২২ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৬

ঈদে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা থেকে যে ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ ছেড়ে যাবে তন্মধ্যে বেশকিছু রুটের ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ঢাকা-দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাটসহ বেশ কয়েকটি রুট অন্যতম। যার কারণে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট কাটার পর থেকেই যাত্রার দিন চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বেনÑ এমন শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
এ দিকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুংলী রেলসেতুর মেরামত কাজসম্পন্ন হওয়ায় ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩৯ ঘণ্টা পর পুনরায় ট্রেন চলাচল চালু হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেলা ৩টা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোফাজ্জল হোসেন। এবারের ঈদে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে যদি বৃষ্টি আবারো হয় সেই ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলে সমস্যা হতে পারে বলে তিনিও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (পাকশী) অসীম কুমার তালুকদার গতকাল সাংবাদিকদের জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা রংপুর এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল। সরঞ্জামবাহী ট্রেনটি পৌঁছার পর সেটি ঢাকার পথে ছেড়ে আসে এবং বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে পুংলী সেতু অতিক্রম করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেন বলেন, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন থেকে সকালে কয়েকটি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছিল। সেগুলো পর্যায়ক্রমে এলেঙ্গার ওই সেতু অতিক্রম করবে। সেতু মেরামত শেষ হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে রাজশাহীর সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
বন্যার পানির তীব্র স্রোতে এলেঙ্গা পৌরসভার পুংলী রেলসেতুর দক্ষিণ অংশের অ্যাপ্রোচ রোডের ২০ ফুটের মতো জায়গা থেকে মাটি সরে গেলে গত রোববার সকাল থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পাওয়ার পরই রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছানোর পর শুরু হয় মেরামতের কাজ।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, ঢাকা থেকে গার্ডার পৌঁছানোর পর সোমবার সকালে তারা মেরামতের মূল কাজ শুরু করেন। মাটি সরার পাশাপাশি লাইনটা একটু বেঁকে গিয়েছিল, স্লিপারগুলোও পানিতে পড়ে গিয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই আমরা দিন-রাত কাজ করেছি। ধসের জায়গায় মাটি ফেলে তারপর গার্ডার বসানো হয়েছে। রমজান আলী বলেন, বন্যার পানির স্রোতে মাটি সরে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা যায়, লাইন বন্ধ থাকায় গত রোববার ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। সেই সাথে ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসের দুই দিনের যাত্রাও বাতিল করা হয়। দুপুরের আগে সেতু মেরামত শেষ না হওয়ায় গতকাল সোমবারও ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হয় বলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর এবং দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় রুটে সব ধরনের রেলযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরের কাউগা রেলস্টেশন ও বিরল অংশে রেললাইনের স্লিপার থেকে মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, রোববার টাঙ্গাইলে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটার জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। যাক আল্লাহর রহমত ছিল। আজ (সোমবার) মেরামত সম্পন্ন হওয়ায় বেলা ৩টা থেকে লাইন চালু করতে পেরেছি। তিনি বলেন, দিনাজপুর এলাকাটি আমরা ঘুরে এলাম। পার্বতীপুর পর্যন্ত আমাদের যোগাযোগ ছিল। পার্বতীপুর স্টেশন আমরা কখনো বন্ধ করিনি। পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর এবং দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় এই স্টেশনগুলো বন্ধ ছিল। ওখানে আমরা গত শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেছি। ২৭ তারিখের আগেই পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর স্টেশনটা আমরা চালু করতে পারব বলে আশা করছি। যদিও ওখানে ৪০-৪২টি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনাজপুরের পরের রুট আর ঈদের আগে চালু করা যাবে না। ওখানে অনেক বড় বড় ডিজাস্টার হয়েছে। সেখানকার পানি না সরলে কাজও করা যাবে না, স্টেশনও চালু করা যাবে না। তাই আমাদের আপাতত টার্গেট দিনাজপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ২৭ তারিখের মধ্যে চালু করা। আর ওই গ্যাপটুকু অর্থাৎ দিনাজপুর থেকে নর্থে, ওই অংশটুকু ছাড়া সার্বিকভাবে দেশের রেলযোগাযোগব্যবস্থা ভালো। ঈদে এবার ট্রেনযাত্রা নির্বিঘœ করা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ সচিব নয়া দিগন্তকে জানান, আল্লাহ আল্লাহ করেন যদি বৃষ্টি না হয়। তাহলে খুব ভালোই থাকবে সবকিছু আর বৃষ্টি হলে সমস্যা হতে পারে।
৩০ তারিখের অগ্রীম টিকিট পাওয়া দিনাজপুরগামী যাত্রী তাসনিম বলেন, এখনো শঙ্কায় আছি রেললাইন পুরোপুরি সচল হবে কি না। নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারব কি না এ নিয়ে এখনো ভয়ে আছি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246116