২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:০৬

বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন ৩ কোটি মানুষ

* মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১৩২
স্টাফ রিপোর্টার : চলমান বন্যায় দুই সপ্তাহে দেশের ৩২ জেলার প্রায় ৩ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।
এতদিন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সরবরাহ করলেও এবারই প্রথম দুই দফতর বন্যার ক্ষতি নিয়ে একই রকম তথ্য দিল। এর আগে অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যের মধ্যে গরমিলের কারণে সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ও অধিদফরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একরকম তথ্য সরবরাহের সরকারি নির্দেশনা আসে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) উপ সচিব জি এম আব্দুল কাদের জানান, বন্যায় ৩২ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরসহ ২০ জেলায় মৃত্যু হয়েছে রেকর্ড ১৩২ জনের। এত মৃত্যু ১৯৮৮ ও ’৯৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায়ও হয়নি বলে ইতিপূর্বে সরকারিভাবেই স্বীকার করা হয়েছে।
অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে অধিদফতর জানায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলায় ২০১টি উপজেলা ও ৫১টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৯ জন এ বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। আরও ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ৭৫ হাজার ৩৩১টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে ও সাপে কাটা সহ বিভিন্ন কারনে গত দুই সপ্তাহে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৩২-তে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে সর্বাধিক ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ২৩ জন, লালমনিরহাটে ৬ , সুনামগঞ্জে ২, নেত্রকোণায় ৪, নীলফামারীতে ৬, গাইবান্ধায় ১৩, সিরাজগঞ্জে ৬, জামালপুরে ১৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ১, নওগাঁয় ৫, বগুড়ায় ৪, যশোরে ৩, টাঙ্গাইলে ২, শেরপুরে ৩, মৌলভীবাজারে ২, কুমিল্লায় ২, রংপুরে ৩, মানিকগঞ্জে ১ ও জয়পুরহাটে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে বানের পানিতে ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৬ লাখ ৫৮৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত জেলাগুলোতে অন্তত ৬২ হাজার ২০৮টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানিয়েছে, ৩২ জেলার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ, ২০ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
অধিদফতরের পরিচালক যুগ্মসচিব মো. আবু তালেব বুধবার বলেন, তথ্য সরবাহের সঠিকতা নিয়ে মন্ত্রণালয় খুব অসন্তুষ্ট। কয়েকদিন ধরে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের তথ্যের ভিন্নতা ছিল। এজন্যে সব কিছু যাচাই করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর মঙ্গলবার থেকে একই তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ে উপ সচিব জি এম আবদুল কাদের বলেন, জেলা প্রশাসক ও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও অধিদফতর সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেয়ায় জটিলতা তৈরি হয়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সচিবের নির্দেশনা এসেছে, কোনোভাবেই জেলা প্রশাসক ও ত্রাণ কর্মকর্তার বাইরে অন্য সূত্রের তথ্য নেয়া যাবে না। কিছুদিন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও আজ থেকে একই রকম তথ্য সরাবরাহ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে উত্তরের দুর্গত এলাকাগুলোর বানের পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আর খুব বেশি বাড়বে না বলেই মনে করছেন উপ সচিব।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে। পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি শুরু হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/297240