেই গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আবার ওই ঋণ ৯ মাস অতিক্রান্ত হলে তা মন্দ ঋণ বলা হয়। এ মন্দ ঋণ হলেই টাকা আদায়ের জন্য মামলাসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ে। কারণ দীর্ঘ দিন মামলার ঘানি টানতে হয়। ব্যাংকও মামলা পরিচালনা করতে অর্থ ব্যয় করে। এভাবে কোনো ঋণ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে ওই ঋণ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করে রাখে ব্যাংক, যা ব্যাংকের ভাষায় ঋণ অবলোপন বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব ঋণ আদায় হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম বেড়ে গেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে অর্থ ব্যয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণ, লোকবল নিয়োগ করে ব্যাংকের ব্যয় বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে আদায় অযোগ্য ঋণ আরো বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির হার আরো বেড়ে গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246612