২২ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:৩৭

ইসলামবিরোধী প্রতিক্রিয়ায় আতঙ্কে মুসলিমরা

নামাজের সময় ঘনিয়ে এলেও বার্সেলোনার প্রাণকেন্দ্র রাভালের ছোট মসজিদটির ইমাম রাজা মিয়া খুব বেশি মুসল্লির উপস্থিতি আশা করছেন না।

বার্সেলোনা ও নিকটবর্তী ক্যামব্রিলসের সমুদ্র সৈকত রিসোর্টে জোড়া হামলার কারণে সেন্ট্রাল বার্সেলোনার প্রতিবেশি রাভালের মুসলমান সম্প্রদায় তীব্র ইসলাম বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ২৩ বছর বয়সী রাজা মিয়া বলেন, ‘ওই ঘটনা পর থেকে লোকজন ভীত হয়ে পড়েছে।’ জঙ্গি সংগঠন আইএস ওই জোড়া হামলা দায় স্বীকার করেছে।
তিনি রাভাল মসজিদের ছোট একটি কক্ষে বসে ছিলেন। তার পাশেই আরেকটি কক্ষে ছোট ছোট শিশুরা পবিত্র কোরআন পাঠ করছিলেন।
বৃহস্পতিবার এই শহরেই ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করা হয় এবং আহত হয় বেশ কয়েকজন। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ক্যামব্রিলসে একই ধরনের হামলায় আরো একজন নিহত হয়। পুলিশের গুলীতে সন্দেহভাজন পাঁচজন নিহত হয়।
রাজা মিয়া নয় বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বার্সেলোনায় আসেন। তিনি জানান, ‘আমাদের সবার মধ্যে এতটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে যে অনেকেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। অনেক কম মানুষ নামাজ পড়তে আসছেন। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ জন নামাজ পড়তে আসেন, সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন এখন নামাজ পড়তে আসছেন।'
ইউরোপের অন্যান্য অংশের মতো স্পেনে ততটা ইসলাম ভীতি ছিল না। ডানপন্থীদের তৎপরতা দেশটিতে খুব কমই দেখা যায়। সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, স্পেনের মাত্র চার শতাংশ মানুষ অভিবাসীদের ‘সমস্যা' হিসেবে মনে করে।
তবে এটা ঠিক যে সাম্প্রতিককালে ইউরোপ জুড়ে যে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করেছে ইসলামি জঙ্গি দল বা আইএস। এরপর থেকে বিদেশীদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের ঘটনা বেড়েছে। এই জোড়া হামলার পর পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে বলে মুসলমানরা ভয় করছে। রাভালের সংকীর্ণ ও ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে শনিবার সকাল থেকেই নিরবতা বিরাজ করছে।
ঘনবসতিপূর্ণ জনবহুল অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মরক্কো থেকে আগত অভিবাসী।
রাজা মিয়া বলেন, ‘স্প্যানিসরা আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে। তারা আমাদের সাহায্য করে, এমনকি তারা আমাদের অনুভূতিগুলোও বুঝতে পারে।’ কিন্তু বার্সেলোনার ওই আক্রমণের মাত্র কয়েক মিনিট পর কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন। হামলার সময় তিনি রামবালাস এলাকায় পালিয়ে গেলে পুলিশ তাকে থামিয়ে দেয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক। তারা আমার মুখে দাড়ি এবং গায়ে পাঞ্জাবি দেখেছিল এবং একারণে তারা আমাকে থামিয়ে দিয়েছে।’
রাভালের পিছনের রাস্তায় ছোট একটি দোকান মালিক ইসলাম জাহিদ (২২) বলেন, ‘ফ্রান্স, ব্রিটেন বা অন্যান্য স্থানে যেমনটি ঘটছে, তেমনটিও এখানে হতে পারে বলে আমরা ভয় পাচ্ছি।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব স্থানে ডানপন্থীরা দৃঢ়ভাবে বেড়ে উঠেছে।
ওই জোড়া হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য বার্সেলোনার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় শতাধিক সদস্য শনিবার লাস রাম্বালাসে জড়ো হন। তাদের অনেককে চোখের জল ফেলতে দেখা গেছে।
ইসলাম জাহিদ আরো বলেন, ‘হামলাকারীরা মুসলমান নয়। তারা সন্ত্রাসী এবং ইসলাম হচ্ছে শান্তির।’
৩৯ বছর বয়সী মরোক্কোর নির্মাণকর্মী মারজুক রাজ তার মেয়েকে নিয়ে বিক্ষোভের জন্য গিয়েছিলেন। তিনি জানান, এই রক্তপাত তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিজের দেশের চেয়েও এখানে বেশি দিন ধরে বসবাস করছি। আমার সন্তানরা এখানে স্কুলে যায় এবং কিছু কুলাঙ্গারের কারণে লোকজন আমার সন্তানদের নেগেটিভভাবে দেখুক তা আমি চাই না।’

 

http://www.dailysangram.com/post/296989-