২২ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩২

স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বিতরণের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল

স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বিতরণের নামে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ টাকা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে যাতে কোন ধরনের ক্ষোভ তৈরী না হয় সেজন্য ধাপে ধাপে এ টাকা আদায় করা হবে। এতে করে মাত্র ৫ থেকে ৭ শত টাকা দামের বিদ্যুতের মিটার একজন গ্রাহককে কিনতে হবে প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে। অবস্থাভেদে এর দাম পড়বে সাড়ে ২২ হাজার টাকা। বিদ্যুতের মিটার বিতরণের পর প্রতি মাসের বিলের সাথে বাড়তি টাকা নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, সারা দেশে বিতরণে জন্য ৪৫ লাখ ১৩ হাজার স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী পাঁচ সংস্থা। এর মধ্যে ১-ফেজ মিটার রয়েছে ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৩০০টি ও ৩-ফেজ মিটার এক লাখ ৬০ হাজার ৭০০। এগুলোর একেকটির দাম একেক রকমের। আর এগুলোর বোঝা চাপবে গ্রাহকদের ওপর। কারণ মাসিক বিলের সঙ্গে গ্রাহকদের হিসাব থেকে নির্দিষ্ট হারে মিটারের দামও কাটা হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) গ্রাহকদের বিতরণের জন্য এক লাখ ৭৫ হাজার ১-ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনছে। এতে প্রতিটি দাম পড়ছে তিন হাজার ৩০০ টাকা। একই ধরনের এক লাখ ৮০ হাজার প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। সংস্থাটির মিটারের দাম পড়ছে পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়া প্রায় ৩৮ হাজার ৩ ফেজের মিটার কিনছে ডিপিডিসি। এতে মিটারপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭২০ টাকা। আর ২০ হাজার ৩-ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনবে ডেসকো। এতে মিটারপ্রতি দাম পড়ছে ২০ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুই লাখ ১৩ হাজার স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কেনার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে ডিপিডিসি। রাজধানীর সাতটি অঞ্চলে এসব মিটার সরবরাহ করা হবে। মিটারগুলো কেনায় ব্যয় হবে প্রায় ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৫ কেটি ৬৭ লাখ টাকা ডিপিডিসির নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করবে। বাকি প্রায় ৩২১ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে চাওয়া হয়েছে।পরবর্তীতে গ্রাহক থেকে এসব টাকা আদায় করে সরকারী দেনা পরিশোধ করা হবে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেয়ান দাবী করেছেন, অগ্রিম রাজস্ব আদায় ও গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধিতে ডিপিডিসির বিভিন্ন জোনে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার দেয়া হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে রমনা, জিগাতলা, ধানমন্ডি, আদাবর, পরীবাগ, কাকরাইল ও বনশ্রীর গ্রাহকদের জন্য দুই লাখ ১৩ হাজার স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট কেনা হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। এগুলো কেনার ক্ষেত্রে গুণগত মানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিতরণের জন্য ৩১ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এর মধ্যে ১-ফেজ মিটার রয়েছে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ও ৩-ফেজ মিটার ৫০ হাজার। ১-ফেজ মিটারের প্রতিটির দাম পড়ছে চার হাজার ৫৫০ টাকা। আর ৩-ফেজ মিটার কেনায় দাম ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৫০০ টাকা।
এর বাইরে পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনবে দেশের উত্তরা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্থ-ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (নওজোপাডিকো)। এর মধ্যে ওজোপাডিকো চার লাখ ৮৬ হাজার ১-ফেজ ও ১৪ হাজার ৩-ফেজ মিটার কিনবে। আর চার লাখ ৬১ হাজার ৩০০টি ১-ফেজ ও ৩৮ হাজার ৭০০টি ৩-ফেজ মিটার কিনবে নওজোপাডিকো। এক্ষেত্রে দুই কোম্পানিরই ১-ফেজ মিটারপ্রতি দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। তবে প্রতিটি ৩-ফেজ মিটার কেনায় ওজোপাডিকো ব্যয় করছে ১২ হাজার ৭৩০ ও নওজোপাডিকো ১২ হাজার ৭০০ টাকা।
সূত্রমতে, সাধারণ বৈদ্যুতিক মিটারের দাম ৫০০-৭০০ টাকা। তবে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের উচ্চমূল্যের কারণে এটি কেনার প্রতি গ্রাহকদের অনীহা তৈরি করেছে। এজন্য মাসিক কিস্তিতে এসব মিটার দেয়া হবে। গত মে মাসে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এতে বলা হয়, প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না। সিঙ্গেল ফেজ মিটারের মাসিক ভাড়া ৪০ টাকা ও থ্রি ফেজ মিটারের মাসিক ভাড়া ২৫০ টাকা হিসেবে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে আদায় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সিঙ্গেল ফেজ মিটার গ্রাহকদের মাসের শুরুতে ন্যূনতম ২০০ ও থ্রি ফেজ মিটার গ্রাহকদের ন্যূনতম এক হাজার টাকা রিচার্জ করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন দামে কেনা হলেও এসব মিটারের দাম চাপবে গ্রাহকের ওপর।
এদিকে মিটারের মূল্যের পাশাপাশি মাসের শুরুতে বিদ্যুতের ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাটও কাটা হবে। তবে কোনো গ্রাহক বাজার থেকে প্রি-পেইড মিটার ক্রয় করলে তার হিসাব থেকে কোনো অর্থ কাটা হবে না। এক্ষেত্রে মিটারটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কোম্পানির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হতে হবে।

 

 

http://www.dailysangram.com/post/296976-