২৩ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১:২৯

ইউরোপে অবৈধভাবে থাকার সুযোগ আর থাকছে না


ইউরোপে অবৈধভাবে বসবাসের সুযোগ আর থাকছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চাপে বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নাগরিকত্ব যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ করতে সম্মত হয়েছে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) নিয়ে সমঝোতা শেষ করতে চলতি মাসেই ইইউর অভিবাসন ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসছে।

অবৈধদের ফিরিয়ে নেয়া না হলে বাংলাদেশের জন্য ভিসা ব্যবস্থাপনা কঠিন করে দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট। গত মাসে ব্রাসেলসে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশন সভায় খসড়া এসওপি নিয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসওপি চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। ধারাবাহিকভাবে সব সরকারই এ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে। তা না হলে বৈধ বাংলাদেশীদের অভিবাসনপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ফিরিয়ে আনার আগে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। এ প্রক্রিয়াটি ক্ষেত্রবিশেষ সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশী ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধভাবে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বা স্থায়ীভাবে থাকার রেসিডেন্সি পারমিট পেয়েছে। এ ছাড়া ভ্রমণ, শিক্ষাসহ অনেক উদ্দেশ্যে প্রচুর বাংলাদেশী বৈধ পথেই ইউরোপ যায়। তাই অবৈধদের ফিরিয়ে আনা না হলে বৈধরা সমস্যার মুখে পড়বে। এটা কারো কাম্য হতে পারে না।

কর্মকর্তা আরো বলেন, অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে ইইউ নানা ধরনের সহায়তার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার খরচ বহন, স্থানীয় আর্থসামাজিক পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত হতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের পর বৈধভাবে আবারো ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ দেয়া।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাব মতে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেসব মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপে অভিবাসন প্রচেষ্টা চালায়, তার মধ্যে বাংলাদেশীদের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশীরা লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে ৮ থেকে ৯ হাজার ডলার খরচ করে। এর পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছাতে খরচ করে আরো ৭০০ ডলার। ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সাথে অনেক বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে আটক বা মানবপাচারকারীদের কাছে জিম্মি রয়েছে অনেকে। ইতালি অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় অনেকেই এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। কেউ ইতালি পৌঁছে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিবন্ধন করলে সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট পায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং একই সাথে দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা সব দিক থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এখন অবৈধ অভিবাসীরা ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে অবৈধ বাংলাদেশীদের সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

সম্প্রতি স্পেন, ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামি চরমপন্থীদের হামলার পর অভিবাসন, বিশেষ করে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব প্রবল হয়ে উঠেছে। এ কারণে ইউরোপে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরাও ভীতির মধ্যে রয়েছে। তারা ঘৃণাজনিত ঘটনারও শিকার হচ্ছেন। সার্বিকভাবে ইউরোপীয় কমিশন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অবলম্বনের জন্য রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। আর এরই প্রেক্ষাপটে ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি ইইউর অগ্রাধিকারে চলে এসেছে। ইউরোপে মোট কতজন বাংলাদেশী অবৈধভাবে রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এ সংখ্যা প্রায় এক লাখ বলে ধারণা করা হয়। ব্রিটেন দাবি করে, তাদের দেশে ২০ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে অবস্থান করছে। অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নিতে ইইউর পাশাপাশি ব্রিটেন বাংলাদেশের ওপর দ্বিপক্ষীয়ভাবেও চাপ সৃষ্টি করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246319